ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া বাজারের শুক্রবার ১১ জুন ছুটির দিনে কার স্বার্থে
পুরাতন তিনটি সরকারী রেইন্ট্রি গাছ কে বা কারা কেটে ফেলেছে । এ নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক সমালোচনা। ক্ষোভ
প্রকাশ করে সরকারি গাছ কর্তনের বিচার দাবি করছেন এলাকবাসি। আর গাছ কাটার ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা না জানলেও সহকারি কমশিনার (ভূমি) নীতিমালার মধ্যেই গাছগুলি কর্তন হয়েছে বলে দাবি করেছেন। তবে কবে
কোথায় কখন টেন্ডার হয়েছে আর কজন টেন্ডারে অংশ গ্রহন করেছেন তা তিনি বলতে চাননি।
শনিবার সরজমিনে গেলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাজারটির অবস্থান কলতাপাড়া গৌরীপুর সড়কের মাঝখানে। পুরাতন এই
বাজারটির সড়কের পাশে রয়েছে নানান জাতের গাছ। তার মধ্যে বিশাল আকৃতির তিনটি রেইন্ট্রি গাছের ডালপালা গত এক
সপ্তাহ ধরে কর্তন করছে একদল কাঠুরে। কার নির্দেশে এ গাছগুলি কাটা হচ্ছে বাজারের লোকজন জানার চেষ্টা করেও কোনো কূল- কিনারা করতে পারেনি। এ অবস্থায় গতকাল সকাল থেকেই বেশ কয়েকজন কাঠুরে একটানা কেটে ফেলে দুইটি গাছ। বাকিটির ডালপালা কাটা শেষ। যে কোনো সময় বাকি অংশও কেটে ফেলা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাজারের লোকজন জানায়, একেক সময় একেক ব্যক্তি নিজেদের বনবিভাগ, সড়ক ও জনপদ এমনকি ভূমি
অফিসের পরিচয় দিয়ে গাছ কাটার তদারকি করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খোলতে চাননি।
জানতে চাইলে বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ মেম্বার জানান, তিনি শুধুই দেখছেন গাছ কাটা হচ্ছে। জানতে
চাইলে দুই ব্যক্তি তাঁকে জানান, ওপর থেকে ব্যবস্থা করে গাছ কাটার অনুমতি আনা হয়েছে।
স্থানীয় ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক সরকার জানান, এটা একটা মগের মুল্লুক হয়েছে। কে কার গাছ কাটছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিলেও প্রশাসন জেনেও না জানার ভাব করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, তাঁর কাছে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে প্রতিবেদন
চাওয়া হয়েছিল। তিনি শুধু গাছের অবস্থান ও পারিপার্শিকতা বর্ণনা করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। গাছ কাটা যাইতে পারে
এমন কথা প্রতিবেদনে ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাকে নয়, এসিল্যান্ড স্যারকে জিজ্ঞেস করেন।
গৌরীপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সেজুঁতি ধর জানান, তিনি গাছ কাটার বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাছাড়া এ
বিষয়টি তাঁর কার্যালয়ের নয় বলেও সাফ জানিয়ে দেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ রানা বলেন, তিনি নীতিমালা
মেনেই গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন। এতে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। কেন গাছ কাটার প্রয়োজন হলো জানতে চাইলে তিনি
বলেন, বাজারের এক ব্যবসায়ীর সমস্যা হওয়ায় তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতেই খোলা টেন্ডারে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। কত টাকা
বিক্রি হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সরকারি নথিতে আছে। বলা যাবে না। টেন্ডারে কে পেয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে
তিনি বলেন, দাড়ি আছে এমন একজন হুজুর। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজারের দুই প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মো.
ইব্রাহিম ও খলিলুর রহমান বাজারের নিজেদের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ঘরের লাগোয়া হওয়ায় নতন ঘর নির্মাণ করতে কাটার প্রয়োজন। সেই হিসেবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মূল্যবান গাছগুলি বিভিন্ন কৌশলে প্রশাসনের সহযোগিতায় কেটে ফেলার উদ্যোগ নেয়। জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, আমার ঘরের পাশে একটা গাছ খুব ঝামেলা করছিল। তাই এসিল্যান্ড অফিসে বইল্যা কাডাইতাছি। গাছগুলি কাটার দায়িত্ব নিয়েছেন মো. ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ১০জন লেবারে গত সাতদিন ধইর্যা
কাটতাছে। প্রতিদিন তাদের ৭০০ টাকা করে দিতাছি। এর চেয়ে বেশী কিছু আমি জানি না।