ময়মনসিংহের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী দেশে আরো ৪০ লক্ষ মানুষকে ঘর করে দেয়া হবে

ময়মনসিংহ থেকে জিল্লুর রহমান ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের একটি মানুষও যেন ভূমিহীন না থাকে সে জন্য কাজ করছি। দেশে ৩৫ লক্ষ মানুষকে আমরা ঘর করে দিয়েছি। অচিরেই আরো ৪০ লক্ষ দরিদ্র মানুষকে ঘর করে দেয়া হবে। গৃহহীন বা ভূমিহীন মানুষ এখন একটা ঠিকানা পাচ্ছে- এর থেকে বড় কাজ আর কিছু হতে পারে না।
শনিবার (১১ মার্চ) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহের সার্কিট হাউস মাঠে আওয়ামীলীগের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যাতে খাদ্য খাটতি না হয় সেজন্য আমাদের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মোটকথা আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ আমরা কারো কাছে হাত পাততে চাই না, আর ভিক্ষা করতে চাই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজের আওতায় যত জমি আছে তাতে চাষ করেছি। আপনারাও নিজেদের জমির এক ইঞ্চিও খালি রাখবেন না। আমরা যদি উৎপাদন বাড়াতে পারি তাহলে আমরা সমস্যায় পড়বো না।
আমিষের উৎপাদন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আবাদি জমির পাশাপাশি আমাদের জলাভূমিকেও ব্যবহার করতে হবে। মাছের চাষের মাধ্যমে জলাভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
কৃষি ও কৃষকের জন্য বঙ্গবন্ধুর অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের সময় বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনি কীভাবে কী করবেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমার দেশের উর্বর মাটি ও মানুষ দিয়েই আমরা ঘুরে দাঁড়াবো।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের যুব সমাজকে উন্নয়নের অংশীদার হতে হবে। আমরা যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ও ঋণের ব্যবস্থা করেছি। যুবকরা এসব সুযোগ নেয়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কর্মস্থানের পাশাপাশি আরও মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারবেন।’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ময়মনসিংহে চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলা হয় আর তখন অনেক মানুষ মারা যায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওদের (বিএনপি) ক্ষমতায় থাকা মানেই দেশের মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন। আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন হয়। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ময়মনসিংহকে বিভাগ করে দিয়েছি। প্রতিটি বিভাগের মতো এ বিভাগে ময়মনসিংহে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে, একটি পৃথক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় করে দিব। আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক কিছু সম্ভব হয়নি।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেই উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে জিয়া ক্ষমতায় যায়। বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার মানেই হচ্ছে মানুষের ওপর অত্যাচার, মানুষকে শোষণ করা, বঞ্চনা করা। আর আওয়ামী লীগ মানুষকে উপহার দেয় উন্নয়ন। আমরা আজ শতভাগ বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি প্রত্যেকের ঘরে ঘরে। আমরা নতুন নতুন স্কুল করেছি। ২৬ হাজার নতুন প্রাইমারি স্কুল সরকারিকরণ করেছি। আজকে আমাদের স্বাক্ষরতার হার ৭৫.২ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য। তা বাস্তবায়ন করা।
স্বাধীনতার মাসে ময়মনসিংহে আমি আপনাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। উদ্বোধন করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার মাসে ৭৩টি প্রকল্প উদ্বোধন করে দিয়ে গেলাম, সেগুলো স্বযতেœ রাখবেন। এরপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা ৩০টি প্রকল্প পড়ে শোনিয়ে বলেন এগুলো দ্রæতই বাস্তবায়ন করা হবে।
এর আগে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে জনসভাস্থল সার্কিট হাউস মাঠ থেকে একযোগে ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩০টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা ৭৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং প্রায় ২ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকার প্রধান। দুপুর ২টা ৫৮ মিনিটে জনসভা মঞ্চে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। ৩টায় প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন।
পরে প্রধানমন্ত্রীকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলম, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইকরামুল হক টিটু, গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন।
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এহেতাশেমুল আলমের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, আওয়ামীলীগের প্রেডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এমপি, আব্দুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, মির্জা আজম এমপি, শফিউল আজম চৌধুরী নাদেল প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*