নিজস্ব প্রতিনিধি : এক সময়ের খরস্রোতা নদী এখন মরা খাল। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে নদী ছিল। গত ৫০ বছর ধরে নদী তীর দখল ও নানা রকম অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে কেরানীগঞ্জের সিংহ নদী এখন অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে।
অবৈধ দখলে দিনে দিনে মরা খালে পরিণত হয়েছে। বিগত চার দশকে নদীর ত্রিশ কিলোমিটার দীর্ঘপথে নদীর দু’পাড় ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে বাড়ি ঘর ও দোকানপাট। এ নদীটি দখল হয়ে যাওয়ায় উপজেলাবাসী মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নদী ক্রমাগত ভরাট করে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন ও মার্কেট। তারা মাঝ নদীতে বালু ভরাট করে নির্মাণ করেছে বহুতল ভবন। এ অপকর্মে জড়িত উপজেলা ভূমি ও রাজস্ব বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। ভূমিদস্যুরা ভুয়া ও জাল কাগজপত্র দেখিয়ে, কেউবা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে, কেউবা কোনো প্রকার কাগজপত্র না দেখিয়েই দখল করে নিয়েছে সিংহ নদী।
অথচ এক সময় লোকজন এই নদী দিয়ে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে যাতায়াত করত। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা রাজেন্দ্রপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই নদীটি ব্যবহার করত। সিংহ নদীটি ধলেশ্বরীর আকশাইল এলাকা দিয়ে বের হয়ে রামেরকান্দা, অগ্রখোলা, শিকারীটোলা ও খাড়াকান্দি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পুনরায় ধলেশ্বরীর সাথে মিশেছে।
অপরদিকে নদীটি রামেরকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেলনা, আকশাইল ও কলাতিয়া হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সাথে মিশেছে। দখলের কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে এখন এ নদীটি মৃতপ্রায়। একসময় এই খরস্রোতা সিংহ নদী দিয়ে শত শত মণের ধান-পাট বোঝাই নৌকা পাল তুলে যাতায়াত করত। সিংহের মতো এই নদীর স্রোতের আওয়াজ ছিল। এ জন্য লোকেরা সিংহ নদী বলে আখ্যায়িত করেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, কালের পরিবর্তনে সিংহ নদী এখন মৃত পরিণত হয়েছে। ছোট সময় দেখিছি এই নদীতে নৌকাবাইচ। তখন বড় বড় নৌকা পাল তুলে চলত। রুহিতপুর, রামেরকান্দা, বাঘাসুর, গোয়ালখালি, বটতলী, পাইনারচর, চান্দেরচর ও নয়াগাঁও এলাকায় নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। ঘরবাড়ি বানিয়ে অনেকে বসবাস করছেন। মার্কেট বানিয়ে ভাড়া অথবা কৃষি জমি বানিয়ে চাষাবাদ করছেন। নদী দখল চলছে ব্যাপক হারে।
মোবারক আলী বলেন, নদীর পাড়ে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। একটি মহল ময়লা ফেলে নদী ভরাট করছে। এসব ময়লা-আবর্জনার গন্ধে আর মশা-মাছিতে আমরা অতিষ্ট হয়ে পড়েছি। নদীটি অবৈধ উচ্ছেদ করা অতি প্রয়োজন। অবৈধ বাড়িঘর উচ্ছেদ মাধ্যমে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, কিছু প্রজেক্ট রয়েছে যা বছর বছর সরকারিভাবে নেয়া হয়। অতি শীঘ্রই সিংহ নদীর অবৈধ দখলের জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে সিংহ নদী তার আগে রূপ ফিরে পায়।