রুপান্তর বাংলা -ময়মনসিংহ প্রতিনিধি।।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার কাশিমপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আবু রায়হান হাবলু (২৫) হত্যা মামলার রায়ে ২জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের চতুর্থ আদালত।
গত ২১ নভেম্বর ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা চতুর্থ আদালতের জজ রাশেদ তালুকদার এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১নং আসামী তানভির আহাম্মদ ফরহাদ ও ২নং আসামী দুলাল মিয়াকে যাবজ্জীবন কারাডন্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেছে।
মামলার বিবরণে জানাযায়, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের মোঃ ফয়জুর রহমান তার বাড়ীর উত্তর পাশে তার স’মিল সংলগ্ন বিশ শতাংশ জমি ক্রয় করে ২০ বছর যাবত চাষাবাদ করে আসছিল। ২৪ জানুয়ারী/২০১৩ তারিখ বিকেল সোয়া ৪টায় বিবাদী দুলাল মিয়া ফয়জুরের জমির এক ফুট ভিতরে খুঁটি গাড়ে। এতে বাদীর বড় ভাই আঃ মজিদ প্রতিবাদ করলে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তাকে দা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসলে মজিদ দৌড়ে স’মিলে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে ডাক চিৎকার দিতে থাকে। এসময় তার চিৎকারে বাদীর পুত্র আবু রায়হান হাবলু এগিয়ে আসলে আসামী তানভীর আহাম্মদ ফরহাদ হাবলুর মাথায় দা দিয়ে কুপ দেয়। এসময় বাদী ফয়জুর রহমান ও তার ভাই আঃ মজিদ এগিয়ে আসলে তাদেরকে দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর ভাবে জখম করে। পরে স্থানীয় লোকজন আহত হাবলু, ফয়জুর রহমান ও আঃ মজিদকে প্রথমে মুক্তাগাছা ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। হাবলুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চিকিৎসক ঢাক রেফার্ড করেন। ঢাকা নেয়ার পথে ভালুকা নামক স্থানে সে মারা যায়। এব্যপারে পরদিন ২০১৩ সালের ২৫ জানুয়ারী হাবলুর পিতা ফয়জুর রহমান বাদী হয়ে মুক্তাগাছা থানায় তানভীরসহ ৪জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে তানভীর ও তার পিতা দুলালকে অভিযুক্ত করে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। অবশেষে ২১নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন বিজ্ঞ আদালত।
মামলাটি অন্যদিকে প্রবাহিত করতে যত চেষ্টা ঃ মুক্তাগাছা কাশিমপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের নি¤œ মধ্যবৃত্ত পরিবারের সদস্য ফয়জুর রহমান। তারা ৪ ভাই। তাদের মধ্যে বড় ভাই আব্দুল মজিদই একমাত্র শিক্ষিত। অন্যরা সবাই কৃষিকাজের উপর নির্ভশীল। ফয়জুর রহমানের সাথে পরশী দুলাল মিয়ার জমির সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। দুলালের পুত্র তানভীর আহমেদ ফরহাদ সেনা সদস্য। সে সময় তিনি সাভার সেনানিবাসে ৫নং ইউনিট আলফা কোম্পানীর বীর সাপোর্ট ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। এক মাসের ছুটিতে বাড়ীতে এসে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পিতার সাথে জোট বেধে ফয়জুরের বিরোদ্ধে বিভিন্ন ভাবে বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ঘটনার দিন ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারী ফরহাদ ফয়জুরের জমির সীমানার এক ফুট ভিতরে খুঁটি গাড়ে। ফয়জুরের ভাই আঃ মজিদ প্রতিবাদ করলে তাকে হত্যার চেস্টা করে । এসময় তাকে বাঁচাতে তার ভাই ফয়জুর ও ভাইপো হাবলু কুপিয়ে হত্যা এবং মজিদ ও ফয়জুরকে কুপিয়ে গুরুতর ভাবে জখম করে।
২নং আসামী দুলাল মিয়া অত্যন্ত দুরন্দর প্রকৃতির লোক। মামলা হওয়ার পর তার ছেলে সেনা সদস্য ফরহাদকে বাঁচাতে বিভিন্ন কৌশল ও হুমকি ধামকি অব্যাহত রাখে। কিন্তু ফয়জুর রহমান ও তার পরিবার সকল বাধা উপেক্ষা করে সে তার ছেলে হত্যার বিচারের দাবীতে অনড় থাকে। আসামী পক্ষ দুলাল মিয়া এলাকার প্রভাব ও অর্থশালী হওয়ায় বিভিন্ন ফন্দী আটতে থাকে। ইতোমধ্যে মামলার সাক্ষী শেষ পর্যায়ে রায়ের অপেক্ষায়। শাস্তি অবধারীত বুঝতে পেরে টাকার বিনিময়ে গুন্ডাবাহিনী নিয়োগ করে যাতে মামলাটি আপোষ হতে বাধ্য হয়। অবশেষে গত ৬/৯/২-১৯ ইং তারিখ কয়েকজন সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে বাদীর বড় ভাই আঃ মজিদকে অপহরণ করায়। দুই দিন মুক্তাগাছায় আটক রাখে। কিন্তু মামলায় আপোষে রাজী করাতে না পেরে সন্ত্রাসীরা তার কাছ থেকে ১শত টাকার ৩টি সাদা স্ট্যাম্প ও ৪টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে ২ দিন পর ছেড়ে দেয়। মুক্তি পেয়ে পরদিন আঃ মজিদ জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৬ জনকে আাসামী করে মামলা করেন। যার নম্বর ৪১৯/১৯। যাহা চলমান। এদিকে সন্ত্রাসীরা উক্ত স্ট্যাম্পটি মুক্তাগাছার বানার পাড় এলাকার জনৈক বুলবুল আহমেদের নিকট বিক্রি করে দেয়। বুলবুল সেই স্ট্যাম্পে ১০ লাখ টাকা ঋণ দেখিয়ে মুক্তাগাছা থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং ১৫ (১১)১৯, তারিখ ২০/১১/১৯। জিআর নং ২৭৩/২০১৯। আঃ মজিদ মামলাটি রিভিশন করে যাহা জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ ৪র্থ আদালত, ময়মনসিংহ। মামলা নং ২০৮/২১ যাহা বিচারাধীন। একটি হত্যাকে ধামাচাপা অথবা অন্যদিকে প্রবাহিত করতে এমনকি আপোষ করাতে বাধ্য করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে নির্যাতীত পরিবারের উপর বিভিন্ন ভাবে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। এদিকে রায় প্রকাশের পর আসামীরা বাদীর পরিবার ও তাদের লোকজনদের বিভিন্ন ভাবে হুমকিসহ মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানের কথা লোক মুখে বলে বেড়াচ্ছে বলে আঃ মজিদ জানান। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হতে পারে। এব্যপারে ভুক্তভোগী পরিবার সংশ্লিষ্টদের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
