শিল্প পুলিশ প্রতিষ্ঠার গৌরবের এক যুগপূর্তি উদযাপন”

রূপান্তর বাংলা নিজস্ব সংবাদদাতা –ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ প্রতিষ্ঠার এক যুগপূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম, রাজারবাগ, ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আসাদুজ্জামান খান, এমপি প্রধান অতিথি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা জনাব সালমান ফজলুর রহমান, এমপি; স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ জনাব চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, বিপিএম(বার), পিপিএম, মহোদয় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ মাহাবুবর রহমান, বিপিএম, পিপিএম, অতিরিক্ত আইজিপি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে কলকারখানা ও অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর শিল্প দর্শন অনুসরণে তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপকল্প -২০৪১ ঘোষণা করে বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির সোনালী দিগন্তে পৌঁছে দিতে নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর গতিশীল নেতৃত্বে দেশজুড়ে অবকাঠামো নির্মাণ, রপ্তানীমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং আরো কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শৃঙ্খলা-নিরাপত্তায় শ্রমবান্ধব এবং প্রযুক্তি নির্ভর পুলিশিংয়ের মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগবান্ধব কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য যাত্রায় অবদান রাখছে। এ অগ্রযাত্রার অপ্রতিরোধ্য গতিকে থামিয়ে দিতে দেশী বিদেশি যে সকল শক্তি তৎপর, তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে উন্নত বাংলাদেশ তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের প্রত্যেক সদস্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের মহাপরিকল্পনা ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ। একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন স্থিতিশীল সরকার ও নিরাপদ শিল্পোৎপাদনের পরিবেশ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় ২০১০ সালে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন হওয়ার পর থেকে এ ইউনিটের সদস্যরা শিল্পাঞ্চলে সংঘটিত বহুমাত্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে আসছে, ফলে শিল্পাঞ্চলে নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে, যা দেশের অর্থনেতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষ নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। তিনি এ ইউনিটের উত্তরোত্তর সাফল্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, যেকোন দেশে শিল্প বিকাশের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সেখানকার নিরাপত্তা ও শিল্পবান্ধব পরিবেশ তৈরী করা। এসত্য উপলব্ধি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক নির্দেশনায় ২০১০সালে যাত্রা শুরু করে ইন্ডাস্ট্রিয়ালপুলিশ, যা দেশের শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা, উৎপদন ও কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সবাত্মক কাজ করে যাচ্ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব শফিউল ইসলাম মহিউদ্দীন, এমপি বলেন, শিল্প কারখানায় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান নিশ্চিত করছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন শিল্প কারখানায় বিদেশি বিনিয়োগকারী, কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মহোদয় বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ শিল্পখাতে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রেখেছে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেছে। ফলে, শিল্প সেক্টরে স্থিতিশীল অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে বিধায় দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, কর্মসংস্থান হয়েছে দেশের জনগণের, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, রপ্তানি আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি মহোদয় বলেন, শিল্পক্ষেত্রে, বিশেষ করে পোষাক শিল্পে নৈরাজ্য ও অস্থিরতা বন্ধের গুরুত্ব উপলব্ধি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠনের ঘোষণা দেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ মূলত শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের মাঝে একটি নিরপেক্ষ এবং কার্যকর অনুঘটক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে শিল্প সংশ্লিষ্ট সংকট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। দেশব্যাপী অবস্থিত শিল্পাঞ্চলসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য, পুলিশের সম্প্রসারণ, জনবল বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় সকল ধরণের লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করার জন্য তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তিনি দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান এবং আরো উদ্যমী হয়ে দেশের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।

এছাড়াও সভায় বিজিএমইএ এর সভাপতি ও বিকেএমইএ এর নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় শ্রমিক নেতা তাদের বক্তব্যে, দেশের শিল্পাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের গৃহীত কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দেশের সকল শিল্পাঞ্চলসমূহে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এ ইউনিটের জোন সংখ্যা ও জনবল বৃদ্ধির বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

উক্ত অনুষ্ঠানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের আওতাধীন ০৬ টি জোনে অবস্থিত শিল্প-কারখানার মধ্য থেকে বাংলাদেশ শিল্পখাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ০৬ জন বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে Appreciation of Excellence-2022 স্মারক প্রদান করা হয়।

উক্ত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিগণ, বিভিন্ন ইউনিটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-এর নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ীবৃন্দ, শিল্পকারখানার মালিক ও প্রতিনিধিবৃন্দ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।