ডেক্স রিপোর্টঃ দীর্ঘ ২০ বছর বন্ধ থাকার পর ২৭ ফেব্রুয়ারি শনিবার আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে বহু কাঙ্ক্ষিত ফেরি সার্ভিস চলাচল শুরু হয়েছে।
ঐদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এসময় অনুষ্ঠানে ছিলেন মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এএম নাঈমুর রহমান দুর্জয়।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই রুটে একটি ফেরি পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু করে।
ফেরিঘাট চালুর খবরে খুশি যমুনা নদীর দুই প্রান্তের লাখো মানুষ। ফেরি চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে ফের ব্যবসা বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়ের উন্নয়ন হবে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
ঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু করতে যমুনা নদীতে নতুন করে চ্যানেল তৈরিতে ১২ লাখ ঘন-মিটার বালু ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে। দুপারের ঘাট-পন্টুন নির্মাণ, বিকন বাতি, মার্কিং বাতিসহ আনুসাঙ্গিক অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি টাকা।
আরিচা ঘাট বণিক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ শেখ জানান, আরিচা ফেরিঘাট এলাকায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ১২০০ দোকান-পাট রয়েছে। এই সময়ে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জমজমাট বেচাকেনা হলেও এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই নাজুক।
কোনো রকমে টিকে রয়েছে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
তবে আরিচায় ফেরি চলাচল শুরু হওয়ায় ফের এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বেচাকেনা বাড়বে বলে জানান তিনি।বিআইডব্লিউটিসি আরিচা এরিয়া অফিসের (মেরিন বিভাগ) এজিএম আব্দুস সাত্তার জানান, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু করেছে।
এদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে ফেরি চলাচল শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, বিআইডব্লিউটিসি এবং বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিল বলে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে বছর দুয়েক আগে ফেরি চলাচল চালু করার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।তবে এবার তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের মত আর বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের( বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক জানান, আগে ড্রেজিং সক্ষমতা ভালো না থাকায় ফেরি চলাচলের উদ্যোগ নেওয়ার পরও তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিআইডব্লিউটিএ এর এখন ৪৫টি ড্রেজার রয়েছে। এখন ড্রেজিং সক্ষমতা ভালো। কাজেই নাব্য সংকটের অজুহাতে এখন ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
১৯৬৩ সালের ৩১ মার্চ কর্ণফুলী নামের একটি ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। এরপর ওই নৌরুটে যুক্ত হয়েছিল ছোট বড় মিলে ২৮টি ফেরি। ১৯৯৭ সালে যমুনা সেতু উদ্বোধনের পর গুরুত্ব কমতে থাকে আরিচা ঘাটের। পদ্মা-যমুনার নাব্য সংকট ও দূরত্ব কমানোর জন্য ২০০১ সালের ২২ ফেরুয়ারি আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় স্থানান্তর করা হয় ফেরি সার্ভিস।
সবশেষ ২০০২ সালের ১৫ নভেম্বর আরিচা ঘাট থেকে শেষ দুটি পন্টুন পাটুরিয়া ঘাটে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি চলাচল।
ফেরি উদ্বোধনকালে ঘাটের একটি নামফলকে মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের নাম ও স্থানীয় এমপি মহোদয়ের নাম খোদাই করে লেখা হয়েছে।একই রুটে আরেক প্রান্তের নাম ফলকে শুধু মন্ত্রী মহোদয়ের নাম লেখা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকার জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। চলছে আলোচনা সমালোচনা গুঞ্জণ।এতে প্রশাসন ও রাজনীতির মধ্যে দ্বন্ধের এক অশুভ ইঙ্গিত বহন করছে বলে সুধীসমাজ মনে করছেন।