নিজস্ব সংবাদদাতা রূপান্তর বাংলা —-সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ঘটানো হয় জেল হত্যাকাণ্ড। ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম কামারুজ্জামান এবং ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে ‘৭৫ এর ০৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর জাতির ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় কলংকজনক অধ্যায়।
প্রতিমন্ত্রী আজ বিকালে রাজধানীর বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবস ২০২২ উপলক্ষ্যে জাদুঘর আয়োজিত ‘৩রা নভেম্বরের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর পর্ষদ এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ও প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তৃতা করেন ডাঃ সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি। বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর।
প্রধান অতিথি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পরপরই জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনাটি এমনভাবে নেয়া হয়েছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে যাতে আপনা আপনি এটি কার্যকর হয়। আর এ কাজের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি ঘাতক দলও গঠন করা হয়। এই ঘাতক দলের প্রতি নির্দেশ ছিল পাল্টা অভ্যুথান ঘটার সাথে সাথে কোনো নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তারা জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করবে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটানোর পরেই কেন্দ্রীয় কারাগারে এই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মতো জাতীয় চার নেতা হত্যার পেছনেও জিয়াউর রহমান জড়িত। তার সুচারু পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিলো।
কে এম খালিদ বলেন, জাতীয় চার নেতার মধ্যে কেবল সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। তিনি ছিলেন অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিবিদদের অনেকেই অর্থবিত্তের পিছনে ছোটাছুটি করেন। কিন্তু ব্যক্তিক্রম ছিলেন জাতীয় চার নেতা। তাঁরা সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ পুনর্গঠনে তাঁদের অবদানের কথা জাতি চিরকাল কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করবে।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলাম তনয়া ডাঃ সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি বলেন, ১৯৯৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের বিচারকার্য সম্পাদিত হয়। কিন্তু এসব হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের খুঁজে বের করার জন্য অবিলম্বে একটি কমিশন গঠন করা দরকার।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর বলেন, জাতীয় চার নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে স্বীকার করে তারা এদেশকে স্বাধীন করেছেন। তিনি বলেন, আমরা যারা স্বাধীনতার সুফলভোগী আমাদের সকলেরই দেশ ও জাতির প্রতি কিছু নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। আর তা হলো- গভীর আস্থা ও বিশ্বাসের মাধ্যমে সত্যের প্রতি অবিচল থাকা এবং ইতিহাসকে সঠিকভাবে জানা ও তা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। আর যেসব মূল্যবোধকে ধারণ করে এদেশ স্বাধীন হয়েছে সেগুলোকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করা।
অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জাতীয় চার নেতা আমৃত্যু বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও আদর্শের প্রতি অবিচল ও অটুট ছিলেন। বাংলাদেশ ও পৃথিবীর ইতিহাসে যাতে এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড আর না ঘটতে পারে সেজন্য এর নেপথ্য ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে তিনি একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান।