১৬ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধা বৈধতা পাচ্ছেন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা)

রিপোর্ট রুপান্তর বাংলা- সারা দেশে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অনুমোদনহীন ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৩৯২টি উপজেলার ১৬ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেটকে সঠিক বলে সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি।
তাদের তথ্যগুলো জামুকার সদস্যদের নেতৃত্বে অধিকতর যাচাই শেষে তাদের গেজেটের বৈধতা দেওয়া হবে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের খেতাব বাতিলের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক ও মাহবুবুল আলম চাষীসহ এ ধরনের ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে জামুকার গঠিত উপ-কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রোববার অনুষ্ঠিত জামুকার বৈঠকে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামুকার মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল রোববার রাতে রুপান্তর বাংলা- বলেন, দেশের ৪৯১টি উপজেলায় জামুকার অনুমোদনহীন ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে শনাক্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারের নির্দেশে তাদের তথ্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও মহানগর কমিটি যাচাই-বাছাই করেছে।
৪৯১ উপজেলার মধ্যে ৩৯২টির প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। এর মধ্যে ১৬ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেটকে সঠিক বলে সুপারিশ করেছে যাচাই-বাছাই কমিটি। তথ্যগুলো জামুকার সদস্যদের নেতৃত্বে আরও অধিকতর যাচাই শেষে তাদের গেজেটের বৈধতা দেওয়া হবে। অন্যসব উপজেলার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
যাদের ব্যাপারে উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি নেতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে তারা আপিল করার সুযোগ পাবেন। জামুকার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীসহ এ ধরনের ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততার তথ্য সংগ্রহ করতে জামুকার গঠিত উপ-কমিটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই উপ-কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তিযুদ্ধের খেতাব বাতিলের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে সবাই একমত হতে পারেননি। বৈঠকের রেজুলেশনে স্বাক্ষরের পর চূড়ান্ত জানা যাবে।’
জানা গেছে, রোববার সকাল ১১ টায় জামুকার ৭৩তম বৈঠক শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জামুকার চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বৈঠকে জামুকার সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও শহীদুজ্জামান সরকার ছাড়া সব সদস্যই উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২-এর ধারা ৭(ঝ) ব্যত্যয় ঘটিয়ে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ‘বেসামরিক গেজেটে’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, এ ধরনের ৩৯ হাজার ৯৬১ জনের তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। সেই যাচাই-বাছাইয়ের ৩৯২টি উপজেলার প্রতিবেদন বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এসব উপজেলার কমবেশি ১৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার গেজেটের সঠিকতার প্রমাণ মিলেছে উপজেলা কমিটির প্রতিবেদনে। এসব বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেটের বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে জামুকার বৈঠকে জামুকার অনুমোদনহীন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য পুনরায় যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
এছাড়া গত ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জামুকার ৭২তম সভার জিয়াউর রহমানের ‘বীর-উত্তম’ খেতাব বাতিলের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে জামুকার সদস্য প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। জামুকার এই কমিটি জিয়াউর রহমান ছাড়াও ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা খুনি খন্দকার মোশতাক আহমদ, মাহবুবুল আলম চাষীসহ অন্যদের এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়া ব্যক্তিদের (মুক্তিযোদ্ধা) বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করবে। রোববারের জামুকার সভায় ওই কমিটিকে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে জামুকা। এছাড়া বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরীফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়ার বিষয়টি আলোচনা হয়। কিন্তু তাতে উপস্থিত জামুকার বেশিরভাগ সদস্য একমত হলেও কেউ কেউ তাতে সায় দেয়নি বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে ।
দ্রুত প্রতিবেদন চায় জামুকা : উপজেলা পর্যায় থেকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে না পাঠানোয় ক্ষুব্ধ হয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি। রোববার সব জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জামুকা।