ভুয়া কাবিন মূলে বিবাহ দেখিয়ে ঘর সংসার অবশেষে থানায় মামলা নেয়ার নির্দেশ

অসহায় এক নারীর আর্তনাত। আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। অসহায় অবস্থায় ও নিরাপত্তাহীনতার দিন কাটাচ্ছে শিউলি আক্তার নামের
এক গৃহবধূ। মুক্তাগাছা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে তার
অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে অসহায় এক নারীর
আর্তনাদ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে শিউলি আক্তার নামের
গৃহবধু ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার বরাবরে ১১/০৭/২০২১ ইং তারিখে একটি
অভিযোগ দায়ের করেন। ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার বিষয়টি ময়মনসিংহ সদর
সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার কার্যালয়ের স্মারক নং-অতিঃপুঃসুঃ/সঃসাঃ/ময়মন-২০২১/১১৬৮, তারিখ-
২৮/০৮/২০২১খ্রিঃ। এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয়, ময়মনসিংহের স্মারক নং-
৩৮৪২/আরও, তারিখ-২৫/০৮/২০২১ খ্রিঃ ও রেঞ্জ ডিআইজি’র কার্যালয়,ময়মনসিংহ
স্মারক নং-গোপনীয়/১৫২১০৭, তারিখ-২৩/০৬/২০২১খ্রিঃ। মূলে ৩১/০৮/২০২১ ইং
তারিখ বাদীনিকে ডেকে তার বক্তব্য শুনে মুক্তাগাছা থানাকে মামলা নেয়ার নির্দেশ
দেন। সে মূলে গতকাল শনিবার বাদীনি মুক্তাগাছা থানায় হাজির হয়ে তার
অভিযোগ দায়ের করে। এ ব্যাপারে মুক্তাগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল
জানান, আজকে অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্যাতিত গৃহবধু শিউলি আক্তারের বর্ণনায় তার বাড়ি মানিকগঞ্চ জেলার ঘিউর
উপজেলার রামকান্দুপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত কোহিনুর মিয়া। মাতা মৃত
লালবানু। মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। তিন বোন তারা, কোন ভাই নেই। দুই বোনের
বিয়ে হয়েছে। ৫ বছর আগে ঢাকায় গার্মেন্টে চাকরির সুবাদে সহকর্মী
মুক্তাগাছার খিলগাতী গ্রামের মামুনের সাথে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়। সেই
সংসারে দুই বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ঢাকা থেকে আসার পর ১৮
মাস স্বামীর বাড়িতে ছিলেন। তারপরই হঠাৎ করে স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয়।
পরবর্তীতে মুক্তাগাছার মানকোন ইউনিয়নের নিমুরিয়া গ্রামের মৃত ইউসুফ
আলীর পুত্র শাহজানের সাথে পরিচয় হয়। শাহজাহান তাকে প্রেমের ফাদে ফেলে অজ্ঞাত
স্থানে নিয়ে গিয়ে ভুয়া এক কাজী দিয়ে বিয়ে করে। তিন মাস ঘরসংসার করবার
পর সে জানতে পারে তার বিয়েটি ছিল ভুয়া এবং শাহজাহানের আগের স্ত্রী সন্তান
রয়েছে। পরে শিউলি গত ৯জুন ২০২১ তারিখে মুক্তাগাছা থানায় ধর্ষণের অভিযোগ
করেন। অভিযোগের খবর পেয়েই শাহজাহান এলাকার কয়েকজন মাতাব্বর নিয়ে ঐ
নারীকে নানা প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিয়ে ৫লাখ টাকা
দেনমোহর ধার্য করে কাবীন দেয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে যায়। পরে সেখানে ভুয়া

জন্ম তারিখ দেখিয়ে দেড় লাখ টাকার কাবিন লিখে এক লাখ টাকা আদায় দেখিয়ে
আরেকটি কাবিননামা সম্পন্ন করে।
পরবর্তীতে শিউলির ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে তাকে বাড়ি
থেকে তাড়িয়ে দেয়। এখন সে অসহায় হয়ে বিভিন্ন জনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
পুনরায় তাকে ঘরে নিবে বলে মুক্তাগাছা পাড়াটঙ্গী এলাকা জনৈক ইব্রাহীম
মিয়ার বাড়ী ভাড়া নিয়ে তাকে সেখানে রেখে স্বামী স্ত্রীর মত বসবাস করছিল।
এরই মাঝে শাহজাহান তার লোকজন দিয়ে শিউলিকে মুক্তাগাছা ছেড়ে চলে যাবার
জন্য হুমকি দিচ্ছেন।
শিউলি আক্তার জানান, তার পিতা-মাতা বেচে নেই। বোনেরাও যার যার স্বামীর
সংসারে। এখন তার কোথাও যাবার জায়গা নেই। সে স্বামীর সংসার ফেরত পেতে
চায়। সে বাধ্য হয়ে পুলিশ সুপার বরাবরে আবেদন করে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে
তার কথিত স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। এ ব্যাপারে সে আইন শৃংখলা
বাহিনীসহ সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধু।