ঈদের আগেই ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাই নগর ইউনিয়নের দুই মাসের (এপ্রিল- মে) ভিজিডি (ভালনারেবল গ্রæপ ফিডিং) বরাদ্ধ উত্তোলন হলেও অজ্ঞাত কারণে ৩০ কেজি করে চাল পাননি ৩২৮ কার্ডধারী। এনিয়ে উপকারভোগিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনের
কাছে অভিযোগ করেও কোনো কাজে আসছে না। অন্যদিকে প্রায় দেড় বছর আগে ১৫ নারীর নামে ভিজিডি কার্ড হলেও তাঁদের ভাগ্যে জুটেনি প্রাপ্য বরাদ্ধ। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলছেন দুই মাসের চাল উত্তোলন হয়েছে কি না তাঁর মনে নেই। তবে খাদ্য
গুদাম কর্মকর্তা জানিয়েছেন যথা সময়েই চেয়ারম্যান দুই মাসের বরাদ্ধ উঠিয়ে নিয়ে গেছেন। সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তা বলেন, আমাকে জানিয়ে কিছু করা হচ্ছে না। চেয়ারম্যান নিজের ক্ষমতা বলেই তা করছেন। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার দাবি তিনি চেয়ারম্যানকে বারবার বলছেন চাল দিয়ে দিতে। কিন্তু তিনি তা শোনছেন না। স্থানীয় সূত্র ও ভুক্তভোগীদের দেওয়া লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ওই ইউনিয়নের মিরিকপুর,
নাহড়া, দিউপাড়া, দরুন কৃষ্ণপুর ও মাসুদনগর, দড়িয়াপুর ও গড়পাড়া গ্রামের ১৫জন নারী জানান, তাঁদেরকে ভিজিডি তালিকা ভুক্ত করতে স্থানীয় চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ছাড়াও স্থানীয় সরকারি দলের নেতারা জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নেয়। পরে দীর্ঘ দিনেও তাঁদের তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো ধরনের খোঁজ না থাকায় ওই সব নারীরা চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে খোঁজ নিলে তাঁদের জানানো হয় এখনও হয়নি। তালিকাভুক্ত হলে জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া মোবাইল নাম্বারে অবহিত করা হবে। মিরিকপুর গ্রামের হয়রত আলীর স্ত্রী শেফালি আক্তারের কার্ড নং-১৭৪, মিলন মিয়ার স্ত্রী রেনু আক্তারের কার্ড নম্বর-১৮৮, হযরত আলীর স্ত্রী মুর্শিদা কার্ড নং-১৮৮, সেকুল মিয়ার স্ত্রী রেজিয়া কার্ড নং-১৮৫। মাসুদনগর গ্রামের দোলেনা কার্ড নং-১৯৬। দিউপাড়া গ্রামের আব্দুল জলিলের স্ত্রী রুমা আক্তার কার্ড নং-২৫৬। নহড়া গ্রামের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মিনা আক্তার
কার্ড নং-১১০, আব্দুর গনির স্ত্রী রেখা আক্তার কার্ড নং-১১২, রতন মিয়ার স্ত্রী আছিয়া আক্তার কার্ড নং-১১১। দত্তবাড়ি গ্রামের পৃথিস চন্দ্র দেবনাথের স্ত্রী সবিতা রাণী দেবনাথ কার্ড নং-২৮৪, দড়িয়াপুর গ্রামের কিতাব আলী স্ত্রী মনেসায়ারা বেগম কার্ড নং-১৯৭, বিল্লাল
খানের স্ত্রী বিলকিস বেগম কার্ড নং-৩০৩ ইব্রাহিম খানের স্ত্রী সবিতা আক্তার কার্ড নং- ৩০৪, আব্দুল আলীর স্ত্রী আঙ্ধসঢ়;গুরা খাতুন কার্ড নং ৩২৮ ও গড়পাড়া গ্রামের লিটন মিয়ার স্ত্রী রেহেনা কার্ড নং-১৬। কৃষ্ণপুরে গ্রামের লিটন মিয়ার স্ত্রী হাসি কার্ড নং-২৮০।
তাঁরা জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে প্রতিমাসে কার্ডধারীদের ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও তাঁরা বঞ্চিত থেকেছেন। রুমা আক্তার জানান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে তিনি জাতীয় পরিচয় পত্রসহ ছবি দিয়েছিলেন। পরে কার কোনো খবর পাননি। পরে তাঁর স্বামী খোঁজ
করে জানতে পারেন তাঁর নামে ভিজিডি কার্ড হয়েছে গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে। এর পর থেকে তাঁর নামে বরাদ্ধের চাল কে বা করা তুলে খাচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাবিবুল্লাহ বলেন,তাঁরা যে চাল পায় না তা আমার জানা নেই। যদি আগে জানাইতো তাহলে একটা ব্যবস্থা করা যেতো। এখন খোঁজ নিবো। অন্য দিকে এপ্রিল-মে মাসের বরাদ্ধের চাল বিতরণ প্রসঙ্গে
বলেন, এইডা তো আমার মনে নেই। দেইখ্যা জানাইতে অইবো। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা
সিদ্ধার্থ শংকর তালুকদার বলেন, যথা সময়েই চেয়ারম্যান দুই মাসের বরাদ্ধ উত্তোলন করে নিয়ে গেছেন। তদারকি কর্মকর্তা সহকারী শিক্ষা অফিসার আবু রায়হান বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। আমাকে জানিয়ে বরাদ্ধ উত্তেলন করা হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেঁজুতি ধর জানান, বরাদ্ধ বঞ্চিত নারীদের একটি অভিযোগ তাঁর কাছে পৌঁছেছে। তদন্তের জন্য মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বলেন,জুন ফাইনালের মাসের কারণে সময় পাচ্ছি না। তবে
নারীদের ডেকে এনে কথা শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।