আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের রাজৈরে দু’পক্ষের সংঘর্ষ; আহত অর্ধশতাধিক

ইমন খাঁনঃ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের রাজৈরে দু’পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। গত ১৭ অক্টোবর শনিবার বিকাল ৩টা থেকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। শনিবার ৩টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের মাচ্চর বাজিতপুর গ্রামে এ সংঘরর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘরর্ষে আহতদের রাজৈর, মাদারীপুর সদর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত অর্ধশত
পুলিশ শটগানের সাতটি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ নয়জনকে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল রোববার সকালে রাজৈর থানাপুলিশ বাদী হয়ে নামে ও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৯০০ ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেছে।

পুলিশ জানায়, পূর্বশত্রুতা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের মাচ্চর বাজিতপুর গ্রামের বিবদমান দু’পক্ষ ওবায়দুর রহমান সান্টু খালাশী ও গাউস শেখের মধ্যে শুক্রবার জুমার নামাজের পর কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে গাউস শেখকে মসজিদ থেকে বের করে মারধর করা হয়। এ ঘটনার জেরে শনিবার ৩টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত দু’পক্ষের লোকজন ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় দু’পক্ষের সঙ্গে এলাকার আরও কয়েকটি বংশের লোকজন যুক্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আট ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।

গুরুতর আহত মোতালেব খালাশী, আবু খালাশী, আরিফ বয়াতি, হবি খালাশী, মতিউর খালাশী, শামীম হোসেন, সজল খালাশী, জাহাঙ্গীর বয়াতি, বিলাল খালাশী, শহিদ তালুকদার, ইব্রাহিম খান, জাহিদ খান, গাফফার খান, সামাদ খান, রিপন খান, নান্নু খালাশী, অনিক খান ও শাহাদাত খানকে রাজৈর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাতটি শটগানের ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ঘটনাস্থল থেকে নয়জন গ্রেপ্তার হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত।

রাজৈর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ সাদি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ৮৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৯০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে।

গাউস শেখের ভাইয়ের স্ত্রী তাসলিমা বেগম অভিযোগ করেন, তাদের ওপর সান্টু খালাশীর লোকজন ইচ্ছা করে আক্রমণ করেছে। তারা তার ভাশুরকে নামাজ পড়তে যাওয়ায় মারধর করেছে। আবার তারাই প্রায় ৮০টি ঢাল নিয়ে তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। মকবুল সর্দারের দোকান ভাঙচুর করে মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে।

জানা যায় মকবুল সরদার কোন পক্ষের লোক না। তার দোকান ভাংচুর ও লুট করার প্রেক্ষিতে তিনি ১৮/১০/২০২০ তারিখ দুপুর ২টার দিকে ১৩জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামী করে রাজৈর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন,ওবায়দুর রহমান সান্টু খালাসীর হুকুমে তার দল-বল ঘরে রাখা নগদ ১ লক্ষ টাকা,স্বর্ণালঙ্কার, টিভি,ফ্রিজ,মোবাইল,ইজি বাইকের ব্যাটারিসহ ৫লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নেয়। মামলার আসামীরা হলেন-১.আনোয়ার খালাসী-(৫২) ২.রেগাত  খালাসী- (৪৫) ৩.আলী খালাসী-(৩৫) সর্ব পিতাঃ আলম খালাসী ৪.মেরাজ খালাসী-(৩৫) ৫.সজল খালাসী-(২৮) উভয় পিতাঃ রহ্নান খালাসী ৬.বাবু ঢালী-(২৮) পিতা মৃতঃ ছিদ্দিক আলী ৭.অনিক খালাসী-(২৮) পিতাঃ হবী খালাসী ৮.কবির খালাসী-(২৮) পিতাঃ মোতালেব খালাসী ৯.শাহনাল ওরফে সজিব খালাসী পিতাঃ জিন্নাত খালাসী ১০.শাকিল খালাসী পিতাঃ আং রহিম খালাসী ১১.আং রহিম খালাসী পিতাঃ হারুন খালাসী ১২.সরো খালাসী পিতাঃ রশিদ খালাসী ১৩.ওবায়দুর রহমান সান্টু খালাসী-(৪৫) পিতাঃ মৃত কাদের খালাসী।

মকবুল সরদারের বাড়ি ঘরে হামলার সময় উনি অসহায় হয়ে ঢাকায় এক সাংবাদিককে ফোন দিয়ে বলে যে আমাদের বাচান আসামীরা আমার সব শেষ করে দিচ্ছে আমাদেরকেও প্রানে মেরে ফেলার জন্য খুজতেছে। তখন ঐ সাংবাদিক মাদারিপুর জেলা প্রশাসক ডাঃ রহিমা খাতুনকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাইলে জেলা প্রশাসক সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার,র‌্যাব,দাঙ্গা পুলিশ ঘঠনাস্থলে পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই বিষয়টি উনি কঠোরভাবে দেখবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।