নাম যুবরাজ। ওজন ৫০ মন। এবারের ঈদুল অযহা উপলক্ষে লালন পালন করা গরু নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা মালিক ঝিনাইদহে সদর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের মোহাম্মাদ শাহআলম মিয়া। গত ৪ বছর যাবত যুবরাজ নামের একটি গরু লালন-পালন করছেন তিনি। তার খামারে থাকা অন্তত ৫০ মণ ওজনের ষাড়টির দাম হাকছেন ৩০ লাখ টাকা। কিন্তু করোনা কারণে ক্রেতা না থাকায় গরু বিক্রি করা নিয়ে চিন্তিত সে। একদিকে গোখাদ্যের চড়া দাম। অন্যদিকে করোনার কারণে পশু হাট বন্ধ ও ক্রেতা সংকট হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাজ। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে হাট চালু করা ও খামারিদের সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থা করার দাবী তার।
জানাযায়, মোহাম্মাদ শাহআলম মিয়ার বাড়ি মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায়। ছাত্র জীবনে তিনি শিবচরেই কেটিয়েছেন। প্রায় ৮ বছর পূর্বে এক ছোট ভায়ের হাত ধরে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামে চলে আসে এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন সেখানে। এরপর অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি সিঙ্গাপুরসহ ৪১টি দেশে গিয়েছেন। পরে ঝিনাইদহে ফিরে এসে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়ি ও বাড়ির সাথে একটি খামার করেন। খামারের নাম দিয়েছেন আব্দুল¬াহ এগ্রো এন্ড ডেইরি ফার্ম। ৭ বছর এই খামারেই তিনি গরু লালন-পালন করেন। বর্তমানে তিনি এই খামারেই সময় দেন। এগুলো লালন-পালন করে অর্থ উপার্জন করছেন।
ফার্ম মালিক শাহআলম মিয়া জানান, আমার এই ফার্মের নাম আব্দুল্লাহ এগ্রো এন্ড ডেইরি ফার্ম। যুবরাজ নামে ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টি স্থানীয় বাজার থেকে ৬ মাস বয়সে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় কিনে আনা হয়। এখন তার বয়স ৪ বছর ৬ মাস। শুধু মাত্র এই ষাঁড়ের পেছনে প্রতিদিন খাবারের জন্য খরচ হয় প্রায় ২ হাজার টাকা। আমি প্রায় ৭ বছর যাবৎ খামার পরিচালনা করছি। যুবরাজের ওজন এখন ৫০ মণের উপরে। আমার গরুটির দাম চেয়েছি ৩০ লক্ষ টাকা। ইতিমধ্যে আমার গরুটির দাম ১৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। গত বছর ঈদে এটির দাম ২১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা হয়েছিল। এবার করোনা ভাইরাসের মধ্যে কি হয় জানি না ভাগ্যে কি আছে। গরুটির পেছনে ১৭/১৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গেছে। যদি আমি ন্যায্য মূল্য না পাই তাহলে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাব। এভাবে আমি নয়,আমার মত অনেক খামারি ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে যাবে। তাই সরকারের কাছে দাবি এবারের কোরবানির হাট যাতে ভালোভাবে বসে এবং খামারিরা যাতে ন্যয্য মূল্য পাই।
ওই গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান জানান, মোহাম্মাদ শাহআলম মিয়া গরুর সঙ্গে কথা বলে। সে নাম ধরে ডাক দিলেই গরু বুঝতে পারে। মালিক যে নির্দেশ দেয় সেটাই যুবরাজ পালন করে। তিনি বলেন, এই যুবরাজ তাদের গ্রামটি অনেক এলাকার মানুষের কাছে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন যুবরাজকে দেখতে।
ঝিনাইদহ শহর থেকে আসা মোঃ শাহীনুর রহমান টিটো জানান, তাদের এলাকার অনেকে যুবরাজকে দেখে গল্প করছিলেন। এই গল্প শুনে তিনিও এসেছেন। তিনি বলেন, গরুটি দেখে গরু মনে হচ্ছে না, মনে হচ্ছে এটি একটি হাতি। তিনি তার জীবনে এমন গরু কখনও দেখেনি। এছাড়াও তিনি প্রবাসী এক আত্মীয়ের জন্য আসছে ঈদুল আযহায় কোরবানি দেওয়ার জন্য গরুটির দাম দিয়েছেন ১৯ লাখ টাকা।
হাট মালিকরা বলছেন, ঢাকার মতো জেলায় একটানা হাট চলে না। এতে তাদের ক্ষতির পাশাপাশি খামারীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই দ্রুত হাট চালুর দাবি তাদের।
ঝিনাইদহ জেলা প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডাঃ আনন্দ কুমার অধিকারী, জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ পশুর হাট বন্ধ রেখেছে। তবে আগামী ২৩ অথবা ২৫ জুলাই থেকে ঈদের আগ পর্যন্ত একটানা গরুর হাট খোলা রাখা হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, জেলায় যুবরাজ নামের একটি ষাড় প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে শ্রেষ্ঠ গরু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
ওই গরুটির ওজন আনুমানিক ৫০ মণ বলে ধারণা যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ১২ হাজার ৬ শত ৫৬ টি খামার রয়েছে। তাতে প্রায় ৬১ হাজার ছোট বড় গরু রয়েছে।