এ যেন সাত সমুদ্র তের নদী পারের রূপ কথার গল্প নয় প্রকৃত বাস্তবতা কে হার মানিয়েছেন নিভৃত পল্লীর ভ্যান চালক সুপারম্যান দুলাল দাস।মনে হয় ‘সুপার ড্যাড’ একেই বোধহয় বলে! ১৮ বছর ইট কুঁড়িয়ে তিন ছেলের জন্য পাকা বাড়ি বানালেন ভ্যান চালক দুলাল দাশ। পেশায় ভ্যান চালক দুলাল দাসের জীবনের লক্ষ্যটা ছিল স্থির।
আর সব পিতার মতোই দুলাল দাস চেয়েছিলেন তার সন্তানদের মাথার উপর ছাদ টুকু নিশ্চিত করতে। সেই লক্ষ্যেই প্রায় ১৮ বছর ধরে ভ্যান চালানোর পাশাপাশি রাস্তাঘাটে কোথাও পড়ে থাকা ইট দেখলেই কুড়িয়ে নিতেন তিনি। সেই কুড়িয়ে পাওয়া ইটের সাহায্যেই বর্তমানে তিন ছেলের মাথার উপর পাকা ছাদ গড়ে তুলেছেন দুলাল দাস! সাতক্ষীরার সারশা গ্রামের বাসিন্দা দুলাল দাসের জীবনটা যদিও এই খাতে চলার কথা ছিল না।
কুড়ি বিঘা জমির উপর বিশাল জমিদারি ছিল বাবা যতীন দাসের। কিন্তু তার বাবা দ্বিতীয় বার বিয়ে করার পরেই দুলাল দাসকে পথে বসতে হয় তিন ভাই ও পাঁচ বোনকে নিয়ে। বাবার সম্পত্তির ভাগ না পাওয়ায় ছেদ পড়ে লেখা পড়াতেও। অগত্যা ছোটো ভাই-বোনদের মুখে অন্ন সংস্থান করার জন্য ছোটো থেকেই বেছে নিতে হয় ভ্যান চালানো কিংবা দিন মজুরের মতো পেশা।
অভাবের সংসারে বেশি দূর লেখাপড়া করাতে পারেননি তিন ছেলে মিত্র দাস, গোষ্ঠ দাস ও মিলন দাসকেও। তাই তখন থেকেই মনের ভিতর পুষে চলেছিলেন একটি আশা, যে কী করে ছেলেদের মাথায় হারিয়ে যাওয়া ছাদ ফিরিয়ে দেওয়া যায় আবার? ১৮ বছর আগে জীবন সঙ্গিনীকে হারান দুলাল বাবু। তারপর থেকেই নিজেকে ডুবিয়ে দেন সন্তানদের জন্য সুখ খোঁজার কাজে।
১৮ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে ইট কুঁড়নোর পাশাপাশি প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে যে আয় হতো, তা থেকে আরও ৩০-৪০টি ইট দীর্ঘদিন ধরে যোগাড় করতেন তিনি। এভাবেই বর্তমানে তিন ছেলের জন্য তিনটি পাকা বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন তাদের বাবা দুলাল দাস। দুলাল দাসের মতো বাবা কিংবা শ্বশুর পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার, বলেছেন তার পুত্র এবং পুত্রবধূরাও।
কিন্তু নিজের কর্তব্যে অনড় দুলাল বাবু জানিয়েছেন, মা হারা তিন ছেলের জন্য কিছুই না করে চলে যেতে হলে নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারতেন না তিনি। তাই অভিনব এই পন্থা নিয়ে ফেলেছিলেন নিতান্তই ঝোঁকের মাথায়। বাড়ি তৈরির পর বাড়ির সামনে আসা-যাওয়ার ২৫ ফুট রাস্তা ঢালাই দেয়া এখন তার ভবিষ্যৎ লক্ষ্য।তিনি তার ভবিষ্যৎ লক্ষ পূরনে সবার আশির্বাদ কামনা করেন।