আব্দুর রাজ্জাক রুপান্তর বাংলা— রাঙ্গামাটি ২৯৯ নম্বর আসনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য দীপংকর তালুকদারের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ছাড়াও এবার দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা। রাজনৈতিক জীবনের প্রায় ৩২ বছরে এসে প্রথম দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন দীপংকর তালুকদার। এর আগে, টানা ছয়টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি আসন থেকে একক মনোনয়ন চেয়েছেন ও মনোনীত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপংকর তালুকদার। রবিবার (১৯ নভেম্বর) সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন দীপংকর তালুকদারের অনুসারীরা। একই দিন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন নিখিল কুমার চাকমার অনুসারীরাও। নিখিল কুমার চাকমা রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নিখিল কুমার চাকমা বলেন, রবিবার সকালে দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছি। আমি আশাবাদী সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটি আসনের দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। একই দিন সকালে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সদস্য দীপংকর তালুকদারের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর জানান, দলের পক্ষ থেকে আজ সকালে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দীপংকর তালুকদার মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি আরো বলেন, দীপংকর তালুকদার ছাড়া আমাদের কোনো ভাবনা নেই। পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলায় তার বিকল্প আমাদের কোন প্রার্থী নেই। তার নেতৃত্বে আমরা দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চাই এবং বিজয়ী হতে চাই। দীপংকর তালুকদারের বিকল্প যদি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অন্য কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয় তার জন্য কাজ করবেন কিনা এমন প্রশ্নে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এখনো সেই সময় আসেনি।
যখন আসবে তখন দেখা যাবে। উল্লেখ্য, পাহাড়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্রবীণ রাজনীতিবিদ দীপঙ্কর তালুকদার এমপি, যিনি ৯০’র দশক থেকে রাঙ্গামাটি ২৯৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে করে আসছেন। তিনি এখন পর্যন্ত রাঙ্গামাটি আসন থেকে ছয়টি নির্বাচনের মধ্যে চারটিতেই জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন। মাঝখানে ২০০১ সালে বিএনপির সংসদ সদস্য মণিস্বপন দেওয়ান এবং ২০১৪ সালে অনিবন্ধিত সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সতন্ত্র প্রার্থী ঊষাতন তালুকদার এর কাছে পরাজয় বরণ করেন।
বর্তমানে তিনি রাঙ্গামাটি ২৯৯ আসনের এমপি। পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এ সরকারের আমলে সংসদ সদস্য ছাড়াও তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
ছাত্রজীবনে তিনি সরাসরি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অন্যতম প্রতিবাদী ছাত্র নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর প্রতিবাদ করে তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এবারই প্রথম দীপংকর তালুকদার ছাড়াও রাঙ্গামাটি আসন থেকে অন্য কোনো প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। দীর্ঘ বছর ধরে রাঙ্গামাটি আওয়ামী লীগ ‘পরিবারে’ দীপংকর তালুকদারের একক ‘নিয়ন্ত্রণের’ কারণে কেউ প্রার্থী না হলেও এবারই প্রথম চ্যালেঞ্জর মুখে পড়েছেন তিনি।
রাঙ্গামাটি আওয়ামী লীগের পরোক্ষ গ্রুপিং থাকলেও সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে দলীয় সভাপতির পদ নিয়ে নিখিলের সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতার বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও সেই সম্মেলনে দীপংকর ফের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের ৩২ বছরে এসে দলীয় মনোনয়ন পত্র নিয়ে প্রথম চ্যালেঞ্জে পড়েছেন দীপংকর তালুকদার।
জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দীপংকর তালুকদার, নিখিল কুমার চাকমা ছাড়াও এবারের নির্বাচনে আরো বেশ কয়েকজন প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করতে পারেন।