বাগেরহাট অফিসঃ বাগেরহাটের শরণখোলায় সাকার ফিশ। এই মাছটি আমাদের দেশে বিরল প্রজাতির। এর ডোরাকটা শরীরের ওপরের অংশ কচ্ছপের খোলসের মতো শক্ত এবং ধারালো কাটাযুক্ত। বুকের দিকটা কুমিরের মতো দেখতে। পিঠের ওপরে ও ঘাড়ের দুই পাশে রয়েছে বড় তিনটি কাটা। সাঁতার কাটার জন্য বুকের দুই পাশে রয়েছে দুটি ফুলকা। মাথা- মুখ কিছুটা হাঙর আকৃতির। থুতনির নিচে ছোট্ট তুলতুলে দুটি দাঁড়িও আছে। তবে মুখের ভেতরে কোনো দাঁত নেই। বাগেরহাটের শরণখোলার ধান পাতা বুচনায় ধরা পড়েছে এমন একটি দৃষ্টিনন্দন ও বিরল প্রজাতির মাছ।
উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের আল মামুন নামের এক কনফেকশনারী ব্যবসায়ী মাছ ধরার জন্য বাড়ির পেছনের ধান বুচনা (বাঁশের তৈরী মাছ ধরা ফাঁদ) পেতে রাখেন। তার ওই বুচনায় অন্যান্য মাছের সঙ্গে ধরা পড়ে ওই সাকার ফিশটি। লেজসহ মাছটি প্রায় দেড়ফুট লম্বা। বর্তমানে মাছটি তার দোকানে একটি একটি বড় সিলভারের গামলায় জিয়িয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিদিন বহু মানুষ তার দোকানে ভিড় করছে বিরল এই মাছটি দেখার জন্য। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছটির নাম ‘নাস সাকার ফিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম । এটি একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ক্যাট ফিশ প্রজাতির মাছ। সাকার ফিশ সাধারণত ব্রাজিলের আমাজন নদীর অববাহিকায় ও পাওয়া যায়।
এটি একটি শান্তি প্রিয় অ্যাকোরিয়াম মাছ। তৃণভোজী এই মাছটি বাংলাদেশে বিরল প্রজাতির এবং কোনো ক্ষতিকর নয় বলে জানা গেছে। জানা যায়, সাকার ফিশকে ক্যাট ফিশও বলা হয়। এটি অ্যাকোরিয়াম পরিষ্কার রাখে। এই মাছ শিকারি নয়, এমনকি অন্যান্য মাছের বর্জ্য বা মলও খায়না এরা। অ্যাকোরিয়ামে শ্যাওলা জমলে অন্য মাছ তা পরিষ্কার করতে পারে না। কিন্তু সাকার ফিশের শরীরের শক্ত আঁশ এবং কাটায় তা পরিষ্কার হয়ে যায়। ব্যবসায়ী আল মামুন জানান, এই মাছ তিনি এর আগে কখনো দেখেননি।
দেখতে খুব সুন্দর তাই মাছটি না মেরে দোকানে একটি বড় গামলায় রেখে দিয়েছেন। ভাত, বন খাচ্ছে মাছটি। প্রতিদিন অনেক মানুষ আসছে মাছটি দেখার জন্য। এতে ভালোই লাগছে তার। তাই চিন্তা করেছেন, একটি কাচের অ্যাকোরিয়াম বানিয়ে তাতে রেখে দেবেন মাছটি। শরণখোলা উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, সাকার ফিশ একটি শান্তি প্রিয় অ্যাকোরিয়াম মাছ। এটি আমাদের দেশে বিরল হলেও গত কয়েক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকার নদ-নদী ও উন্মুক্ত জলাশয়ে জেলের জালে এবং মাছধরা ফাঁদে মাছটি ধরা পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাগেরহাটের এই অঞ্চলে এর আগে পাওয়া গেছে কিনা তা জানা যায়নি।মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, সাকার ফিশ ব্রাজিলের আমাজন, পেরআমেরিকাতে ব্যাপক পরিমানে পাওয়া যায়। এটি মিঠা পানির মাছ। এটি ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এলজি ও মাইক্রোঅর্গাজম এর প্রধান খাদ্য। বিদেশি বিভিন্ন আর্টিকেল ঘেঁটে এই মাছের তেমন ক্ষতির দিক পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশে এই সাকার ফিশ নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। গবেষণা হলে এই মাছটি সম্পর্কে আরো নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে।