রাজাপুরে বাংলার বাঘের জন্মভিটা বিলুপ্তের পথে

জাকির সিকদারঃ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের নানা বাড়িতে জন্ম বাংলা বাঘ এ কে আবুল কাশেম ফজলুল হক। সংস্কারের অভাবে বিলুপ্তের পথে দেখার কেউ নাই।
শতশত মানুষের ঢল নামে তার বসতি স্থাপনের ইতিহাস ঐতিহ্য দেখতে আসে দেশ বিদেশিরা। এসে দেখা যায় ইটের দেয়াল ভাঙ্গা, জরাজীর্ণ ঘর।কোন সৌন্দর্য নাই।
জানা গেছে তিনি ১৮৭৩ সালের ২৬শে অক্টোবর নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, বাঙালিদের অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) আবুল কাশেম ফজলুল হক।
আইনজীবী কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ ও সাইদুন্নেসা খাতুনের পুত্র ছিলেন তিনি। অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার জন্য ছিলেন সুপরিচিতি। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
এই মহান নেতা সব সময় মানুষের কল্যাণেই কাজ করেছেন। শোষণ ও নির্যাতন মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল তার আমৃত্যু সংগ্রাম। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল শের-ই-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শিক্ষার প্রতি ছিল তার গভীর অনুরাগ।মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্য সর্বপ্রথম তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।
এলাকার ছেলেমেয়েদের শিক্ষার কথা ভেবে ১৯৪১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাতুরিয়া এম এম উচ্চ বিদ্যালয় । এই বিদ্যালয় এবং তার জন্মগৃহ এখন অবহেলায় পড়ে আছে। ফলে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পর্যটক এখানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানান, বাংলার বাঘ’ জন্ম নেন সাতুরিয়ায় তার নানা বাড়িতে। বাড়িটি ‘সাতুরিয়া মিয়াবাড়ি বা জমিদার বাড়ি’ নামে পরিচিত। শেরে বাংলার শৈশব ও কৈশোরের কাটে এই গ্রামে। এক সময় রাজনীতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল এই সাতুরিয়া। ব্রিটিশ যুগের পাতলা ইট দিয়ে নির্মিত মহান এই নেতা যে ভবনে জন্ম নিয়েছিলেন, সেটির এখন জরাজীর্ণ অবস্থা।
দেয়ালের কোথাও কোথাও খসে পড়ছে ইট। প্রায় শোনা যায়, ভবনটির ছাদের পলেস্তরা ঝরে পড়ার শব্দ। আরো জানান, আমরা এলাকার মুরুব্বিদের কাছে শুনেছি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর একাধিক বার সাতুরিয়ায় এসেছিলেন ফজলুল হক। তার ছেলে প্রয়াত এ কে ফাইজুল হকও মন্ত্রী ছিলেন।
তবে শেরে বাংলার জন্মভিটা কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। মহান নেতার স্মৃতি সংরক্ষণে বহুবার এই এলাকায় একটি জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। যে রাজনীতিকের জন্য বাংলার কৃষকরা জমিদারদের শোষণ-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন, তার জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালনেও বিভিন্ন মহলে রয়েছে অনাগ্রহ।
এছাড়া, সাতুরিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নসহ শেরে বাংলার নামে একটি প্রথম শ্রেণির কলেজ, ডাক বাংলো ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি এলাকাবাসীর বহুদিনের।
সাতুরিয়া গ্রামের শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মভবনটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় ঘোষণা করা হয়। সেই ঘোষণার বহু বছর পার হলেও তা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অযত্ন আর অবহেলার মধ্যে রয়েছে এই নেতার বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ির স্থাপনাও। শের বাংলার জন্মভবনে এখন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন তার উত্তরসূরীরা।
শেরে বাংলার জন্মভবনে দীর্ঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন তার নিকটআত্মীয় হোসনেয়ারা বেগম বুলু ও তার পরিবারের সদস্যরা। বসবাস করা সদস্যরা জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর অনেক বছর আগে শেরে বাংলার জন্মস্থানটি তাদের আওতায় নিয়েছে। ২০১৭ সালে শুধু শেরে বাংলার জন্মগ্রহন করা ভবনটির ছাদটি সংস্কার করেছে, আর কোন  কিছুই সংস্কার করেনি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর।