দেওয়ানগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ ময়মনসিংহ বিভাগের একমাত্র চিনি শিল্প সীমান্তবর্তী জেলা জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার জিল বাংলা সিগার মিল । ১৯৫৮ সালে পাকিস্থান ও নিউজিল্যান্ড সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এই সুগারমিল টি গড়ে উঠেছিল । স্থাপনকালে এর নাম ছিল জিল পাক সুগার মিলস লিমিটেড । স্বাধীনতার পরে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে জিল বাংলা সুগার মিল রাখা হয় ।
দেশের পূর্বাঞ্চলের ভেতর এটি একমাত্র একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান । এই মিলটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের একটি প্রতিষ্ঠান ।
বর্তমানে মিলটি তে কর্মকর্তা আছেন ৩৬ জন আর শ্রমিক কর্মচারি ৯০০ জন । প্রতিমাসে বেতন দিতে হয় প্রায় ৯১ লাখ ৭১ হাজার টাকা । তিন মাসের বকেয়া বেতন জমে আছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকার মত। এই মিলের আখঁ মারাই ক্ষমতা ৭০৬৯০ মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ৫১৫৩ মেট্রিকটন । বর্তমানে মিলটিতে অবিক্রীত চিনি আছে ২০৬৭ মেট্রিকটন যার মূল্য ১২ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার টাকা । প্রতি কেজি চিনি উৎপাদন খরচ ১৮২ টাকা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে ।
যথাযথ তদারকির অভাব চাষীদের প্রতি অবহেলা কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতিতে দিন দিন এই শিল্প আজ ধংশের মুখোমুখি ।প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত মোট ৬২ টি মাড়াই মৌসুমে মাত্র ১৮ বার লাভের মুখ দেখেছিল বাকি সব মৌসুমে লোকসান দিয়েছে । ।বরাবরের মত এবারো মিল লোস দিয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার মত ।
সংস্লিষ্টদের সাথে কথাবলে জানা যায় মিলটির বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ নানা কারনে মিলটি আজ ধংসের দ্বারপ্রান্তে। আঁখ চাষীদের নানা হয়রানি ভালোমানের বীজ সারের অভাব । আঁখের মুল্য পরিশোধে মাসের পর মাস বিলম্ব । চাষীরা যথাসময়ে আঁখ মিলে সরবরাহ করতে চাইলে মিল নানা কারনে তা নিতে অপারগ হয় ।
চরাঞ্চলের বালু মাটিতে আখ দ্রুত মারা যায় সে সময় মিল অনেকটাই নিরব ভূমিকা পালন করে । এসব নানা হয়রানির কারনে অনেক চাষী আঁখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ।
কয়েকজন আঁখ চাষী আক্ষেপ করে বলেন মিল আমাদের সাথে সব সময় আমানবিক আচরন করে আমাদের নানাভাবে ঠকায় । মিলে আঁখ দেওয়ার ৬ মাস পরেও টাকা পাওয়া যায় না । টাকার জন্য মাসের পর মাস মিলে ঘুরতে হয় । গত মৌসুমে মিলে আঁখ সরবরাহ করার ৬ মাস পরেও আঁখের মূল্য পাওয়া যায়নি । বছরে এক ফসল এই আঁখ আসতে বছর পার হয়ে যায় অথচ অন্য ফসল ৩ টি আসে ।
বাহাদুরাবাদ সাবজন বি এর আখ চাষী আবুল কালাম আজাদের অভিযোগ মিল চাষীদের ব্যাপারে উদাসীন , চাষীদের কিসে ভালো কিসে মন্দ মিল তা দেখে না । আমি নিজে কয়েকবার মিল থেকে বড় আশাকরে বীজ নিয়ে রোপন করেছিলাম কিন্ত ভালো ফলন হয়নি সময় মত সার পাওয়া যায় না উচ্চহারে মূল্য রাখাহয় । এসব চলতে থাকলে মিল কিভাবে টিকে থাকবে ? সর্দারপাড়ার এক চাষী বলেন গতবার মিলে আঁখ দিয়ে সঠিক মুল্য রিসিট পাইনি । পরে আমি বুঝতে পেরে যথাযথ মাধ্যমকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা ব্যবস্থা নেয় আমি পরবর্তীতে সে টাকা ফেরত পেয়েছি । যারা লেখাপড়া জানেনা তাদের সাথে আখের ওজন নিয়ে নানাবিধ প্রতারণা করা হয় ।
চর ভাটীর আঁখচাষী তোতা মিয়া জানান চারধাপের বন্যায় চার পাঁচ বিঘা মাটির আঁখ বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে কিন্ত মিল থেকে কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি । চাষী কল্যাণ সমিতি নামে চাষীদের একটি সংগঠন থাকলেও চাষীদের দাবী দাওয়া নিয়ে যাদের কাজ করার কথা তারা আমাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কোন কথাই বলে না ।
মিলের নানাবিধ সমস্যার কারনে অনেক চাষী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে আঁখের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষাবাদ করছে । এতে করে এ বছর মিলের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না
আখের অভাবে অনেক আগেই মিল বন্ধ হয়ে যাবে ।
শ্রমিক কর্মচারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রায়হান জানান মিল নিয়ে আমরা খুব চিন্তিত । নানাবিধ সমস্যায় দিন দিন মিল আজ এই অবস্থায় দাড়িয়েছে শ্রমিকদের বেতন বাকি কয়েক মাস থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা । মিলের আভ্যন্তরিন সমস্যার সমাধান না হলে সামনে অন্ধকার ।
জিল বাংলা সুগার মিলের মহা ব্যাবস্থাপক ( কৃষি ) মো: মজিবুর রহমান জানান যমুনা পূর্ব পারের একমাত্র ভারী শিল্প এই সুগার মিল শুধু চিনি দিয়ে এই মিলকে লাভজনক করা যাবেনা ডিষ্টিলারি করার দাবী জানান তিনি । অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে চিনি উৎপাদন বাড়িয়ে লোকসান কমানো
সম্ভব ।
জিলবাংলা সুগার মিলের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ আলী বলেন আমাদের মিলের অবস্থা অন্য মিলের চেয়ে অনেক ভালো কিছু আভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে এসব কারনে চাষীরা কিছুটা হতাশ এসব সমস্যা মুকাবিলা করতে পারলে আগামী দিন মিলের উন্নতি হবে আশা করি।