অভাবের যুদ্ধে  হেরে না যাওয়া মৃত্যুঞ্জয়ী এক নারী ইয়ানুর 

গালাচিপা (পটুয়াখালী)প্রতিনিধিঃ “আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”

জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘নারী’ কবিতাটি তিনি হয়তো সমাজের নারীদের সন্মান টুকু টিকিয়ে রাখতে অথবা তাদের পাওনা বুঝিয়ে দিতে ইঙ্গিত করেছিলেন।
  কিন্তু আসলে কি সমাজে ইয়ানুরের মতো অভাব অনটন, আহারে অনাহারে নিয়মিত এক নারী যোদ্ধার সন্মান ফিরিয়ে দিতে পেরেছি? হয়তো না। তার’ই বাস্তব গল্প তুলে ধরছি প্রিয় পাঠকের কাছে।
 পটুয়াখালীর গালাচিপা উপজেলা গোলখালী ইউনিয়নে ৩ নং ওয়ার্ডের  স্বামী পরিত্যক্তা তিন সন্তানের জননী ইয়ানুর। ছোট বেলা থেকেই অভাবের সংসারে জন্ম নিয়ে, আদরে অনাদরে, আহারে অনাহারে বড় হয় মা-বাবার সংসারে।
বাবা মায়ের অভাবের সংসারে ভার কমাতে শৈশবকালে না বুঝার আগেই বিয়ে নামের সমাজিক রিতি নিয়মে অভাব আর হতাশাকে কাধেঁ নিয়ে বসতে হয় বিয়ের পীরিতে।
এযেন অভাব আর অনটন’ই তার সঙ্গী সাথী করেই  জন্মে ছিলো রংমহলের সংসারে, যেভাবেই যাক দিন চলছিলো দিনের মতো। একে একে ইয়ানুরের কোল জুড়ে আসে দুই মেয়ে আর প্রতিবন্ধী  একটি ছেলে।
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস অভাবের যুদ্ধে হারমেনে দুই মেয়ের ও প্রতিবন্ধী ছেলেকে ফেলে রেখে চলে যায় ইয়ানুরের স্বামী জহিরুল ফকির।এযেন বেচেঁ থাকাই একটি অভিশাপ্ত জীবন! ভেবেও হার মানেনি  ইয়ানুর। তিন সন্তানের জীবনের মায়ায়  আশ্রয় নেয় সেই মা-বাবার অভাবী ঝুপড়ী ঘড়ের অভাবী সংসারে।
কাজের ফাকেঁই কথা হলো হতভাগী ইয়ানুরের সাথে, স্বামী জহিরুল  প্রায় ১০ বছর হয় চলে গেলেও সন্তানের কথা ভেবে এক সময় নতুন জীবন শুরুকরার সুযোগ থাকলেও বেছেঁ নেয়নি সে জীবন। সন্তানের মূখে  দুমুঠো খাবারের সন্ধানে খুঁজে নেয় কখনো মাটি কাটা, কখনো অন্নের বাড়িতে কাজ করা, অথবা ঠেলাগাড়ি সহ লঞ্চঘাটের কুলির মতো কষ্টো স্বাধ্য কর্মজীবন।
বর্তমান সময়ে জীবীকার তাগিদে  সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হাট বাজারে দোকান ঘরে পৌছাতে হয় বিভিন্ন মালামাল। বিনিময়ে সারাদিনের আয় ৩’শত থেকে ৪’শত টাকা। কথার ফাকেঁই নিজের অজান্তেই চোখের কোনে পানি যেন গড়িয়ে পরছে।” তিনি বলেন, গরীব হয়ে জন্মেছি, সুখ কি?  কেমন?  তা স্বপ্নেও দেখি নাই। দুই মেয়ে আর প্রতিবন্ধী পলাডারে লইয়া পানির উপর কোন রহম দিন কাডাই, কহন যে কি হইয়া যায় হ্যা কইতে পারিনা। গরীবের কতা কেউ হুনেনা! এ কথা বলেই মাথায় বোঝা নিয়ে কর্মব্যস্ত হয়ে যায় অভাগী অভাবের কাছে হেরে না যাওয়া এক মৃত্যুঞ্জয়ী নারী’ ইয়ানুর।
তাইতো আজ বলতে হয় লাল লাল চোখ জোড়া কতকাল ধরে,ঘুমায় না; ওই হাত দু’টো কতটা শক্ত! হৃদয়ের চাওয়াগুলোর দাফন হয় প্রতিদিন,

স্বার্থের সমাজে এরা পরিচয়হীন উপেক্ষিত মৃত্যুঞ্জয়ী এক নারী।