নিউজ ডেক্স : করোনা মহামারিতে অসহায় মানুষের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌছানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। পাশাপাশি দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালও চালু করেছে তারা। ২০১৩ সালে চালুর পর থেকেই দুস্থদের পাশে দাঁড়াচ্ছে সংগঠনটি। গত বছর শুরু হওয়া করোনা মহামারিতে তাদের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করে।
বিদ্যানন্দ জানিয়েছে, করোনা মহামারিতে এ পর্যন্ত সাড়ে চার লাখ পরিবারের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিয়েছে তারা। এ সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে রান্না করা খাবার ও ত্রাণসামগ্রী। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পরও বিদ্যানন্দের কার্যক্রম চালু রয়েছে। ১৪ এপ্রিল শুরু হওয়া দেশব্যাপী লকডাউনে শুকনা ও রান্না করা খাবার নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের গরিব-নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। এসব কার্যক্রমে নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও বিদ্যানন্দকে সহযোগিতা করছে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের হেড অব কমিউনিকেশন সালমান খান জানান, প্রতিদিন প্রায় ১৪ হাজার হতদরিদ্র মানুষকে রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে রয়েছে পুরো ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা। প্রতি পরিবারে তিনজন সদস্য ধরে ইফতারের জন্য দেওয়া হচ্ছে খেজুর, শরবত, পেঁয়াজু, চপ, বেগুনি, আপেল ইত্যাদি। রাতের খাবার হিসেবে দেওয়া হচ্ছে সাদা ভাত আর মাংস। এর মধ্যে চট্টগ্রামে প্রতিদিন ছয় হাজার আর ঢাকায় ছয় হাজার পরিবার রান্না করা খাবার পাচ্ছে। এসব খাবার বিদ্যানন্দের রান্নাঘরেই রান্না হচ্ছে। ঢাকায় নিজেদের কর্মীদের মাধ্যমে এবং চট্টগ্রামে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।
সালমান খান জানান, কর্মহীন ও ছিন্নমূল মানুষ অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। তিনি জানান, রংপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং বিজিবির মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে এক লাখ মানুষকে সহযোগিতা করার পরিকল্পনা রয়েছে।
করোনায় কর্মহীন হয়ে যেসব পরিবার দুর্ভোগে পড়েছে তাদের খাদ্যসামগ্রী কিনে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সালমান। সহায়তা প্যাকেজে রয়েছে চাল, ময়দা, মসুর ডাল, চিনি, লবণ ও মসলা।
গত ৩১ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় কোস্টগার্ড চাঁদপুরের রাজরাজেশ্বর, হাইমচরের বাংলাবাজার এবং মুন্সীগঞ্জের মেদিনীমণ্ডল ও কান্দিপাড়া এলাকার ৬০০ দুস্থ পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেছে।
চট্টগ্রামে করোনা হাসপাতাল: চট্টগ্রামে দরিদ্র করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চালু হয়েছে সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহযোগিতায় ৭০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১৩ এপ্রিল উদ্বোধন করা হয়। নগরীর পাহাড়তলীর সাগরিকা রোডে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুতল ভবনে এই হাসপাতাল চালু হয়েছে।
গত বছরের জুলাই মাসে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় পতেঙ্গায় ১০০ শয্যার সিএমপি-বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু অর্থসংকট ও স্থানাভাবে গত বছরের অক্টোবরে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন নতুন হাসপাতাল চালুর জন্য ভবন দিতে সম্মত হয় প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়।
এরপর গত বছরের ২০ নভেম্বর ওই ভবনে ৫০ শয্যার ‘বিদ্যানন্দ মা ও শিশু হাসপাতাল’ যাত্রা শুরু করে। এখন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ায় সেই হাসপাতালটিই কভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য ফিল্ড হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়েছে।
মা ও শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম নগরীর বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প পরিচালনার মাধ্যমে চালু থাকবে বলে বিদ্যানন্দ জানিয়েছে। এই হাসপাতালেই আইসোলেশনে আছেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাশ। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, যতদিন করোনার প্রকোপ থাকবে, ততদিন এই হাসপাতাল চলবে।
সালমান জানিয়েছেন এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অপিজেন সাপোর্ট রয়েছে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ ১০ জন চিকিৎসক, আটজন নার্স ও ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবা, অপিজেন কনসেনট্রেটর ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে।
সালমান খান বলেন, এসব সহযোগিতার পাশাপাশি অ্যাপভিত্তিক বিভিন্ন খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেঁচে যাওয়া খাবার রাজধানীর ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষের কাছে প্রতি রাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, করোনায় সচ্ছল ব্যক্তিরা অনাহারি ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়ালে দেশে কেউ খাদ্যবঞ্চিত থাকবে না।