প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশব্যাপী ৩ মাস লকডাউনের পর গৌরীপুর উপজেলার সর্বত্র অলিগলি ও পাড়া-মহল্লায় ও
সরকারী অফিসে চলছে ব্যাপক জনসমাগম ও আড্ডাবাজি। মহল্লার চায়ের দোকানের আড্ডায় যুবক থেকে বৃদ্ধ সবাইকে যোগ দিতে
দেখা যাচ্ছে। এসব মানুষের মধ্যে করোনা নিয়ে সরকার নির্দেশিত সচেতনতার লেশমাত্র নেই।
শহরের প্রধান রাস্তাগুলোতে দেখা যায় মানুষের ভিড়। পাড়া-মহল্লার চিত্র পুরোপুরি জনসমাগম। চায়ের দোকান ছাড়াও জটলা পাকিয়ে আড্ডা চলে গলির মোড়ে, বাড়ির ছাদে-সিঁড়িতে, হাট বাজারেসহ এখানে-ওখানে। পুলিশের টহল গাড়ি দেখলেই সবাই আড়ালে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার
আগের অবস্থা। করোনা মহামারির এই দুঃসময়ে সামাজিক দূরত্ব না মানায় আড্ডাবাজ এসব মানুষ নিজেরা যেমন ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি ঝুঁকিতে ফেলছেন পরিবারসহ আশাপাশের অন্যদেরও। ২৬ মার্চ থেকে গোটা দেশে এক ধরনের অঘোষিত লকডাউন দেয়
হয়। সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ, সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিশেষজ্ঞরা দেশবাসীর প্রতি বারবার আহ্ধসঢ়;বান
জানাছিলেন- সবাই যেন ঘরে অবস্থান করেন। কিন্ত তখনও তারা এসব নিদ্দেশ মানেনি।
বর্তমানে লকডাউন তোলার পর অতি জরুরি কাজ, যেমন পেশাগত বা চাকরির প্রয়োজনে এবং ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রীর মতো জরুরি পণ্য কিনতে স্বল্প সময়ের জন্য বাইরে
যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। অনেকেই সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে অযথাই পাড়া-মহল্লায় জটলা করছেন। কোনো কারণ ছাড়াই কেউ
কেউ ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণদের কাউকে কাউকে চার-পাঁচ জন করে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বয়সের
মানুষকেও দেখা যাচ্ছে দোকানের সামনে, গলির মুখে, গিলির রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে দল বেঁধে গল্প করছেন।
এসময় অনেকের মুখে] মাস্কও দেখা যাচ্ছে না। এমনকি ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে একজন আরেকজনের সঙ্গে যে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বিশেষজ্ঞরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেটিরও তোয়াক্কা করছেন না এসব আড্ডাবাজ মানুষগুলো। অথচ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একমাত্র সচেতনতাই মূল চিকিৎসা। পৗরশহরে কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, টেজারী অফিসে পেনশান ভুগী লোকজন তাদের মাসিক পেনশানের টাকা উত্তোলনে এসে মানছেন সামাজিক দুরত্ব,উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষকরা
সামাজিক দুরত্ব না মেনে গাঁ ঘেষে ফটোকপির দোকানগুলোতে পাশাপাশি দাড়িয়ে ফটোকপি করতে, মুদি দোকান, খাবারের
হোটেল, ওষুধের দোকান, কাঁচাবাজার, মাংসের দোকানের সামনে দল বেঁধে গল্প করছেন।
কাউকে কাউকে দেখা যায় হাট-বাজারের
মোড়ে মোড়ে চার-পাঁচ জন করে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে বা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ কেউ উদ্দেশ্য ছাড়াই রাস্তায়
হাঁটছেন, মোবাইলে কথা বলছেন। এত সতর্কতার মধ্যেও এলাকায় রাতের বেলায় মোড়ে বসে ছেলেমেয়েদের গল্প করতে দেখা যাচ্ছে।
পৌর এলাকার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন,সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নানান বয়সের লোকজনকে বাজারে আসতে দেখা যায়। এতে জরুরি
পণ্য কেনার জন্য যারা দোকানে যাচ্ছেন কিংবা রাস্তায় বের হচ্ছেন, তারাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।
কারণ সেখানে প্রয়োজনীয়
সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। এছাড়া অনেকেই যখন-তখন যত্রতত্র উন্মুক্ত স্থানে হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন, থুথু ফেলছেন। হাঁচি-
কাশির শিষ্টাচারও মানা হচ্ছে না। তাই হাঁচির জলকণা গিয়ে আরেকজনের শরীরে লাগছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দেখা উচিত বলে মত দেন বাসিন্দা। বিনা কারণে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করা এবং পাড়া-মহল্লায় দল
বেঁধে যারা আড্ডা দিচ্ছেন তাদের কেউ কেউ বলছেন, এভাবে কতক্ষণ ঘরে থাকা যায়! কারো মুখেই মাস্ক নেই।
তিনজনই কিছুক্ষণ পরপর
সামনে থুথু ফেলছেন। কেন তারা এখানে বসে আছেন, জানতে চাইলে দোকানদার আজাদ মিয়া বলেন, তারা কথা শোনে না। ঘণ্টার
পর ঘণ্টা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। প্রায় সারাদিনই তারা এখানেই থাকছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও
গণমাধ্যমে সমালোচনা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন শুধু সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক বিশিষ্ট সামাজিক বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায়
রাখার ক্ষেত্রে সবাই সচেতন না হলে এটা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ছেলেমেয়েরা যাতে বিনা কারণে বাইরে ঘোরাফেরা
করতে না পারে, এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া জরুরি/