চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজো কি মিলবে বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্তনাদ দিন দিন বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পেয়ে শংকায় কাটছে দিন। কাটাচ্ছে মানবেতর জীবন-যাপন।
ভারতীয় ট্রেনিং থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি থাকার পরেও অঞ্জাত কারনে স্বীকৃতি না পেয়ে যেন কান্নার রোল পড়েছে এদের মাঝে।

এসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে দাপ্তরিক, প্রশাসনিক, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দাপট অনিয়ম দুর্নীতির কারনেই। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ঘোষণা করলেও তাদের অনেকের ভাগ্যে স্বীকৃতি মিলেনি। আর এ জন্য অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধারা কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের দূর্ণীতির কারণকে দায়ী করেছেন।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই আজো রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি না পেয়ে হাতাশায় মানবেতর জীবন যাপন করে আসছেন তারা। অনেক মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও আঞ্চলিক অন্তর্দ্বন্দ কিংবা কোন অজ্ঞাত কারণে তাদের ভাতা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ কালিন কমান্ডারকেও মানবতা বিরোধী সিদ্ধান্তের স্বীকার হতে হয়েছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি না দেওয়া অপরদিকে স্বীকৃতি পেয়েও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে।

আবার কেউ কেউ অমুক্তিযোদ্ধা হয়েও সরকারীভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভূক্ত হয়ে ভাতা ভোগ করে আসছেন। এমন তালিকায় যুদ্ধকালিন সময়ে পাকিস্থানী বাহিনীর মদদ দাতারও কারো কারো নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়ার কারণে তারা সরকারি ভাতা সুবিধা ভোগ করে আসছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের অনেকে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আজো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি। এ যেন লজ্জার, যেন মানবতা বিরোধী অবস্থান বলে অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধাদের আর্তনাদ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় তথ্য সংগ্রহকালে কথা হয়, বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মর্তুজা, বেনজির আহম্মেদ, মোকবুল হোসেন, একরামুল হক, এনামুল হক, নজরুল ইসলাম, আঃ মতিন, বজলার রহমান, সাদ আক্কাস, বাদরুল ইসলাম, মোস্তাফিকুর রহমানসহ আরো কয়েকজনের সাথে। এই সব বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের জোর দাবি, ইউনিয়ন পর্যায়ে যাচাই বাছাই কার্যক্রম শুরু করলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা তালিকাভূক্ত হবে এবং স্বাধীনতা বিরোধী ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা থেকে বাদ পড়বে।

তবেই স্বচ্ছ, নির্ভেজাল যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরী হবে। ভূয়া ও রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা তৈরী করে তাদের ভাতা প্রদান নিয়মিত করলেই জাতি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে । জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে জাতীয় স্বার্থে উজ্জিবীত হয়ে প্রাণ বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের এই গৌরবগাঁথা জীবনকে স্বর্ণক্ষচিত করে রাখা উচিৎ।

কিন্তু আজো সেটা না করে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারনে মানবিক জীবন যাপন করতে হচ্ছে এই সূর্যসন্তানদেরকে। তাই বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধারা অতিকষ্টে বললেন সরকার বাহাদুর আমাদের স্বীকৃতি দিলে আমাদের এত কষ্ট হতো না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানাই যেন আমাদের স্বীকৃতি দেন তাহলে মরেও শান্তি পাব।