ভিক্ষুক হানিফের বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম

মুক্তাগাছা থেকে মাহমুদুল হাসান রাজিব: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ভিক্ষুক হানিফ
চিকিৎসা ব্যায়ভার বহন করছে ভিক্ষা করে। প্রতিদিন চিকিৎসা খরচ ৬৮০ টাকা। ভিক্ষুক
হানিফের বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রামে প্রতিদিন তাকে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াতে
হচ্ছে। চিকিৎসায় কোন সুফল পাচ্ছে না। হানিফ মিয়ার পা এখন তার জীবনের বোঝা হয়ে
দাঁড়িয়েছে। যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে পা কেটে ফেলা ছাড়া আর কোন গতান্তর নেই। গত
ঈদুল আযহার চাঁদের রাতে মুক্তাগাছা বড় মসজিদ মার্কেটের সামনে পৌরসভার ড্রেনের ¯øাভের
উপর অসুুস্থ্য ভিক্ষুক বাবার থোরা বালিশ বানিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন ৭ বছর বয়সী এক শিশু।

তা দেখে ভিক্ষুক হানিফের কাছে তার শিশু সন্তানের বিষয়ে কিছু তথ্য পাওয়ার পর অনুসন্ধান করে
জানাযায়, মুক্তাগাছার ৭ নং ঘোঘা ইউনিয়নের পারুলীতলা গ্রামে জুনাব আলীর ছেলে মোঃ
হানিফ মিয়া (৩৫) গত ২০১৩ সালে পাকা ইটের পিলার পায়ের উপর পড়ে হাড় ভেঙ্গে যায়। তাই
বিগত ৭ বছর যাবৎ হানিফ মিয়া ভিক্ষা করে চিকিৎসার খরচ মিটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
পরবর্তীতে ভিক্ষুক হানিফের বাড়িতে গিয়ে কথা হলে তিনি জানান, গত ২০১৩ সালে আমার
পায়ের উপর পাকা ইটের পিলার পরে আমার পা ভেঙ্গে যায়। এই পা এখন আমার জীবনের কাল হয়ে
দাঁড়িয়েছে। এ বোঝা আমি আর সইতে পারছি না।

আমার এ পা টা একটু কেটে দেন বলেকাঁদতে কাঁদতে হানিফ আরও বলেন, আমার একটি মেয়ে আছে                                                                                                                                                                                                                                এখন বর্তমান বয়স ১৩ বছরএবং ছেলের বয়স ৭ বছর। আমার যখন পা ভাঙল আমি ময়মনসিংহ                                                                                                                                                                                                                                 মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় আমার স্ত্রী আমাকে ও বাচ্চাটাকে ফেলে চলে যায়। আমার বাবা মারা গেছে।
আমার মাও বৃদ্ধ হয়ে গেছে সেইসাথে মাও প্রতিবন্ধী। আমার মা আমার ছেলেকে রাখতে পারে
না তাই আমার ছেলেটাকে আমার সাথেই রাখতে হয়।

চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে হানিফ মিয়া বলেন, আমার পায়ের ভেতরে ২১ টা রড লাগানো
আছে। যা প্রতিদিন ড্রেসিং করতে হয় যার খরচ প্রতিদিন ২০০ টাকা ও ৪৮০ টাকার ঔষধ খেতে
হয় আমাকে। আমার পায়ের একটি স্থানে গর্তে পরিণত হয়েছে যা এখনও শুকাইনি। ডাক্তারের
কাছে জানতে চাইলে বলেন, পায়ের ভেতরে সম্পূর্ণ পঁচে পূজ হয়ে গিয়েছে। তাই আমি
আমার পা কেটে ফেলতে চাই।

সরকারী সাহায্য সহযোগিতার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর
থেকে গত ১৮/১০/২০১৮ ইং তারিখে আমাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দেওয়া হয়। কিন্তু
এখন পর্যন্ত আমি কোন টাকা পয়সা পাইনি। আমি মেম্বার, চেয়ারম্যানসহ অনেক জায়গায়
গিয়েছি সকলেই শুধু আমাকে বলে দিবে কিন্তু কেউ কোন সাহায্য সহযোগিতা করল না
আমাকে। ২০/২৫ বছর আগে একটি ঘর তা এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গিয়েছে।
সর্বশেষ হানিফ মিয়া বলেন, সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া আমার পা টা কেটে দেওয়ার
ব্যাবস্থা করে দিন। আমি আর পায়ের বোঝা বইতে পারছি না।