–একই পরিবারের পাঁচজন মুক্তিযোদ্ধা–
কেউ পাইনি স্বীকৃতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা -গোলাম মাওল
অনুসন্ধানী নিউজ রূপান্তর বাংলা —
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলাধীন ১৫ নং শরিফপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ খানপুর গ্রামের বদিউল আলম মাস্টার বাড়ির বদিউল আলম ও ফয়েজেন নেছার ওরসজাত সন্তান ছিলেন ৫ জন তারা প্রত্যেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে সহযোগিতা করেছেন।
বদিউল আলম মাস্টারের তৃতীয় ছেলে মোঃ গোলাম মাওলা বলেন-
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় নোয়াখালী ২ নং সেক্টরের অধীনে ছিল,সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশারফ পরবর্তীতে উক্ত সেক্টরের দায়িত্ব নেন মেজর এটিএম হায়দার, স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতেই আমার বাবা বদিউল আলম মাস্টার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন, পিতার কর্ম দেখে আমরাও পিতার সঙ্গে সহযোগী হই, এবং আমাদের পৈতৃক বিটা বাড়িটিকে ডিসেক্টর হিসেবে নামকরণ করা হয়,
মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে আসা ভারী অস্ত্র গোলাবারত আমি নিজে মাথায় বহন করে আমাদের বাড়িতে অর্থাৎ ডি সেক্টরে নিয়ে আসতাম, আমাদের বাড়িটি মূলত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি এবং এই ডি সেক্টরের স্টোরকিপার হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন আমার মরহুম শ্রদ্ধেয় পিতা মাস্টার বদিউল আলম
মূলত বাবার নিকট মুক্তিযোদ্ধাদের কাজে ব্যবহারের জন্য বাড়ি অস্ত্র গুলা বারদ জমা দেওয়া হতো পরে তিনি ওইগুলো বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে কমান্ডারের নির্দেশক্রমে বিতরণ করতেন যুদ্ধ শেষে মজুদকৃত অস্ত্র ঘোলা ভারত গুলো স্থানীয় থানায় জমা দেন। গোলাম মাওলার ভাই গোলাম সরোয়ার তিনি ভারত থেকে ট্রেনিং প্রাপ্ত ছিলেন তিনিও ট্রেনিং প্রাপ্ত অপরদিকে আরেক ভাই আবু তাহের তিনিও ট্রেনিং প্রাপ্ত।
যুদ্ধকালীন সময়ে উনার উপর দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন অস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় বহন করে নিয়ে যাওয়া ও গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করা।
মুক্তিযুদ্ধে তাদের পুরো পরিবার অংশগ্রহণ করা দেখে রাজাকার চাঁন তারা বসু ঘোষণা করেন বদিউল আলম মাস্টারের যে কোন ছেলেকে জীবিত অথবা মৃত ধরে দিতে পারলে তাকে নগদ ২৫ হাজার টাকা ও একটি বাড়ি পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হবে।
মূলত দেশের কথা চিন্তা করে পিতার আদর্শে তারা সকলেই মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন।
ডিসেক্টরের প্রথম দায়িত্বে ছিলেন সুবেদার আব্দুল হাই উনি রাজাকারের হাতে ধরা পড়লেতাকে নির্মম নির্যাতনের মধ্য দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। দ্বিতীয় দায়িত্বে আসেন ক্যাপ্টেন কমল নাগ তিনিও রাজাকারের হাতে ধরা পড়েন একই সাথে শহীদ ইস্কান্দার ভুলুও তাদের হাতে ধরা পড়েন তারা ভুলুকেও গুলি করে হত্যা করে যার নামে রয়েছে মাইজদী শহীদ ভুলু স্টেডিয়াম।
তৃতীয় দায়িত্ব আছেন সুবেদার শামসুল হক ওনার দায়িত্বে নেওয়ার পর দেশ স্বাধীন হয়ে যায় উনাদের সকলের দায়িত্ব পালনকালে বদিউল আলম মাস্টার ডি সেক্টরের স্টোর কিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
স্টোর কিপার বদিউল আলমের জীবন দশায় কোন সরকারি সুযোগ সুবিধা এমন কি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা
কপালে জোটেনি, তাদের পরিবারের অনেকেই কবরবাসী হয়ে গেছেন মোঃ গোলাম মাওলা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি দুঃখ করে বলেন বর্তমান সরকার বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা লৌহ মানব বিশ্বনেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনাইয়ার নেতৃত্বে পরিচালনা দিন। মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের সরকার, মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে আসছে আমি কিংবা আমার পরিবার কেউ কোন সুযোগ-সুবিধা দান অনুদান কিছুই পায়নি।
এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৫ নং শরীয়তপুর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বাবু নগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাইদুল হক রুপান্তর বাংলা কে বলেন মাস্টার ও তাদের পরিবার প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী ব্যক্তি তৎকালীন সময়ে তিনি সচ্ছল পরিবারের সদস্য ছিলেন যখন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ভুক্ত করা হয় সে সময়ে আমার সাথে তার যোগাযোগ ছিল না পরবর্তীতে তিনি যখন জানতে পেরেছেন আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছি তিনি এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরে আমার সাথে যোগাযোগ শুরু করলেও আমার চাকরির জনিত ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারি নাই এবং তিনি ১৯৯১ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। পরে তার ছেলে মোঃ গোলাম মাওলা যোগাযোগ করলে বিভিন্ন কারণে আমি সহযোগীতা করতে ব্যর্থ হই। তাদের পরিবারের সকলেই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে ইহা সত্যি।
এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৫ নং শরীয়তপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ খানপুর গ্রামের করিম দারোগা মুক্তিযোদ্ধা বলেন আমি শুনেছি মৃত বদিউল আলম মাস্টার প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী ব্যক্তি ছিলেন।উক্ত ইউনিয়নের
বীর মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির বাচ্চু রুপান্তর বাংলা কে বলেন বদিউল আলম ও তার তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ হয়ে গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করেছেন তাদের জন্য মুক্তিযোরা অনেক কিছু তথ্য পেয়েছেন এছাড়া বাড়িতে রান্নাবান্না করে নৌকা যুগে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার পৌঁছে দিতেন। একস্তান হতে অন্য স্থানে হাতিয়ার বহন করতেন প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী সহযোদ্ধা ছিলেন। তাদের বাড়ির পূর্ব পাশে হিন্দুর বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধারা ঘুমাতেন তারা ওইখানে গিয়ে বিভিন্ন খবরা-খবর ও খাওয়ার দিয়ে আসতেন।
উক্ত এলাকার দক্ষিণ খানপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ছাদু মেম্বার ও শরীফপুর ইউনিয়নের বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা ইউনিয়ন কমান্ডার শরীফ বেলাল রূপান্তর বাংলার নিকট অকপটে স্বীকার করে বলেন, এক এক জনকে একেক ধরনের দায়িত্ব দেওয়া হতো সম্মুখে যুদ্ধ না করলেও তারা অস্ত্র পাহারা দিয়েছে আমাদেরকে খাদ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে যুদ্ধের সময় ছায়ার মত পাশে ছিলো। অবশ্যই তাদের পরিবার মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।
বড় আক্ষেপ করে গোলাম মাওলা বলেন আমাদের পরিবারে যারা ছিলেন সবাই মুক্তিযোদ্ধা অথচ আমাদের কারোরেই নেই কোন স্বীকৃতি। বাবার মতো আমি তো মরবো কিন্তু বুকে কষ্ট নিয়ে মরবো –
আমি দীর্ঘদিন ধরে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে যাচ্ছি জানিনা কখন এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে চলে যাই, আমি মরে গেলেও দুঃখ থাকতো না যদি সেই কষ্টের প্রতিদান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিটুকু পেতাম।
স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অবহেলিত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বদিউল আলম মাস্টারের পরিবারের সবাই মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন , তাদের আত্মার শান্তির জন্য মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া খুবই প্রয়োজন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সুশীল সমাজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট অনুরোধ করে বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মাওলা সহ আর একটি মুক্তিযোদ্ধাও যেন বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কে নির্দেশ প্রধান করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।