রিয়াজুল ইসলাম(দেবহাটা /সাতক্ষীরা) : করোনা ভাইরাসের ভুয়া টেষ্ট ও জাল সনদ প্রদানের ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত প্রতারক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমকে অস্ত্রসহ বুধবার র্যাব সদস্যরা দেবহাটার শাঁখরা কোমরপুর সীমান্ত থেকে আটকের পর তাকে আশ্রয়দাতা ও ভারতে পালানোর বিষয়ে সহযোগী উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব আল ফেরদাউস আলফাকে জড়িয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সাহেদ কান্ডের বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে নিজের সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেছেন আল ফেরদাউস আলফা।
মহাপ্রতারক সাহেদ গ্রেপ্তারের পর তাকে আশ্রয়দদাতা ও সহযোগীতাকারী হিসেবে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হতে থাকলেও গত কয়েকদিন ধরে এবিষয়ে মিডিয়ায় কোন বক্তব্যই দেননি আলফা। অবশেষে শনিবার সাহেদ কান্ডের বিষয়ে এক সাক্ষাতকারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। অনেকটা অসুস্থ্য অবস্থাতেই সাহেদকান্ড নিয়ে জানান তার সুস্পষ্ট বক্তব্য।
প্রথমেই মহাপ্রতারক সাহেদের সাথে চেনা পরিচয় আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আলফা বলেন, ‘রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনিনা বা জানিনা। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়া সাহেদকে কখনো আমি চোখে দেখিনি কিংবা তার সাথে কখনো আমার যোগাযোগ হয়নি। এমনকি কখনও মোবাইল ফোনেও সাহেদের সাথে আমার কথা হয়নি’।
সাহেদের আশ্রয়দাতা ও সহায়তাকারী হিসেবে গণমাধ্যমে যেসব অভিযোগ আসছে সেবিষয়ে জানতে চাইলে আলফা বলেন, ‘সাহেদকে যেহেতু আমি চিনিনা কিংবা কখনো তার সাথে যোগাযোগ হয়নি, সেহেতু তাকে আশ্রয় দেয়া কিংবা পালাতে সহযোগীতা করার প্রশ্নই আসেনা।
তাছাড়া মহামারী করোনা ভাইরাস নিয়ে যে মানুষটি দেশ ও জনগনের সাথে প্রতারণা করছে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে সেই প্রতারক সাহেদকে আমি অন্তত কখনো আশ্রয় দেবোনা বা সহযোগীতা করবোনা’।
সাহেদের সাথে তার কোন আর্থিক চুক্তি হয়েছিলো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাকে চিনিনা বা জানিনা তার সাথে আমার চুক্তিইবা হবে কিভাবে? এটি সম্পূর্ন কাল্পনিক তথ্য।
তাহলে কেনইবা সাহেদকান্ডে তাকে জড়িয়ে খবর প্রকাশিত হচ্ছে জানতে চাইলে আলফা বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে আমি ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানী রপ্তানীর ব্যবসা করছি। আমার মালিকানাধীন মেসার্স আশিক এন্টার প্রাইজ এবং আমার দুই ছেলের মেসার্স জান্নাত এন্টার প্রাইজ ও মেসার্স মুক্তা এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আমি ও আমার পরিবার নিয়মিত সরকারকে কর প্রদান করি এবং আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে শীর্ষ করদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্যবসা কেন্দ্রিক আমার প্রতিপক্ষ রয়েছে। পরবর্তীতে আমি সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হই। সেখানেও নির্বাচন কেন্দ্রিক আমার প্রতিপক্ষ রয়েছে।
এছাড়া আমাদের মালিকানাধীন মৎস্য ঘের ও অন্যান্য বৈধ ব্যবসা নিয়েও আমার এলাকায় প্রতিপক্ষ রয়েছে। তারা সাহেদকান্ডে আমাকে ফাঁসাতে নানাভাবে অপচেস্টা চালাচ্ছে। মুলত এসকল প্রতিপক্ষরাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্য দিয়ে আমাকে হয়রানীর আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এরপর আইন শৃঙ্খলা বাহিণীর উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান কিনা জানতে চাইলে আলফা বলেন, দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আইন ব্যবস্থার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি একটি কথাই বলবো যে ‘সাহেদকান্ডে আমি জড়িত নই, আমার প্রতিপক্ষরা আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে’।
এলিট ফোর্স র্যাব, ডিবিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সবিনয়ে অনুরোধ করবো, ‘আপনারা সাহেদ কান্ডের সুক্ষ তদন্ত করুন। তদন্তে আমার বিরুদ্ধে সাহেদকে বিন্দুমাত্র সহযোগীতা করার কিংবা তার সাথে সম্পৃক্ততার কোন অভিযোগের সত্যতা পেলে আমাকে যে সাজা দেয়া হবে আমি তা মাথা পেতে নিবো।
পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আলফা বলেন, আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকৃত সত্যটি তুলে ধরবেন এটিই প্রত্যাশা। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত শেষ হওয়ার আগে স্পর্শকাতর ও দেশব্যাপী আলোচিত চাঞ্চল্যকর এমন একটি ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হয় এমন ধরনের সংবাদ পরিবেশন না করার জন্যও গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান আল ফেরদাউস আলফা।