গণহত্যার ২৯ বছর স্বজনদের আহাজারি বিচারের বাণী নীরবে কাঁদে-

রূপান্তর বাংলা রেহেনা আক্তার রানী — পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের একটি কালো দিন, ১৭-ই নভেম্বর, ১৯৯৩ সালের এই কালো দিনে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় বসবাসরত নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর জেএসএস সন্তুলারমার সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা পরিচালনা করে।

গণহত্যায় নির্মম নির্যাতনের কথা পার্বত্য বাঙ্গালীরা ভুলে যেতে বসেছে ৷ স্বজন হারা পরিবারগুলোর সদস্যরা আজও নানিয়ারচরে ঘটে যাওয়া গণহত্যার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিচার দাবি তুলে আর্তনাদ করে যাচ্ছে, কিন্তু কেউ তাদের পাশে দাঁড়ায় নি। এইভাবেই ২৯টি বছর কেটে গেছে।

এই গণহত্যায় ২৬০ জনের অধিক নিরস্ত্র নিরীহ অসহায় বাঙ্গালীকে হত্যা করা হয়। বাঙ্গালী মা-বোনদের জেএসএস সন্ত্রাসীরা গণধর্ষণ করে হত্যা করে। আহত হয় প্রায় ১৫০ জন।

সন্তুলারমার জেএসএস সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্য বাঙ্গালীকে নিধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী শূন্য করবে এবং পাহাড়কে সন্ত্রাসে পরিণত করে রাজত্ব কায়েম করবে। তারা সেই স্বপ্ন নিয়ে বাঙ্গালীদের কে মেরে ফেলার জন্য গণহত্যায় মেতে উঠেছিল সেসময়৷ এই গণহত্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩৫ হাজার বাঙ্গালী নিহত হয়। এরা সবাই নিরস্ত্র বাঙ্গালী ছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বসতি স্থাপন করার পরপরই আনসার,ভিডিপি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ সরকারি চাকরিজীবীদের কেউ তারা হত্যা করে।

গণহত্যার পর নানিয়ারচর থেকে প্রায় ২১৮ পরিবার সমতলে ভয়ে ফিরে যান। সেদিন রাস্ট্র-প্রশাসন তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়৷ সন্ত্রাসে পরিণত হয় সমগ্র নানিয়ারচর সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাঙ্গালীরা প্রাণের ভয়ে দিগদিগন্তে এদিক সেদিক ছুটতে থাকে সেইদিনের লোমহর্ষক ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও ভুক্তভোগীদের গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায়।

ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, সন্তু লারমা নিজেই এই গণহত্যার নেতৃত্ব দেন। ৭৭ জন জেএসএস সন্ত্রাসী গণহত্যায় অংশ নেন। সন্তু লারমার বাড়ি ছিল নানিয়ারচর উপজেলায়৷ সন্তু নিজেই ১৩ মাসের নুর কায়েদা নামের এক মেয়ে শিশুকে পায়ে পিষে হত্যা করে এবং তার মাকে ধর্ষণ করে যৌনাঙ্গে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

তখনকার সময় বাঙ্গালী সাংবাদিক, লেখক না থাকায় এসব নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরোচিত ঘটনাগুলো বরাবরের মত ইতিহাস থেকে প্রায় মুছে গিয়েছে৷ তৎকালীন গণমাধ্যম জেএসএস সন্ত্রাসীদের ভয়ে সত্য প্রকাশ করতো না বলে অনেকেই অভিযোগও করেন এমনকি তাদের পাহাড়ে প্রবেশে ছিলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

সুরুজ মিয়া (৮১) ইসলামপুর, ফয়জ আলী (৭৭) বেতছড়ি ও আনোয়ার মোল্লা (৮৪) সহ অনেকেই নানিয়ারচর গণহত্যার পরের দিন মৃত্যুর ভয়ে এলাকা ছেড়ে ময়মনসিংহ চলে যান। তারা সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। নৃশংস গণহত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে কয়েকজন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ভুক্তভোগী ও সমাজের সচেতন মহল সরকারের নিকট বাঙ্গালী গণহত্যার বিচার চেয়েছেন এবং নিহতদের পরিবার গুলোর সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য দাবি ও করেন।