এস.আর শরিফুল ইসলাম রতন, লালমনিরহাটঃ পাহাড়ি ঢল ও ভারতের গজল ডোবার সব ক'টি গেট খুলে দেওয়ায় হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি। তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার (২০ অক্টোবর) ভোর থেকে তিস্তার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তিন উপজেলা তিস্তার চর এলাকায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর ধানক্ষেত ও বিভিন্ন ফসল।
পানির তোড়ে ভেঙে যাচ্ছে রাস্তাঘাট। ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় পরিবার গুলো উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাট বাইপাস সড়কও হুমকির মুখে পড়েছে। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তিস্তা শুকিয়ে জেগে উঠেছিল চর, সবুজের সমারহে ভরে উঠেছিলো সেই চরগুলো। হঠাৎ তিস্তার পানি বাড়ায় সব ডুবে গেছে।
কার্তিক মাসে এমনভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষগুলো। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়,
মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বেড়ে ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বুধবার সকাল ১০টায় ওই পয়েন্টে ৫৩ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার
ওপরে। তিস্তার পানি ক্রমেই বাড়ছে। এদিকে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,
সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি তিস্তা
নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মফিজার রহমান বলেন, এ শুষ্ক মৌসুমে এমন বন্যা আর দেখা যায়নি। বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। গত দুমাস আগে এ নদী শুকিয়ে গিয়েছিল। আজ নদীতে ভরপুর পানি। অনেক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম এলাকার মাইদুল ইসলাম বলেন, রাত থেকে হঠাৎ পানি বাড়তে থাকায় ধানক্ষেতসহ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে, অনেক পরিবার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ
দৌলা বলেন, উজানের ঢলে ও ভারী বৃষ্টিপাতে তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তা ব্যরাজের ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
তাই তিস্তাপাড়ের মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, তিস্তার পানি বাড়ার বিষয়টা আমরা জেনেছি। পানিবন্দি পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সহায়তা আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য সহায়তার ব্যবস্থা করছেন।