চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করলেন । প্রথম দিনেই নির্বাচনী আমেজ জমে ওঠেছে নগরী জুড়ে।
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতেই চট্টগ্রামকে স্বচ্ছ ও স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম. রেজাউল করিম চৌধুরী।
অন্যদিকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন।
আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়সীমা মেনেই শুক্রবার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীর বহদ্দার বাড়ি জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে পিতা–মাতার কবর জেয়ারতের মাধ্যমে শুরু করেন তার নির্বাচনী প্রচারণা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এসময় সেখানে প্রতীক ও ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
প্রচারণার শুরুতে চট্টগ্রামকে একটি স্বচ্ছ ও স্মার্ট সিটি গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদানে চট্টগ্রাম এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রাকে অধিকতর মসৃণ ও গতিশীল করতে দলীয় প্রতীক নৌকায় ভোট চাই।
তিনি বলেন– পাহাড়, সমতল, সাগর, নদীর অপূর্ব সমাহারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অর্থনীতির অপার সম্ভাবনাকে জননেত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ মূল্যায়ন করেছেন। আর কেউ চট্টগ্রামকে সেভাবে মূল্যায়ন করেননি কিংবা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণের শক্তি ও মতামতকে পাথেয় করে চট্টগ্রামকে সত্যিকারের স্বচ্ছ ও স্মার্ট হিসাবে গড়ে তুলব।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল।
নেতাকর্মীদের নিয়ে হযরত শাহ আমানত (রহ) এর মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে জুমার পর আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রচারণার শুরুতে তিনি ভোটের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানান এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
এসময় ডা. শাহাদাত বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে একটি হেলদি ও হাইটেক সিটিতে পরিণত করার লক্ষ্যে কাজ করবেন।
নগরবাসীর শাসক নয়, সেবক হতে চান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়িয়ে তা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে। প্রাকৃতিক সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে এই চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তোলা হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্করসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক এসময় উপস্থিত ছিলেন। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল সহকারী বিভিন্ন এলাকায় গণ সংযোগ করেন।
দুই প্রধান মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি অন্যান্য মেয়র প্রার্থী, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাও স্ব স্ব এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান রূপান্তরকে জানান, প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ টায় পর্যন্ত একটানা প্রচারণা চালাতে পারবেন। প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণ বিধি পালনে কঠোর মনিটরিং এর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ মার্চ। কিন্তু কভিড–১৯ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ায় ২১ মার্চ নির্বাচন স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দশ মাস পর আগামী ২৭ জানুয়ারি এ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচন কমিশন। ৭ জন মেয়র প্রার্থী ও ২৩৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।