বিচারকদের দোহায় দিয়ে চলছে নৈরাজ্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার লুন্ঠিত কণ্ঠ চেপে বসেছে পরাধীনতার শিকল, দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিনা বিচারে রয়েছে বন্দি অসহায় পরিবারের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে দুহাত তুলে করেছে ফরিয়াদ সৃষ্টিকর্তার তরে, কথায় আছে কোর্টের বারান্দাতে থাকা বিভিন্ন পিলার, ইটগুলোও টাকা খায়, আদালত হলো ন্যায়বিচারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কেউ অন্যায় বা অবিচারের শিকার হলে আইনি উপায়ে বিচার পেতে মামলা করেন। থানায় মামলা হলে এজাহার পাঠিয়ে দেওয়া হয় আদালতে। আসামি গ্রেফতার হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করেন। শুরু হয় আইনি লড়াই। এখান থেকেই শুরু হয় বিচার পাওয়া-না পাওয়ার মূল চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জের প্রতিটি ধাপে ধাপে “বকশিশের” নামে ঢালতে হয় টাকা। মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। বকশিশও দিতে হয় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। এই বকশিশের চাপই অনেককে নিঃস্ব করে দেয়। মামলা লড়তে লড়তে প্রায় সর্বস্ব খোয়াতে হয় বাদী বিবাদী উভয়পক্ষকে। মূলত মামলার কপি নেওয়া, ওকালতনামায় সই করা, হাজিরা দেওয়া, রিমান্ড বাতিলের শুনানি করা, জামিন আবেদন করা, জামিন হলে জামিননামা দাখিল করা, রিলিজ অর্ডার বা মুক্তিনামা কারাগারে পাঠানোর আগে জামিননামা যাচাই করতে পুলিশের জিআর শাখায় দ্রুত ব্যবস্থা করা, কারাগার থেকে বের হতে দ্রুত রিলিজ অর্ডার কারাগারে পাঠাতে।জামিন না হলে কোর্ট হাজতখানায় খাবার খাওয়াতে, পরবর্তীতে জামিন ধরার আগে জামিন শুনানির জন্য পুটআপ দরখাস্ত মঞ্জুর করাতে, তারপরও জামিন না হলে দ্রুত নকল পাওয়ার জন্য, মিসকেস ফাইল এবং জামিন শুনানির জন্য দ্রুত তারিখ পাওয়াতে, অর্থাৎ মামলা সংক্রান্ত যে কোনো সেবায় বকশিশ বা খরচাপাতি ছাড়া এখন যেন চলেই না। ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি বলেন আমার নামে মামলা হলো, আদালত থেকে সমন জারি করা হইল সেই সমন নিয়ে যাবে পুলিশ দিতে হবে বকশিস, মামলার নথি তুলতে পুলিশ ও পেশকারকে দিতে হবে ফি আদালতে নিতে হবে জামিন, ধরতে হবে উকিল উকিল কে দিতে হবে ফিস, লাগবে ওকালতনামা দিতে হবে টাকা, নিতে হবে কোর্ট ফি দিতে হবে টাকা, রাইটার লিখবে দরখাস্ত মক্কেল হাজির সেখানে দিতে হবে টাকা, কাগজ জমা দিতে আদালতে পেশকার ও কোট পুলিশকে দিতে হবে টাকা, আদালত জামিন দিলে দিতে হবে পুলিশকে বকশিস। এবার হল হাজিরার পালা প্রতি হাজিরায় উকিলকে দিতে হবে ফি রাইটারকে দিতে হবে বকশিস হাজিরার কাগজ জমা দিলে পেশকার ও পুলিশকে দিতে হবে বকশিস, এভাবে যাবে দশ/ বিশ বছর হল মামলার রায়, উক্ত মামলার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে সারটিফায়েড কপি নিতে সরকারি ফি সহ বিভিন্ন ধাপে ধাপে আবারো টাকা, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় সাধারণ জনগণ যাবে কোথায় রেলের দূর্নীতি ও টিকেট কালোবাজারী বন্ধে কি কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট! তবে মজার ব্যাপার হলো এই আদেশ সুয়োমোটো না হয়ে যদি কোন ব্যক্তির দায়ের করা রিটের ভিত্তিতে হতো তবে হাইকোর্টে নিম্নলিখিত অতিরিক্ত খরচ হতো – রিট পিটিশনের নম্বর এন্ট্রি -১০০-৫০০ টাকা, এফিডেভিট -৩০০-১০০০ টাকা , ফাইল সেকশন থেকে কোর্টে পাঠানো ১০০-৩০০, জজ সাহেবের আদেশের পর আরদালি ও পিওন বকশিস ৫০০-১০০০, বেঞ্চ অফিসার কর্তৃক টাইপিং ৫০০-১০০০, পিওন কর্তৃক জজ সাহেবদের টেবিলে সিগনেচার করার জন্য দেয়া ও ফাইল কোর্ট থেকে সেকশনে নামানো ৩০০-৫০০, সেকশনে নামিয়ে ইস্যু কপি টাইপ করা ও ইস্যু কপি সহকারী রেজিস্ট্রার কর্তৃক সিগনেচার করার জন্য উপস্থাপন ৫০০-১০০০, ইস্যু কপি ডেসপাসে পাঠানো ৩০০-৫০০, ডেসপাস থেকে বিবাদীদের প্রতি জারি করা করা ২০০০-৫০০০, সারটিফায়েড কপি নেয়া ৮০০-১০০০, জারির রিপোর্ট আসলে ফাইলে রেডি সিল দেয়া ৫০০-১০০০, কখনো ফাইল দরকার হলে খুঁজে বের করা ১০০-৫০০। অনেক সময় উক্ত হিসাবের চেয়েও বেশি গুনতে হয় টাকা, মামলার সারটিফায়েড কপি নিতে গণতে হয় হাজার হাজার টাকা যাহা একজন গরীব ও মধ্যবিত্ত ফেমেলি দিতে হিমশিম খায় জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করে মামলা চালায়। আদালতের প্রতিটি পদক্ষেপে দূর্নীতির গন্ধে জর্জরিত বিচারকগণ জানেনই না তাদের নাম নিয়ে অনেক সময় মোটা অংকের চুক্তি করেন উকিল /দালাল গণ অনেক সময় ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে। আদালত হলো ন্যায়বিচারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল। কেউ অন্যায় বা অবিচারের শিকার হলে আইনি উপায়ে বিচার পেতে মামলা করেন। থানায় মামলা হলে এজাহার পাঠিয়ে দেওয়া হয় আদালতে। আসামি গ্রেফতার হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনসহ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করেন। শুরু হয় আইনি লড়াই। এখান থেকেই শুরু হয় বিচার পাওয়া-না পাওয়ার মূল চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জের প্রতিটি ধাপে ধাপে “বকশিশের” নামে ঢালতে হয় টাকা। মামলা চলতে থাকে বছরের পর বছর। বকশিশও দিতে হয় মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত। বিচার চাইতে এসে পদে পদে অবিচারের শিকার হতে হয়। পড়তে হয় লাগামহীন খরচের পাল্লায়। আদালত অঙ্গনে নিয়মবহির্ভূতভাবে এ ধরনের লেনদেনকে বলা হয় খরচাপাতি। আবার যারা নিচ্ছেন, তারা এটাকে “ঘুষ” বলতে নারাজ। তাদের ভাষ্য— খুশি মনে মানুষ আমাদের বকশিশ দিয়ে যায়। আমরা বকশিশ-বাণিজ্যের অবসান চাই। আদালত হচ্ছে ন্যায়বিচারের জায়গা। আমরা সব সময় ন্যায়বিচার চাই।দেশের সচেতন মহলের দাবি সরকার গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ডিজিটাল বাংলার সাধারন, অসহায় মানুষ কিছুটা হলেও আদালত, মামলার ভোগান্তি হইতে মুক্তি পাবে। মোঃ রিয়াজ উদ্দিন রানা লেখক কলামিস্ট সংগঠক।
