রুপান্তর বাংলা ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার: মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরেও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলার ডাকুয়া গ্রামের জামাল উদ্দিন মন্ডল। সবকিছু ঠিকঠাক হলেও অজ্ঞাত কারণে তার স্বীকৃতিপত্র স্থগিত হয়ে যায়। কারণ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে প্রাপ্ত দলিলের মধ্য থেকে ১০৭৬টি দলিল বিনষ্ট এবং ৫১টি দলিল অস্পষ্টতা থাকায় সর্বমোট ১০২৭টি তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এ বিষয়ে তার দলিলে অস্পষ্ট রয়েছে। উক্ত বিষয়ের উপর ২০০৯, ২০১০ ও ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে পৃথক পৃথক ৩টি আবেদন করা হয়। আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাইয়ের পর জমাল উদ্দিনের নামে গেজেট হয়। পরবর্তীতে সেটা স্থগিত হয়ে যায়। পরে জামাল উদ্দিন ভারত সরকারের নিকট মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দলিল চেয়ে গত ২১/০৪/২০১৬ ও ২২/০৫/২০১৬ তারিখে ২টি আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারতীয় হাই কমিশনারের কার্যালয় থেকে ০৯/০৬/২০১৬ইং তারিখ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ই-মেইলের মাধ্যমে জামাল উদ্দিন মন্ডলের ভারতে প্রশিক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন রয়েছে মর্মে তথ্য পাঠায়। এ বিষয়ে ভারতীয় দূতাবাস পত্র মারফত জামাল উদ্দিন অবহিত করেন।
এছাড়াও জামাল উদ্দিন মন্ডল গত ২১/১২/২০১৩ ইং তারিখ জামুকায় আবেদন করে যার জিডি নং ১২৫০০৪। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা কমিটি ১০ জনকে ‘ক’ তালিকা ভুক্তকরে তার মধ্যে প্রত্যেক স্তরেই ১নং ক্রমিকে জামাল উদ্দিন মন্ডলের নাম রয়েছে। এরপরও অজ্ঞাত কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা জামাল উদ্দিন মন্ডলের স্বীকৃতিপত্র এখনও স্থগিত রাখা হয়েছে।
জামাল উদ্দিন মন্ডল জানান, ১৯৭১ সালে নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের কৃষাণ কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকা সারা দিয়ে কলেজ থেকে পালিয়ে নিজ এলাকায় ৫০/৬০ জন ছাত্র-যুবক একত্রিত করে প্রথমে ভারতের ঢালু ইউথ ক্যাম্পে যোগ দেই। ইউথ ক্যাম্পের ইনচার্জ ছিলেন অধ্যাপক মতিউর রহমান (সাবেক ধর্ম মন্ত্রী)। তিনি আমাকে প্রশিক্ষণের জন্য তোরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। তোরা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ৪নং উইনং এ ২৭ দিন অস্ত্র প্রশিক্ষণ, ২দিন জঙ্গল প্যারেড ও একদিন কসম প্যারেডসহ জেএল প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করি। প্রশিক্ষণে উইং কমান্ডার ছিলেন জনাব আব্দুর রহিম ও সেকেন্ডইন কামান্ড ছিলেন মোঃ আব্দুর রহমান। প্রশিক্ষণ শেষে অস্ত্র নিয়ে কন্যাডুবি এফএফ ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে অংশগ্রহন করি। পরে কোম্পানীর সকল যুদ্ধাদের নিয়ে হালুয়াঘাটের সরচাপুর ব্রিজের কাছে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধের সময় মর্টার শেলের আঘাতে আহত হই। আমি কোম্পানী হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই। এ সময় পেছনে থাকা হালিম কোম্পানী কমান্ডার আমাকে সাহায্য করে। পরবর্তীতে হালিম কোম্পানীতে যোগ দিয়ে হালুঘাট থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত পাকবাহিনীর সাথে যে কয়টি যুদ্ধ সংঘঠিত হয়েছে সব যুদ্ধেই আমি অংশ গ্রহন করি। ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে অবস্থান নেওয়ার পর আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালের প্রশাসক ডাঃ অলিউল্লাহ আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে ৭দিন চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে জিলা স্কুলের বর্ডিংয়ে হালিম কোম্পানীর সাথে যোগদেই। সর্বশেষ বেতন ভাতা হালিম কোম্পানী থেকে গ্রহন করি।
তিনি বলেন, ১১ নং সেক্টর ক্লোজ করা হয় তখন আমাদেরকে এমএজি ওসমানী স্বাক্ষরিত একখানা সনদপত্র প্রদান করা হয়। ভারতীয় তালিকায় আমার নাম থাকলেও ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে প্রাপ্ত দলিলের মধ্য থেকে ১০৭৬টি দলিল বিনষ্ট এবং ৫১টি দলিল অস্পষ্টতা থাকায় সেখানে আমার নাম প্রকাশ করা হয়নি। ভারতীয় হাই কমিশনে আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন ছিল বলে পত্র দেয়। উক্তপত্রটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে আমার স্বীকৃতিপত্র স্থগিত করা হয়।
তিনি আক্ষেপ করে জানান, আমি শারীরিক ভাবে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছি। মৃত্যুর পূর্বে আমার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় পাব কি না জানি না। এ বয়সে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুফল পাচ্ছি না। তাই আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
