জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত এলাকায়, পানিবন্দী হাজার হাজার মানুষ। রাস্তা ঘাটসহ বাড়ী ঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় তারা এক রকম পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউনে জনজীবন যখন অতিষ্ঠ, রুজি রোজগার বন্ধ হয়ে অনাহারে অর্ধাহারে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ গুলো দিনক্ষণ গুনছিলো, ঠিক তখনই বন্যার পানিতে প্লাবিত হলো দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা। এ যেন মড়ার উপর খড়ার ঘাঁ। এলাকার প্রায় সকল মানুষই পানি বন্দী। সব মিলিয়ে চলাফেরা সহ সকল কাজ কর্ম বন্ধ থাকায় অনাহারে, অর্ধাহারে কাটছে ডাংধরা, চর আমখাওয়া, হাতীভাঙ্গা, বাহাদুরাবাদ, চিকাজানি, চুকাইবাড়ী ও সদর ইউনিয়নের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ গুলোর।
সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যার পানিবন্দী মানুষ, গবাদিপশু নিয়ে উচু রাস্তার উপরে ঠাই নিয়েছে। প্রায় সকল মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় থাকলেও,মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মা। । ক্ষুদ্র খামারি ও প্রান্তিক কৃষকেরা পরেছে গো খাদ্যের তীব্র সংকটে।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে গ্রামীণ অবকাঠামো, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে একমাত্র অর্থ কড়ি ফসল (সোনালি আশ) পাট।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা, চর আমখাওয়া, হাতিভাঙ্গা, বাহাদুরাবাদ , চিকাজানি ইউনিয়নের পশ্চিমাঞ্চল নিচু হওয়ায় বন্যার পানি বয়ে চলেছে বিপদ সীমার অনেক উপর দিয়ে। এর ধারাবাহিকতায়, ডাংধরা ইউনিয়নের বাঘারচর, জোয়ানেরচর মুন্সি পাড়া, উত্তর জোয়ানেরচর, জোয়ানেরচর খাঁ পাড়া, কারখানা, সোনাকুড়া, ডাংধরা পশ্চিম পাড়া, হারুয়াবাড়ী পূর্ব পাড়া, হারুয়াবাড়ী মধ্যপাড়া,পান্তামারী এবং চর আমখাওয়া ইউনিয়নের আকন্দপাড়া, শেখ পাড়া, পাটাধোয়াপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মন্ডলপাড়া, টুপকারচর, মৌলভীরচর, বয়ড়াপাড়া গ্রামে শতশত একর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। ডাংধরা ইউনিয়ন বিভিন্ন গাছের চারা উৎপাদন এবং শাকসবজি চাষের জন্য বিখ্যাত।
এ সকল শাকসবজি দিয়েই অত্র এলাকা সহ আশেপাশের এলাকা গুলো পুষ্টি সমৃদ্ধ কাঁচা তরকারির চাহিদা পুরণ করে থাকে। কিন্তু এই বন্যার কারণে এসকল এলাকার মরিচ, শাকসবজি, কাঁচা তরকারি সহ সকল আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।
বাঘারচরে নার্সারির মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায় এবারের বন্যা আগাম আসার কারণে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষক নিজাম উদ্দিন বলেন- এবার বন্যার পানি তাড়াতাড়ি আসায় আউস জাতের ধান, নানা তরকারী বিভিন্ন ফসল ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওসমান গনি বলেন- আগাম বন্যার কারণে পাট, আউস ধান, শাকসবজী সহ রোপা আমনের বীজতলা। ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে প্লাবিত এলাকা গুলোর মধ্যে প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
সবজি চাষী বদিউজ্জামান বলেন- আমি ১একর ২০ শতাংশ জমিতে সবজি আবাদ করছি, সব পানির নিচে পঁইচা গেলো, সরকার আংগের ফিলে চায়া না দেখলি আংগেরে পতে খাড়ান ছাড়া উপায় থাকপোনা।
ডাংধরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ মোঃ মাসুদ বলেন- ডাংধরা ইউনিয়ন প্রায় পুরোটাই বন্যায় প্লাবিত। প্রায় ৫থেকে ৬হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ৩থেকে ৪শত পরিবারের বাড়িঘরে পানি উঠেছে।
তিনি আরও বলেন- আমি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন ও সরকারের ব্যবস্থা অনুযায়ী সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবো। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনও তৎপর রয়েছে।