মুক্তাগাছার প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চলে মাদক সিন্ডিকেটের বিস্তার লাভ অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির আশঙ্কা।

ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার শেষপ্রান্তে মধুপুর ও জামালপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় দুল্লা ইউনিয়নের পশ্চিমাংশে বিস্তীর্ণ এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। ছড়িয়ে পরেছে মাদকের ব্যাপকতা। এতে যুব সমাজ বিপথগামী হচ্ছে অন্যদিকে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৩ জেলার ৩ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ ঘাটি হিসেবে প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলটি তাদের নিরাপদ স্থান।

ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ও জামালপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা প্রত্যন্ত পাহাড়ী অঞ্চল নটাকুড়ি, ভদ্রেরবাইদ, বিন্নাকুড়ি, লাল মাটিয়া, শুকুর কড়া, বন্দ চিতুলিয়া, শুলাকুড়াসহ প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় একছত্রভাবে মাদক ব্যবসা করে আসছে একটি
সিন্ডিকেট। বটগাছিয়া এলাকায় এদের সিন্ডিকেট হেডকোটার হিসেবে ব্যবহার করে এখান থেকেই পরিচালিত হয়ে আসছিল তাদের মাদকের ব্যবসা। এই ব্যবসার রিং লিডার হিসেবে পরিচিত নাম বেরিয়ে আসে আব্দুল মজিদের পুত্র লাল চাঁনের নাম।

বটগাছিয়া ও লাল মাটিয়া এমন একটি জায়গা বর্ষা মৌসুমে অত্র এলাকায় চলাচল খুবই দুরহ ব্যাপার। পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায়ে সেখানে যাতায়াত খুবই দুষ্কর। পুলিশ প্রশাসনসহ অন্যান্য কোন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে তড়িৎ গতিতে সেখানে পৌছানো খুবই কষ্টকর। তাছাড়া এদের নিজস্ব সোর্স দ্বারা প্রশাসনের গতিবিধির উপর লক্ষ্য রেখে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যার দরুন অপরাধীরা এবং মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের অভয়ারণ্য হিসেবে অত্র এলাকায় নির্দিধায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি মুক্তাগাছা ২য় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বটগাছিয়া লাল চাঁনের দোকান থেকে ইয়াবা, মদ, গাজা ও যৌন উত্তেজক ঔষধ উদ্ধার করে এবং লাল চাঁনকে গ্রেফতার করে বলে এলাকাবাসী প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ লাল চাঁনকে জেল হাজতে পাঠায়। এর পরই লাল চাঁন সিন্ডিকেটের মাদক ব্যবসার বিভিন্ন তথ্য জন মনে প্রকাশ হতে শুরু করে। সিন্ডিকেটের ভয়ে কেউ প্রকাশ্য মুখ খুলতে নারাজ। এ ব্যাপারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান কালে বেড়িয়ে আসে মাদক সিন্ডিকেট বিস্তারের বিভিন্ন তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, লাল চাঁনের অন্যতম সহযোগী বটগাছিয়ার হেলাল উদ্দিনের পুত্র শফিক তার ডান হস্ত হিসেবে কাজ করে আসছে। শফিকের সাথে তার কাজের সহায়তা করে আসছে লাল চাঁনের পুত্র আনোয়ার হোসেন (আনার)।

অন্যদিকে লাল মাটিয়া এলাকার রাজ মামুদের পুত্র আব্দুর রশিদ, পশ্চিম চন্ডিমন্ডব সুলতানের মোড় এলাকার আব্দুছ সালামের পুত্র সুমন, গজিয়া এলাকার আব্দুর রহিমের পুত্র মিলন, নালিখালি এলাকার তাজেলের পুত্র মানিক, কাচারি ঘাট এলাকার আরজু মিয়ার পুত্র সোহাগ, গুচ্ছ গ্রামের শামছুল হকের পুত্র নয়ন, জয়নালের পুত্র হেকিম ও মজনু, সুরুজের পুত্র মানিক এ সিন্ডিকেটে থেকে মাদক সেবন ও ব্যবসা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে নালিখালির গুত্তা সাংমা (উপজাতি) প্রকাশ্যে মদ বিক্রি করে যাচ্ছে। লাল চাঁন গ্রেফতার হওয়ার পর তার পুত্র আনোয়ার পলাতক রয়েছে তবে শফিক লাল চাঁনকে ছাড়িয়ে আনতে বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে যাচ্ছে। মুক্তাগাছা ২য় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অভিযানের পর এলাকার সিন্ডিকেটের নাম জনমুখে আস্তে আস্তে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। এ ব্যাপারে র‌্যাব, ডিবিসহ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক দতন্ত করে মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানিয়েছে এলাকার নিরীহ মানুষ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।