সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা — হাওড়বেষ্টিত মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সীমান্তবর্তী সুনামগঞ্জের তাহেরপুর উপজেলার সুনামগঞ্জ- মহেশখোলা সড়কের এক কিলোমিটার সড়কের জন্য ভোগান্তির শিকার নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের চারটি উপজেলার লক্ষাধীক মানুষ। একটু বৃষ্টি হলেই এই সড়কটির যানবাহন ও পথচারী চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পেড়িয়ে গেলেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এই জনপথে।
জানা যায় সুনামগঞ্জ সড়কের বাগলি (বীরেন্দ্রনগর) রঙ্গাছড়া থেকে জঙ্গলবাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম কিংবা একটু বৃষ্টি হলেই যানবাহন ও পথচারী চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গত কয়েকদিনের কালবৈশাখীর শিলাবৃষ্টিতে সড়কটির বেহাল দশার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের ৪ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক জনসাধারণ।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের অভিযোগ সড়কটির এই জায়গাটি প্রতি বছরেই এমন বেহাল দশা হয়ে পড়ে, কর্তৃপক্ষের জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এতে করে নেত্রকোনার কলমাকান্দা এবং সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও তাহেরপুরের লক্ষাধীক মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তাছাড়া সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বিজিবি সদস্যরাও সীমান্ত রক্ষার কাজে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে এই সীমান্তবর্তী একমাত্র রাস্তাটির জন্য।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বাসিন্দা জনাব মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন সুনামগঞ্জের সাথে প্রাচীনকাল থেকেই নেত্রকোনার বাসিন্দাদের সম্পর্ক রয়েছ। সে কারণে নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের মানুষের শুকনো মৌসুমে একমাত্র সড়ক এটি, কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশ স্বাধীনের হাফ সেঞ্চুরি পার করলেও সীমান্তবর্তী একমাত্র রাস্তাটি (আংশিক) এখন ও স্বাধীনতার পূর্বের স্মৃতি জড়িয়ে এই জনপদের মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়েই রয়ে গেল।
ধর্মপাশা উপজেলার জনৈক ব্যবসায়ী পথচারী জানান জেলা সদর সুনামগঞ্জে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি, কিন্তু বর্ষা মৌসুমে কিংবা সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু এই যাবৎ কালে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে নেওয়া হয়নি কোন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ।
তাহেরপুর উপজেলার লাকমা গ্রামের বাসিন্দা জনাব মোঃ নাছির উল্যাহ জানান গত পরশুদিন জরুরি প্রয়োজনে কলমাকান্দা যাওয়ার পথে লালঘাট পেরিয়ে জঙ্গলবাড়ি পার হয়ে আর কোন উপায় না পেয়ে আরো ৪-৫ জন মিলে মোটরসাইকেল টেনে হিচড়ে কর্দমাক্ত অবস্থায় কোন রকমে বাগলী গিয়ে পৌঁছলাম। এ যেন এক যুদ্ধ জয় করে আসলাম। তাই আমরা চাই জনসাধারণের সীমাহীন দুর্ভোগ লাঘবে অন্তত এই এক কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের উপযোগী করার দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কর্তৃপক্ষ।
তাহেরপুর উপজেলার বড়ছড়া/চারা গাঁও শুল্কস্টেশনের আমদানিকারক মেসার্স রাজু এন্ড ব্রাদার্সের প্রোপাইটার জনাব মোঃ সাদ্দাম হোসেন জানান একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম সীমান্তবর্তী সড়কটি দিয়ে ৪ উপজেলার সহ তিনটি শুল্ক স্টেশন ও শীত বর্ষায় বিপুলসংখ্যক পর্যটক যাতায়াত করে থাকেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সড়কটির এই সামান্য জায়গাটি সংস্কার করার কোন উদ্যোগ কর্তৃপক্ষ নেননি। এখানে উল্লেখ্য যে, তিনটি শুল্কস্টেশন থেকে বছরে হাজার হাজর কোটি টাকা রাজস্ব সরকারি কোশাগারে জমা হচ্ছে, পাশাপাশি এখানে পর্যটন শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে খনিজ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলের জনগুরুত্বপূর্ণ একমাত্র সড়কটি কর্তৃপক্ষ কেন মেরামত করছেন না বা কোন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন না, তা আমার বোধগম্য নয়।
সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে সুনামগঞ্জ মহেশখোলা সড়কটি লাকমা হতে বাগলী পর্যন্ত রাস্তার অংশবিশেষ সংস্কার করতে কর্তৃপক্ষ এবং উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।