॥ রেহেনা আক্তার রানি- রাজস্থলী রাঙ্গামাটি ॥ লুসাই পাহাড় হতে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীর উপর একমাত্র ফেরি পারাপার ব্যবস্থা চালু রয়েছে রাইখালী, চন্দ্রঘোনা, রাজস্থলী বান্দরবান। কর্ণফুলী নদীতে চালু থাকা এই ফেরি সার্ভিসের উত্তর পাশে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া বাণিজ্যিক কেন্দ্র লিচুবাগান, আর দক্ষিণে রাঙ্গামাটি জেলাধীন কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ইউনিয়ন। এই দুই জেলার মাঝে সেতুবন্ধন রচনা করেছে এই ফেরি সার্ভিস। নদীর দুই পাড় দুই জেলায় অবস্থিত হলেও তিন পার্বত্য জেলার বাসিন্দারা এই সড়ক বেশি ব্যবহার করেন। যেমন রাজস্থলী, রাইখালী, বান্দরবান কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দারাও এখান দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের সদ ইচ্ছার অভাবে এখানে স্বপ্নের সেতু নির্মানে উদ্যোগ নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রবল বৃষ্টি হলেই ফেরির পল্টুন ডুবে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায় ফেরী পারাপার। সেই সময় ফেরির উপর উঠা নামা করাও ঝুঁকিও অনেক কষ্টের হয়ে পড়ে। তবে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এবং কষ্ট সহ্য করে ফেরিতে উঠানামা করেন। যার ফলে বিভিন্ন সময়ে ছোট বড় দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া একটি ফেরি দিয়ে যাতায়াতে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকে ছোট বড় যানবাহন। এতে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়তে হয় চলাচলকারীদের। পাশাপাশি দুর্ঘটনা তো আছেই। আর কর্ণফুলী নদীর উপর স্থায়ী সেতু নির্মাণে জনগণের দাবি দীর্ঘদিনের। বর্তমান সরকারের অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বছর বছর ধরে স্থায়ী সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এত বছরেও তা আলোর মুখ দেখেনি। যখন মিডিয়া কর্মীরা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে তখন সাধারন চলাচলকারীদের প্রশ্ন, দুর্ভোগের ফেরি পারাপার আর কত দিন? তাদের দাবি, এখানে সেতু হোক। সেতু হলে তিন পার্বত্য জেলাসহ চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা আধুনিকে পরিণত হবে। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটবে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে জানা যায়, প্রায় নব্বই দশকের আগে কর্ণফুলী নদী পারাপারের জন্য ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। বর্তমানে রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের অধীনে ফেরিগুলো পরিচালিত হচ্ছে। ফেরী একবার পারাপারে সময় লাগে ৪০/৪৫ মিনিট। সে ভোর থেকে রাত ১০টা কিংবা বিশেষ ক্ষেত্রে ১২টা পর্যন্ত এই সার্ভিস চালু থাকে। জরুরী কোন রোগী বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী পারাপার করে থাকে। ফেরিতে ওঠার জন্য নদীর দুই পাড়ে চন্দ্রঘোনা ও বাঙ্গালহালিয়া সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন থাকে। আর ফেরি বিকল হলে কিংবা পল্টুন ডুবে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে থাকে যানজট। যদি এ নদীর উপর সেতু থাকলে পার হতে সময় লাগত মিনিট পর্যন্ত। তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সাথে সড়ক যোগাযোগের জন্য কাপ্তাই ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত কর্ণফুলী নদীর উপরে থাকা এই ফেরি প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। বান্দরবান, রাজস্থলী হতে সারা পথ নিরাপদে আসতে পারলেও এখানে এসে থমকে যেতে হয়। প্রতিদিন এই ফেরি দিয়ে প্রায় ৪/ ৫ শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া নৌকা ও সাম্পান যোগে যাতায়াত করে অসংখ্য মানুষ। ফেরি দিয়ে বাস ট্রাক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যানবাহনও চলাচল করে। একটি সেতুর অভাবে দিনের পর দিন যাত্রী সাধারণ কষ্ট ভোগ করছে। এতে সময় যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনী দূর্ভোগে পড়চ্ছে হচ্ছে। বাঙালহালিয়া বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমবায় সমিতির সভাপতি বলেন, বাঙালহালিয়া, পদুয়া, দশ মাইল সুখবিলাস এলাকার গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে দ্রুত চট্টগ্রাম বা চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা সম্ভব হয় না। যদি একটি সেতু নির্মাণ করা হয় তা হলে এই দূর্ভোগ থেকে সবাই পরিত্রাণ পেতো। চন্দ্রঘোনার কাপ্তাই সড়কএলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাসান (কোম্পানী) সাংবাদিক কে জানান, এই ফেরী দিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রায় সময় যাতায়াত করে থাকে। আর প্রায় সময় ফেরি পারাপাড়ের সময় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় চলাচলরত মানুষের। সড়ক ও জনপদ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে একনেক সভায় এখানে সেতু নির্মাণের প্রস্তা অনুমোদন হয়েছিল। কিন্ত কেন এই প্রক্রিয়া থমকে আছে তিনি অবগত নন। প্রতি অর্থ বছরে চন্দ্রঘোনা ফেরি থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে
