খুলনাতে শান্তিতে নাই চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা

খুলনার রূপসা উপজেলার গোয়ালবাড়ির চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ২৩ বছর পার হলেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি ভূমিহীন ও অসহায় এই মানুষগুলির। বর্তমানে জরাজীর্ন ঘরগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয় কেন্দ্রটি ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে মোট ব্র্যাক আছে ১৮টি। প্রতিটি ব্র্যাকে ১০টি করে ঘর আছে। ২০০২ সালে ১টি ব্র্যাক আগুনে পুড়ে যায়। সেই ১০টি পরিবার গৃহহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। তবে গোয়ালবাড়ির চর আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরির কয়েক যুগ পার হলেও শুধুমাত্র টিনের বেড়া টিনেরচালা দ্বারা ১৮টি ব্রাক, ৬টি ঘাটাল বিহীন পুকুর ২টি সাইকোন শেল্টার ছাড়া অন্য কোনা উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি।
কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারনে আজও তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। টিনের ছাউনিগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে দেখলে মনে হয় মাছ ধরা জালের ন্যায় ছিদ্র ছিদ্র। বৃষ্টির পানি পড়ে নষ্ট হচ্ছে আসবাবপত্র। কোন স্কুল না থাকায় স্কুল পড়ুয়া শিার্থীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন হচ্ছে। অতি সহজে ঝুকে যাচ্ছে মাদকের দিকে। গোয়ালবাড়ির চর আশ্রয় প্রকল্পে একটি সমবায় সমিতি আছে।
তিন বছর পর পর বৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে সমিতির নেতৃবৃন্দ নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে বহিরাগতদের নির্বাচিত করে অবৈধভাবে আশ্রয়নের উপার্জিত অর্থ লুটপাট করে খাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু নেতারা। কেউ কেউ প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা অনেককে তাড়িয়ে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে নিজের মনোপুত ব্যক্তিকে ঠাঁই দিয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্পে। তাদের জন্য পাকা রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও আজও পর্যন্ত উন্নয়নের নাগাল পাইনি ছিন্নমুল অবহেলিত মানুষগুলো।
অপরদিকে, আশ্রয়নের নেতৃবৃন্দরা পুকুরের মাছ, নদীর পাড়ের মাটি, নতুন সদস্যদের নিকট থেকে অবৈধ চাঁদাসহ নানাবিধ অপরাধ কর্মকান্ড করে মালিক হয়েছে লাখ টাকার। তারা এখন জমি ক্রয় করে অন্য জায়গায় বসবাস করলেও আশ্রায়নে লোভনীয় নেতৃত্বের কথা ভুলতে পারেনি।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে একজন বাসিন্দা, সাবেক সভাপতি, বর্তমান আহ্বায়ক মুন্সি আহম্মাদ আলী জানান, সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এবং আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ এর মাধ্যমে ভূমিহীন ও অসহায়দের পাকা গৃহ, পাকা বাথরুম নির্মাণ করে দিচ্ছে এতে আমরা ঈর্ষান্বিত নই কিন্তু আশ্রয়ন প্রকল্প-১ এর বসবাসকারী আমরা পরীতি ও প্রমাণিত ভূমিহীন হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ভাগ্যের এখনও কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা আশ্রয়নবাসী মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমি গোয়ালবাড়ির চর আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এই ব্রাক গুলোর দ্রুত সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার জনপ্রতিনিধিত্ব করার পাঁচ বছর পূর্ণ হতে চলেছে আজ পর্যন্ত আশ্রায়নে বসবাসকারীদের জন্য আলাদা ভাবে সরকারি কোন বরাদ্দ পাইনি।
৫নং ঘাটভোগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাধন অধিকারী জানান, ইউপি সদস্যের বক্তব্যের সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত তবে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ থেকে আমার অংশ বন্টনের সময় অন্যান্য এলাকার চেয়ে আশ্রায়নবাসিদের বেশি দিয়েছি।
উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার ব্যনার্জি জানান, ঘটনা সত্য কিন্তু ২ বছর পুর্বে আমি আশ্রায়নে বিদ্যুৎ লাইনের ব্যবস্থা করেছি। আশ্রায়নের নেতারা সহযোগীতা না করার কারণে আশ্রায়নের উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার জানান, আশ্রয়ন প্রকল্পের উন্নয়নের জন্য ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী খুব দ্রুতই আশ্রয়ন বাসীর উন্নয়ন করা সম্ভব হবে এবং যারা আশ্রয়ন প্রকল্পের সম্পদ লুটপাট ও বিনষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।