মুক্তাগাছা থেকে মাহমুদুল হাসান রাজিব : ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বাবা-মা ও শশুর-শাশুরির পারিবারিক দ্ব›েদ্বর জের ধরে বিবাহ বিচ্ছেদের পর পুনরায় বউ নিয়ে আসার জন্য বাবা-মা ও মানুষের দ্বারে দ্বারে প্রায় ১ বৎসর যাবৎ বউ এনে দেওয়ার অনুরোধের আহাজারি করে যাচ্ছে যুবক কিন্তু উভয় পরিবারের অভিভাবকদের দম্ভের জেরে কোন সুরাহা হচ্ছে না। অসহনীয় অবস্থায় নিরীহ দুটি জীবন কষ্টে কালাতিপাত করছে।
জানাযায়, মুক্তাগাছা উপজেলার বন্দগোয়ালীয়া গ্রামের মোঃ খোকন মিয়ার একমাত্র ছেলে মোঃ এনামুল ইসলাম মিলন (২৫) নামে এক যুবক গত ১ বছর যাবৎ বউ এনে দেওয়ার জন্য মা-বাবা ও মানুষের দ্বারে দ্বারে পাগলের মতো অনুরোধ করে যাচ্ছে যা এলাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে চাঞ্চোল্যর সৃষ্টি করেছে। আরও জানাযায়, এনামুল ইসলাম মিলন ময়মনসিংহ পলি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা কম্পিøট করার পর ২৮ জুন ২০১৭ ইং তারিখে পিতা-মাতার সম্মতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় পার্শ্ববর্তী মহল্লার মোঃ বকুল মিয়ার ২য় মেয়ে মোছাঃ শর্মিলি আক্তার সুমির সাথে।
সংসার ভালই চলছিল এমনকি তার ১টি মেয়ে সন্তানও হয় যার বর্তমান বয়স ১ বৎসর ৪ মাস। মিলনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার পারিবারিক কিছু সমস্যা নিয়ে উভয় পক্ষের অভিভাককের মাঝে দূরত্বের সৃষ্টি হওয়াতে তার স্ত্রী ৩ মাসের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় মিলন তার স্ত্রী শর্মিলি কে নিজেই শশুর বাড়ীতে রেখে আসে। সেখানেই শর্মিলির শিশু কন্যার জন্ম হয়। এভাবে প্রায় ১১ মাস কেটে যাওয়ার পর মিলন তার অভিভাবকদের তার স্ত্রী শর্মিলিকে নিয়ে আসার কথা বললে মিলনের বাবা-মা শর্মিলিকে নিয়ে আসতে অস্বীকৃতি জানায়।
দীর্ঘ দিন যোগাযোগ না থাকায় বাচ্চা হওয়ার ৩ মাস ২১ দিন পর শশুরবাড়ী থেকে শর্মিলি ও তার মা বাচ্চাকে মিলনের বাড়ীতে পৌছে দিয়ে তারা চলে যায়। এভাবে আরও ৪ মাস কেটে যাওয়ার পর মিলন নিজের চেষ্টায় ব্র্যাক অফিসের সহযোগিতায় মিমাংসা করলে তার শাশুরী মিলন ও তার স্ত্রী কে তাদের বাড়ীতে নিয়ে যায়। তার শাশুরী পরবর্তীতে বলেন মিলনের বাড়ি থেকে অভিভাবক না আসলে তার মেয়েকে মিলনের সাথে দেওয়া হবে না। মিলনের কোন অভিভাবক তাদের আনতে না যাওয়ায় আবার নতুন করে দ›েদ্বর সৃষ্টি হয়। তারপর ১৬ দিন পর তার অভিভাবকরা মিলনের উপর কঠিন চাপ সৃষ্টি করে ও হুমকি দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ইং তারিখে খোলা তালাক নামায় জোর পূর্বক স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
তার পরেও মিলন ও শর্মিলির যোগাযোগ থেকেই যায়। মিলনের অভিভাবক মিলনকে ২য় বিবাহের প্রস্তাব দিলে মিলন তা অস্বীকার করে বলে আমি যদি জীবনে কাহারও সাথে সংসার জীবন করি সেটা হচ্ছে শর্মিলির সাথে। তার পর থেকেই মিলনের বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনসহ মিলনের সাথে দূব্যবহার শুরু করে। তার পর প্রায় ১ বৎসর যাবৎ মিলন পাগলের মত দেবদাস জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। মিলন আরও বলেন, আব্বা-আম্মা বলে শর্মিলির মা-বাবা শর্মিলিকে দিয়ে যাক অপরদিকে শর্মিলির মা-বাবা বলেন মিলনের মা-বাবা এসে নিয়ে যাক।
তার পর আমি আমার এলাকার মুরুব্বিদের কাছে গিয়েছি, বর্তমান মেম্বার ও সাবেক মেম্বার ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছেও গিয়েছি তারা আমার বাবা-মায়ের কাছে আমার ব্যাপারে সুপারিশ করতে গেলে মিলনের বাবা বলেন, শরিয়ত অনুযায়ী যদি আনা যায় তাহলে শর্মিলিকে এনে দিবে। পরবর্তীতে মিলন কাজীর কাছ থেকে কাবিনের নকল এবং বিবাহ বিচ্ছেদের নকল সাথে নিয়ে ঢলুয়াবিল মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি খলিলুর রহমানের কাছ থেকে লিখিত ফতুয়া নিয়ে আসেন। মিলন তার বাবাকে ফতুয়া নিয়ে আসার কথা বললেও তার বাবা ১চুল পরিমাণও পরির্তন হয়নি বরং মিলনের উপর কবিরাজি কারসাজি শুরু করে দেয়।
এ মধ্যস্থানে থাকা অবস্থায় মিলন একবার নয় বার বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করে এবং এলাকার কিছু যুবক তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। মিলন আরও বলে, বিগত ১ বৎসরের ভিতরে বাড়িতে মাত্র ১৬ থেকে ১৭ দিন খাবার খেয়েছে মাত্র। বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়ে গত রমজান মাসে সমাজের মসজিদের মাদরাসায় ১ মাস খেয়ে না খেয়ে দিন কাটান এমনকিক সেহরী শুধুমাত্র এক দুটি বিস্কিট খেয়ে রোজা রাখেন ইফতারি হয়েছে পানি কিংবা মসজিদে মানুষের দেওয়া ইফতারির মাধ্যমে। পবিত্র ঈদের দিনেও তার বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজন তার কোন খোজ খবর নেয় নি। ঈদের দিনটাও তাকে না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় থাকতে হয়েছে।
সর্বশেষে মিলন বলেন, সরকারের কাছে আমার আকুল আবেদন এই যে, আমার নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আমাকে সুন্দর সংসার জীবনে পৌছে দেওয়া হোক। দুইটি পরিবারের দাম্ভিকতার জেরে মাছুম শিশুটি তার মায়ের আদর ভালবাসা এমনকি তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়া থেকে বঞ্চিত। এ জন্য দায়ী দুটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন গুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। যাতে মাছুম শিশুটি তার মায়ের কাছে ফিরে গিয়ে সুস্থ জীবন ফিরে পায় এবং সেই সাথে মিলন তার স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে সুখি জীবন গড়তে পারে।
এ ব্যাপারে মিলনের বাবা ও মায়ের সাথে মুবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, তারা শর্মিলিকে আনতে যাবে না। মিলন যদি নিয়ে আসতে পারে কিংবা মিলনের সাথে শর্মিলিকে দিয়ে দেয় তাহলে মেনে নিবে।এ ব্যাপারে এলাকার স্থানীয় জনসাধারণের পক্ষ থেকে শরিফুল ইসলামের এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা তিনি জানান, আমরা মিলনের করুন অবস্থা দেখে তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে মিলনের কথা বললে তাদের থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বরং বলেন আমার কোন ছেলে নেই।
এ ব্যাপারে এলাকার স্থানীয় ইউপি সদস্য আলহাজ্ব আব্দুছ ছালাম তালুকদারের মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি।মিলনের শাশুরী মোছাঃ বুলবুলি বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, মিলনের বাবা-মা ও ভগ্নিপতি যদি শর্মিলিকে আনতে যায় তাহলে মিলনের সাথে পুনরায় বিয়ে দিবে।