মুক্তাগাছায় ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী কন্যাদের সম্পত্তি আত্মসাতের পায়তারা, জামিনে এসে থানায় মিথ্যা মামলা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় এক ব্যাংক কর্মকর্তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কর্মকর্তার স্ত্রী ও কন্যাদের উপর অমানষিক নির্যাতন সহ বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারই ভাই ও নিকট আত্মীয়-স্বজনরা। কর্মকর্তার স্ত্রী পাঁচ কন্যা নিয়ে অসহায় অবস্থায় কালাতিপাত করছেন।

এব্যাপারে ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী কামরুন্নাহার বাদী হয়ে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতে আট জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে আসামী পক্ষ ইদ্রিস আলী ইলিয়াছ তার স্ত্রী মৌসুমী, সৎ ভাই কদ্দুছ গংরা গত বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পন করলে আদালত কদ্দুছের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠান এবং মামলার ১নং আসামী ইদ্রিস আলী ইলিয়াছ চিকিৎসাপত্র দাখিল করে বাকী আসামী মহিলা হওয়ায় আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে এএসআই ইদ্রিস আলী ইলিয়াসের স্ত্রী মৌসুমী বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো বলে জানালেও পুলিশ থানায় এসে মামলাটি এফআইআর ভুক্ত করেন। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী জানান, ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী কন্যাদের ওপর এএসআই ইদ্রিস আলী ইলিয়াস, তার স্ত্রী মৌসুমী, সৎ ভাই আব্দুল কদ্দুছসহ তার আত্মীয় স্বজনরা অমানুষিক নির্যাতন করে আসছিল।

গত এক সপ্তাহে দুই বার তাদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুরের ঘটনা ঘটায় এবং ব্যাংক কর্মকর্তার বড় মেয়ে রাজিয়া সুলতানা জুইকে ইলিয়াস ও তারস্ত্রী মৌসুমী চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় এনে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে এবং তার প্রতিবন্ধী মেয়ে জেমিকে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়। এলাকাবাসী অনেকে মন্তব্য করেছেন দারোগা ও দারোগার বউ বলে কথা। ঘটনা মিথ্যা হলেও মামলা এফআইআর হয়। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী ও তার কন্যারা নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় অভিযোগ করেছিল তদন্তে এসে দারোগা ঘটনার সত্যতা পায়।

পুলিশের সাথে দারোগার স্ত্রী অসৌজন্যমূলক আচরণ এলাকাতে চাউর পায়। তার পরও ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী থানা থেকে আইনি কোন সহযোগিতা পায়নি। অবশেষে আদালতে মামলা করেন। আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আব্দুল কদ্দুছ জেল হাজতে যায়। ইলিয়াস মিথ্যা অসুস্থতার বান করে চিকিৎসাপত্র সংগ্রহ করে আদালতে দাখিল করে। এব্যাপারে গত ২০ সেপ্টেম্বর/ ২০২১ তারিখ, নিউজ বিবিসি বাংলা ও রূপান্তর বাংলা অনলাইন পোর্টাল দৈনিক জনতাসহ স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হয়।

উল্লেখ্য, মুক্তাগাছা উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নের সত্রাশিয়া গ্রামের আবু বকর ছিদ্দিক কৃষি ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ৯ আগষ্ট স্ত্রী ও পাঁচ কন্যা সন্তান রেখে মারা যান। দুই কন্যার বিয়ে হয়েছে। দুই কন্যা সন্তান স্কুল কলেজে লেখাপড়া করছে, এক কন্যা প্রতিবন্ধী। ব্যাংক কর্মকর্তা আবু বকর ছিদ্দিক তার ছোট ভাই ইদ্রিস আলী ইলিয়াছ কে লেখাপড়াসহ তার পুলিশের চাকুরী পাওয়া এবং তাকে বিয়ে করানোর যাবতীয় খরচ তিনি বহন করেছিলেন। বিভিন্ন সময় তাকে আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করেছিলেন। কিন্তু আবু বকর ছিদ্দিক মারা যাওয়ার তার এতিম সন্তানদের প্রতি সহানুভূতি না দেখিয়ে বরং তাদের উপর চালায় শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন।

দখল করে রেখেছে ছিদ্দিকের নিজস্ব টাকায় দেওয়া ঘরের তিনটি পাকা রুম, মৎস ফিসারী, ফলজ বাগান, ভাড়া দেওয়া নিজস্ব জমির উপর এয়ারটেল টাওয়ারসহ আবু বকর ছিদ্দিকের নিজস্ব ও পৈত্রিক সম্পত্তি। এয়ারটেল কোম্পানীতে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে কোম্পানী থেকে টাওয়ার ভাড়া তুলতে বাঁধা সৃষ্টি করছে। তাছাড়া এয়ারটেল কোম্পানীর লোকজন টাওয়ারের কাজ করতে আসলে তাদেরকে কাজ করতে দিচ্ছে না। তাছাড়া ব্যাংকারের নিজস্ব বাড়ি ভিটা তার স্ত্রী থাকার জন্য ঘর উঠাতে চাইলে সেখানেও ঘর উঠাতে বাঁধার সৃষ্টি করছে।

ব্যাংকার আবু বকর ছিদ্দিকের কন্যারা তার পিতার রুপিত ফলজ গাছের ফল পারতে গেলে তাদেরকে বাঁধা দেওয়া হচ্ছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তাদের জলপাই গাছে জলপাই ফল পারতে গেলে এসআইএর স্ত্রী মৌসুমী আক্তার, তার সৎ ভাই কদ্দুছ ও তার স্ত্রী আসমা সহ সকলে মিলে ব্যাংকারের কন্যা রাজিয়াকে ব্যাপক মারধর করে গুরুত্বর আহত করে। পরবর্তীতে তাকে মুক্তাগাছা হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী কামরুন্নাহার পপি থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এএসআই ইদ্রিস আলী ইলিয়াছের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার সহ তার আত্মীয় স্বজনরা পুলিশের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তারপরও ব্যাংকর্মকর্তার স্ত্রী থানা থেকে আইনি সহযোগিতা পায়নি।