জাহাঙ্গীর আলম রাঙ্গামাটি থেকে —রাঙ্গামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলা একটি পশ্চাত ও দুর্গম উপজেলা। উপজেলায় একমাত্র ভরসা নৌ পথ। উপজেলায় চার ইউনিয়নে ২৮ হাজার জনসংখ্যা প্রায়। প্রতিবছর কোন না কোন ভাবে উপজেলার চার ইউনিয়নে অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হয়। আগুনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে এসব মানুষ। ক্ষয়ক্ষতি রোধে ও নিরাপত্তায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জোর দাবী এখন উপজেলাবাসীর। জুরাছড়ি উপজেলা পরিষদের সূত্র থেকে জানা যায়, গত বছর ২৯টি বসত ঘর ও চলতি বছর ১২টি বসত ঘর ও ৫৪টি দোকান ও পাড়া কেন্দ্র ১টি পুড়ে গেছে। যার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৮-১০ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর উপজেলা বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৫৪টি দোকান ও ২টি বসতঘর পুড়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। বার বার এই ধরণের অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতি এরাতে উপজেলা সর্বস্তরের মানুষের এখন প্রানের দাবী একটি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ব্যবসী সাধনা চাকমা বলেন, গেল ৯ অক্টোবর অগ্নিকান্ডে সব পুড়ে একেবারে সর্বশান্ত হয়েছি। এখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকলে এমন ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হতে হত না। কিছুটা হলেও গুরুত্বপূর্ণ জিনিস রক্ষা পেত। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকার কারণে চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখেছি, কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী তপন কান্তি দে, মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ বেলাইত, হেডম্যান সন্তোষ দেওয়ান, চার ইউপি চেয়ারম্যানরা। তারা বলেন, প্রতিবারই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয় জুরাছড়িবাসী। এতে করে লোকজন বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবেতর দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়। সরকারী ভাবে যে সাহায্য দেয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে দীর্ঘদিন যাবত দূর্ভোগ পোহাতে হয় আগুনে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের।
জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা বলেন, জুরাছড়ি উপজেলাটি একমাত্র ভরসা নৌ পথ। তাই আগুন লাগার সাথে সাথে দ্রুত রাঙ্গামাটি থেকে ফায়ার সার্ভিস আসা মোটেও সম্ভব নয়। তাই এই কারণে আগুন নিভাতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও আইন-শৃঙ্খলাবাহিরী সদস্যরা অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। জরুরী ভিত্তিতে একটি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন স্থাপনের সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
স্থানীয় কার্বারী অনিল কুমার চাকমা বলেন, প্রতি বছর কোননা কোন ভাবে বসত ঘর কিংবা দোকান আগুনে পুড়ে যায়। এতে করে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন না থাকার কারণে দেখে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ছিলেন কুমার নাথ বলেন, জুরাছড়ি উপজেলায় বিশেষ ব্যবস্থাপনা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন স্থাপনের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন স্থাপনে কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা বলেন, প্রতিবছর অগ্নিকান্ডে ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুড়ে গিয়ে কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্থ জনগন দূর্ভোগ পৌহাতে হচ্ছে। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই জুরাছড়ি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন এখন সময়ে দাবী। সুতরাং স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করবে উপজেলা পরিষদ।
সম্প্রতি অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের আর্থিক সহায়তা প্রদানকালে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। জুরাছড়িতে দ্রুত স্থাপনের জন্য রাঙ্গামাটি আসনের সাংসদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে।
সম্প্রতি অগ্নিকান্ড এলাকা পরির্দশন কালে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, উপজেলার বহু আগেই ফায়ার স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধির করেছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেসব উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন নেই সেইসব উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হবে।
