করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে বক্তব্য দিয়েছে বিরোধী দল বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতার কারণে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা ফুটে উঠেছে এবং সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলেছে।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ করেছেন, করোনাভাইরাস সংকট নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করার উদ্দেশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে অন্ধ সমালোচনা করছে।

দেশে করোনাভাইরাস দুর্যোগে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে গত তিন মাসে কয়েকদফা সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সহ দলটির নেতারা সমালোচনা করেছেন।

কিন্তু এবার মি: আলমগীর আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যর্থতার অভিযোগ এনেছেন।

“আজকে গোটা জাতির কাছে নয়, সমগ্র বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে বাংলাদেশ করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। এবং তারা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে এটাকে মোকাবেলা করতে। আমাদের কথা নয়, চীনা বিশেষজ্ঞরা যারা এসেছিল, তারাইতো বলে গেছে যে, এখানে প্রতিরোধের কোন পরিকল্পনাই ছিল না।”

তিনি আরও বলেছেন, “এটা শুধু বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের নয়, সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করলেই বুঝতে পারবেন যে, কত মানুষ আছেন যারা টেস্ট করতে গিয়ে করতে পারছেন না। কত মানুষ আছেন টেস্ট করতে গিয়ে ওখানে মারা গেছেন। কত মানুষ আছেন যারা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন। কত মানুষ আছেন যারা সাধারণ চিকিৎসার জন্যও কোন হাসপাতালে যেতে পারছেন না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যে পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে-এটাই তার প্রমাণ।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ, এরপর প্রতিকার অর্থাৎ চিকিৎসা এবং অসহায় বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করা- সরকার তাদের কর্মকান্ডকে এই তিন ভাগে ভাগ করে পরিকল্পনা করার কথা বলে আসছে।

এই তিনটি ক্ষেত্রেই চরম অব্যবস্থাপনা এবং সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মি: আলমগীর।

তিনি মনে করেন, এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে এবং সংক্রমণের সাথে পাল্লা দিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেছেন, দেশে সংক্রমণ শুরুর পর তিন মাসেও চিকিৎসা সেবার বেহাল দশাই দৃশ্যমান হচ্ছে।

“কতজন রোগী এ মুহূর্তে আইসিইউ সেবা নিচ্ছেন, তার তথ্য জনসমক্ষে দেয়া হচ্ছে না। অধিদপ্তর বলছে, দেশে করোনার জন্য নির্ধারিত ১১০টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা আছে ৩৩৯টি। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৪৯টি হাসপাতালে আইসিইউ সাপোর্ট নেই। দেশে আইসিইউ নিয়ে চলছে নানা কেচ্ছা-কাহিনী। অনেক ক্ষমতাবানরা বুকিং দিয়ে রেখেছেন। যদিও যাদের প্রয়োজন, তারা পাচ্ছেন না।”

বিএনপি মহাসচিব চিকিৎসার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বলেছেন, চিকিৎসা সেবার নামে যে হরিলুট চলছে,সেটা নিয়েও সরকারের মাথা ব্যাথা নেই। মি: আলমগীরের এসব অভিযোগ প্রত্যাখান করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে মি: কাদের পাল্টা অভিযোগ করেছেন, এই দুর্যোগে বিএনপি মানুষের পাশে না থেকে সরকারের অন্ধ সমালোচনা করছে।

“সরকারের বিরুদ্ধে বরাবরের মতো বিরুপ সমালোচনা করতে গিয়ে বিরাজনীতিকরণের অভিযোগ এনেছেন। আমরা তাকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ সংকটকালে সরকারতো কোন রাজনীতি করছে না। এমনকি আওয়ামী লীগও এসময়ে কোন রাজনৈতিক কার্যক্রম করছে না। এখন রাজনীতি হচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করা এবং মানুষকে বাঁচানো।”

বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মি: কাদের আরও বলেছেন, “বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে সরকারের সমালোচনা করা ছাড়া তাদের আর কোন রাজনীতি নেই। তারা অসহায় মানুষ থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করে।”

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে এখন রাজনৈতিক বক্তব্য বা বড় দুই দলের নেতাদের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ দেখা যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের কর্মকান্ড নিয়ে বিএনপির সমালোচনা সরকারকেই তার ভুল বা সমস্যা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।

অনেক বিশ্লেষক আবার মনে করেন, দুই বিভেদের রাজনীতির কারণে এই সংকটেও তার প্রকাশ দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনাক জাহান বলেছেন, “যেখানে বিভাজনের রাজনীতি, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো সেধরণের রাজনীতি করেই যাবে। কিন্তু আমি বরছি, এই মুহুর্তে দেশের জনসাধারণ এতই উদ্বিগ্ন কভিড-১৯ নিয়ে যে রাজনৈতিক দলগুলো একসাথে কাজ করছে নাকি কাদা ছোঁড়াছুড়ি করছে, এর কোনটার দিকে মানুষ নজর দিচ্ছে না। মানুষ বা সবাই চাচ্ছে কীভাবে তারা করোনাভাইরাস সংকট থেকে পরিত্রাণ পাবে?”

এদিকে, বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, তাদের বক্তব্যের ব্যাপারে যদিও আওয়ামী লীগ নেতারা রাজনৈতিক কারণে জবাব দিয়ে থাকেন। কিন্তু সমালোচনা, অভিযোগ বা বক্তব্যকে সরকার পরিস্থিতি সামলাতে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে।