ফেরি ‘বন্ধ-চালু খেলায়’ চরম ভোগান্তিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ

ডেস্ক রিপোর্ট : হঠাৎ করেই ফেরি বন্ধের ঘোষণার খবর না পেয়ে হাজার হাজার যাত্রী শনিবার (৮ মে) ভোরে এসে ভিড় জমায় শিমুলিয়া ঘাটের পদ্মার পাড়ে। অথচ ফেরি ছাড়ছে না। রোদের তাপ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে অস্থিরতা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সাধারণ যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্স ও ছোট গাড়ির সংখ্যাও। ঠিক একই চিত্র শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটেও।

প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যাও এই ঘাটে হাজার হাজার। একই সাথে ভোর থেকেই ঘাট এলাকায় দেখা যায় বেশ কিছু রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স, কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি, রয়েছে পণ্যবাহী ট্রাকও। ভোর থেকে ফেরি ছাড়ার অপেক্ষায় ঘাটের পন্টুনে অপেক্ষা করে হাজার হাজার যাত্রী।

ফেরি ঘাটের রাস্তায় বাড়তে থাকে গাড়ির সিরিয়াল। ফেরি ছাড়বে কিনা তখনও জানা নেই কারো। যাত্রী চাপে সকাল নয়টার দিকে একটি রোরো ফেরি সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। দুপুর ১টার দিকে ফেরিটি শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে নোঙর করে।

এছাড়াও বাংলাবাজার ঘাট থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি কিছু গাড়ি পার করার জন্য একটি ফেরি পন্টুনে প্রস্তুত করলে প্রায় এক হাজার যাত্রী ফেরিটিতে উঠে যায়। পরে ঘাট কর্তৃপক্ষ কিছু যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স পার হবার ব্যবস্থা করে দেয়। কুমিল্লা নামের মিডিয়াম ফেরিটি দুপুরের দিকে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায় বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া আরও জানা যায়, সকাল নয়টার একটি ফেরি ছাড়ার পর যাত্রীদের নিয়ে আরও দুটি ফেরি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসে। তবে কর্তৃপক্ষ জানান, শুধু যাত্রী নয় ছোট গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স থাকায় আরও দুটি ফেরি ছাড়া হয়েছে। এটা বন্ধ থাকলেও জরুরি কিছু গাড়ি  পারাপার করা হয়।

সামনে ঈদ। ফিরতে হবে বাড়ি। বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে বাড়িতে। নতুন জামাকাপড় নিয়ে বাড়ি ফিরবে। এদিকে প্রিয়জনের টানে কংক্রিটের নগরীতে শ্বাস আটকে আসা জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেয়ে ঈদকে সামনে রেখে বাড়ির উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীরা।

বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পদ্মা পার হয়ে আসা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগে পড়ছে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে এসে। বাস বন্ধ, কয়েকটি মাইক্রোবাস রয়েছে। এছাড়া থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্রা ও ইজিবাইক) ও মোটরসাইকেল রয়েছে ঘাটে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা যাত্রীরা ঘাট এলাকায় এসে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পরেছে। মাইক্রোবাসে বরিশালের জন্য নিচ্ছে ১ হাজার করে টাকা আর মোটরসাইকেলে নিচ্ছে ১ হাজার ৫শত টাকা। এছাড়াও দূর পাল্লায় থ্রিহুইলার সাধারণত যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ঘাটে গাড়ির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে।

জাকির নামে এক যাত্রী বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে ভোরে এসেছি। আর দুপুরে এসে পৌছালাম বাংলাবাজার ঘাটে। ফেরি ছাড়বে না ছাড়বে না করে একটা ফেরি ছাড়লো হাজার হাজার যাত্রী নিয়ে। এখন এই পাড়ে এসে তো বাড়ি যাওয়ার গাড়ি পাচ্ছি না। বাস তো বন্ধই। মাইক্রোবাসও নাই। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কিভাবে বাড়ি যাবো জানি না। রোজা রেখে এতো কষ্ট সহ্য করা যায় না।

আনোয়ার নামে এক যাত্রীর কাছে এই মহামারি করোনার সময় কেন ঢাকা না থেকে বাড়ি যাচ্ছেন জানতে চাইলে সে জানান, ভাই মরলে বাড়ি গিয়ে মরি ঢাকা থেকে না খেয়ে মরার চেয়ে ভাল। আর করোনা কি? জীবন যুদ্ধ করেই পাড় পাইনা করোনার সাথে কি যুদ্ধ করবো। এরপর দেখেন ইনকাম নেই, এপার ঢাকা থেকে বাড়ি পৌছাতে মনে হয় ৩ হাজার টাকা শেষ হয়ে যাবে। কি দরকার এসব বন্ধ আর খোলা খেলা খেলে?

নাজমুল মোড়ল নামের পটুয়াখালীর যাত্রী বলেন, ঈদের আগে বাড়ি যেতে হয়। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা আছেন। আজকে পদ্মা পার হতে যে দুর্ভোগ হয়েছে তার এই জীবনে হয় নাই। সরকারি সিদ্ধান্তের কোন কিছুই বুঝি না। ফেরি চলবে না তা একদিন আগেই জানিয়ে দিতো। আবার বন্ধ ঘোষণার পরও তো ফেরি চলেছে। এদিকে মার্কেট খোলা। ঢাকায় গাড়ি চলছে। অথচ দূর পাল্লার পরিবহন বন্ধ। ঘাটে নেমে একশ টাকার ভাড়া পাঁচশত টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া আরো দূরের যাত্রীরা তো গাড়িই পাচ্ছে না।

বাংলাবাজার ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাবাজার ঘাট থেকে কুমিল্লা নামের একটি ফেরি গাড়ি ও যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে শিমুলিয়ার উদ্দেশ্যে। এর পরেই শাহ পরান নামের একটি রোরো ফেরি যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট ছেড়ে যায়।