ময়মনসিংহে র্্যাবের অভিযানে শহরের খাগডহর এলাকায় জঙ্গী সন্দেহে ৪ জন আটক

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি ঃ ময়মনসিংহে র্্যাব-১৪ এর অভিযানে শহরের খাগডহর এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়
থেকে জঙ্গী সন্দেহে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। শনিবার ভোর চার টার ঢোলাদিয়া খাগডহর এলাকার
ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে জঙ্গি সন্দেহে এ চারজনকে আটক
করে। এ সময় র‌্যাবের সাথে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক। এসময় তাদের কাছ থেকে পিস্তল,
গুলিসহ একাধিক দেশী অস্ত্র ও ককটেল উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, ময়মনসিংহের ঢোলাদিয়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় কয়েকজন জঙ্গি অবস্থান করছে। খবর পেয়ে রাতেই র‌্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল অভিযান শুরু করে। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা গুলি ছোড়া শুরু করলে র‌্যাবও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়ে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে। পরে র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করে।

পরবর্তীতে র‌্যাবের এক প্রেস ব্রিফিং-এ বলা হয়, র‍্যাবের অভিযানে ময়মনসিংহের কোতয়ালী থানাধীন খাগডহর এলাকা হতে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বোমা সদৃশ্য বস্তু সহ জেএমবি’র চার জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার। দরজা ভাংগা ও তালা কাটার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ। গ্রেফতারকৃত জঙ্গি জুলহাস @ কাদেরী @ মেহেদী ২০০৫ সালে মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ হতে আলিম পাশ করে। ২০০২ সালে জামালপুরে একটি মাদ্রাসায় দাখিল অধ্যায়ণরত অবস্থায় এক ট্রেইলার মাষ্টারের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। উক্ত টেইলারের দোকানে সে নিয়মিত যাতায়াত করত এবং সেখানে বিভিন্ন উগ্রবাদী ওয়াজ ও গজল শুনত।

অতঃপর মুক্তাগাছা একটি মাদ্রাসায় আলিম অধ্যায়ণরত অবস্থায় সে জেএমবি’তে যুক্ত হয়। সেসময় মুক্তাগাছার একজন আঞ্চলিক নেতার অধীনে সে বায়াত গ্রহণ করে। উক্ত বায়াত গ্রহণে ১০ জন জেএমবি সদস্য অংশগ্রহণ করে। উক্ত ১০ জেএমবি সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা গ্রেফতারও হয়েছে। কেহ কেহ এখনও আত্মগোপনে রয়েছে। বায়াত প্রদানকারী আঞ্চলিক নেতা বাংলা ভাইয়ের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর। উক্ত নেতার মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত জুলহাস এর বাংলা ভাই ও শীর্ষ জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন এর সাথে পরিচয় ঘটে।

বাংলা ভাই ও জঙ্গি নেতা সালাউদ্দিন সালেহীন বিভিন্ন সময়ে ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে অবস্থানকালীন সময়ে বর্ণিত জঙ্গি বিভিন্ন সহায়তা করত। সে ২০০৭ হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় ২ বছর কারা অন্তরীণ ছিল। অতঃপর সে নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও সেখানে শিক্ষকতা শুরু করে। উক্ত মাদ্রাসার দুইজন শিক্ষক জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতা থাকায় গ্রেফতার হয়। তখন সে সম্ভাব্য গ্রেফতার এড়াতে ২০১২ সালে
আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়ে যায়।

সে টাঙ্গাইলে ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় ছদ্মনামে বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদে ইমামতি ও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত থেকে জঙ্গি কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। এসময় সে জঙ্গিবাদ প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে উদ্বৃদ্ধ করণে যুক্ত ছিল। এছাড়া জঙ্গিদের উত্তরবঙ্গ ও ঢাকা গমনাগমনে টাঙ্গাইলে সেল্টার প্রদান করত। পাশাপাশি সে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, বগুড়া ও ময়মনসিংহের জঙ্গিদের গোপন আস্তানার সমন্বয় সাধন করত। এমন কয়েকটি আস্তানায় ইতিপূর্বে র‍্যাব অভিযান পরিচালনা করেছে।

গ্রেফতারকৃত জঙ্গি রোবায়েদ ময়মনসিংহের একটি কলেজ হতে অনার্স সম্পন্ন করে। ময়মনসিংহে অধ্যায়ণরত অবস্থায় এক সহপাঠীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। অতঃপর সে জেএমবি’তে যোগদান করে। ২০১৩ সালে ময়মনসিংহে একটি নাশকতা মামলায় বেশ কয়েকদিন কারা অন্তরীণ ছিল। এছাড়াও সে ২০১৫ সালে ঢাকার একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে ইংরেজীতে এমএ সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে সে কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রামের উপর প্রশিক্ষণ নেয়। সে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও টেকনাফে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত ছিল। সে শিক্ষকের ছদ্মবেশেও উক্ত এলাকা ও প্রতিষ্ঠানে জঙ্গিবাদ প্রচার করত। সে জেএমবি সাইবার দলের সাথে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সে করোনাকালীন সময়ে অনলাইন দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে বেশ কয়েকজনকে জঙ্গিবাদে অন্তভুর্ক্ত ১২।

গ্রেফতারকৃত জঙ্গি আইয়ুব @ খালিদ (৩৬) উত্তরবঙ্গের একটি বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিএসসি (অনার্স) সম্পন্ন করে। ২০১৯ সালে উত্তরবঙ্গের সাইবার দলের প্রধানের মাধ্যমে জেএমবি’তে অন্তর্ভূক্ত হয়। সে উত্তরাঞ্চলের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মধ্যে জেএমবি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। দ্রæততম সময়ে স্বল্প শিক্ষিতদের জেএমবি’তে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে সে পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও নীলফামারিতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক, অটোচালক, টেইলার ইত্যাদি শ্রেণীর পেশাজীবীদের জঙ্গিবাদে অন্তর্ভূক্ত করেছে।

উত্তরবঙ্গের উক্ত জেএমবি নেতা তাকে বর্ণিত ডাকাতিতে নির্বাচিত করার জন্য শীর্ষ এক নেতার কাছে সুপারিশ করে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি আলাল @ ইসহাক (৪৮) সে ২০১০ সালে জুলহাসের মাধ্যমে জেএমবি’তে অন্তর্ভূক্ত হয়। জুলহাস সহ যে দশজন একত্রে জেএমবি’তে বায়াত নিয়েছিল, সে তাদের বিশেষ সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করত। সাংগঠনিক প্রয়োজনে সে ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জে সফর করেছে। বর্ণিত ঘটনায় তার নৌকা চালান সহ ডাকাতিতে অংশগ্রহণের দায়িত্ব ছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।