আধুনিক বীমা ব্যবস্থার রুপকার একজন “নূরে আলম সিদ্দিকী অভি ”

রুপান্তর বাংলা জেলা প্রতিনিধি- জাহাঙ্গীর : একজন নূরে আলম সিদ্দিকী অভি এবং বাংলাদেশের আধুনিক ইন্সুরেন্সের ধারণা এক সুতোয় গাঁথা! ইদানীংকালে যে শিক্ষিত এবং সৃষ্টিশীল তরুণদের বিরাট একটি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে এই বীমা পেশা, তার মূলেও রয়েছে তার ঐতিহাসিক অবদান- (FA, UM, BM) থ্রি-লেয়ারের সৃষ্টি!
দেশি ইন্সুরেন্স ইন্ডাস্ট্রিতে থ্রি-লেয়ারের জনক খ্যাত এই নূরে আলম সিদ্দিকী অভি’ই সর্বপ্রথম গ্রাহকবান্ধব ইনসুরেন্সের পাশাপাশি এজেন্টবান্ধব ইন্সুরেন্স পেশার কথা চিন্তা করেন, তিনিই সর্বপ্রথম “সেলস পলিসি” আবিস্কার করেন। যার ফলে এক সময়ের কমিশন এজেন্টরা এখন এই পেশায় মাসিক সম্মানী, বোনাস, পেনশন ফান্ড, হেল্থ ও গ্রুপ ইন্সুরেন্স সুবিধা, বিদেশ ভ্রমণ, লিডার্স ক্লাব, পিকনিক ক্লাব সহ নানাবিধ সম্মানজনক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন! আর এসব কারণেই এখন এটাকে যুগোপযোগী এবং স্মার্ট ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে শুরু করেছে বর্তমান শিক্ষিত সমাজ!
খুব স্বাভাবিক কারণেই এই এজেন্টবান্ধব চিন্তাটা তার মাথা থেকেই এসেছে! কেননা, তিনি “আজকের নূরে আলম সিদ্দিকী অভি” পর্যন্ত আসতে বহূদিন ধরে মাঠেঘাটে ঘাম ঝরিয়েছেন, কষ্ট করেছেন, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, কর্মীদের সুখ-দুঃখ খুব কাছ থেকে অনুভব করেছেন!
২০০০ সালের শুরুতে একজন মাঠ কর্মী (FA) হিসেবে আন্তর্জাতিক বীমা কোম্পানি- মেটলাইফে ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি! এরপর অভাবনীয় সাফল্যজনক পারফর্ম করে পর্যায়ক্রমে ইউনিট ম্যানেজার (UM) ও এজেন্সি ম্যানেজার (BM) হিসেবে পদোন্নতি পান সেখানে। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ বীমা কর্মী হিসেবে একাধিকবার মেটলাইফ আলিকো-তে রেংকিংয়ে বিশ্ব সেরা নাম্বার ওয়ান পজিশন অর্জন করেন, যে রেকর্ড এখন পর্যন্ত এদেশে কেউ অর্জন করতে বা ভাঙতে পারেনি! সেখানে তার অভাবনীয় সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড সহ বহু এওয়ার্ড অর্জন করেছেন, কোম্পানির পক্ষ হতে ৪৮ টি দেশ ভ্রমণ করেছেন তখন। তার কৃতিত্বের বর্ণনা এতো ছোট্ট পরিসরে লিখে শেষ করা দুষ্কর বটে!
আজকের বাংলাদেশে নামকরা সেরা বীমা কোম্পানিগুলোর অন্যতম সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স এবং চার্টার্ড লাইফ ইনসুরেন্সের এই সুনাম-সুখ্যাতি এবং সার্ভিস ও সিস্টেম সবই তার হাত ধরে শুরু!
বিদেশি কোম্পানীতে বহু অর্জন ও অভিজ্ঞতার পর নিজের দেশের বীমা কোম্পানীগুলোর বেহাল দশার অবসান ঘটাতে তিনি ২০১৪ সালে মেটলাইফ হতে পদত্যাগ করে চার্টার্ড লাইফ ইনসুরেন্সের হাত ধরেন। তার হাতেই চার্টার্ড লাইফের সূচনা! সেখানে সফলতার সাথে দুই বছর কাজ করার পর ২০১৫ সালের শেষে তৎকালীন সদ্যজাত শিশুর মত হাটতে না পারা সোনালী লাইফ ইনসুরেন্সে যোগ দেন, পরম যত্ন ও স্নেহে হাত ধরে ধরে হাটতে শেখান সোনালী লাইফকে! যে সময় তিনি সাহস করে সোনালীর হাতটা ধরেন, সেসময় সোনালীতে আজকের মত এতো চাকচিক্য কিংবা এতো অর্জনের ঝুলি ছিলো না, বরং সীমাহীন আশংকা ছিলো সেখানে! খুড়িয়ে খুড়িয়ে কোনমতে ৩ বছর পার হয়েছিল, ছিলো না বিজনেসের তেমন সম্ভাবনা!
সেখানে গিয়ে সোনালীর স্বপ্নদ্রষ্টা জনাব মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের ব্যক্তিগত অনুরোধে প্রথমেই খুঁজে বের করেন তৎকালীন সোনালী’র অচলাবস্থার কারণ ও উপকরণ! এরপর পুরনো লোকাল প্রজেক্টের ওপর ভরসা না করে সেখানে জন্ম দেন “মেট্রো প্রজেক্ট”! শুরু হয় সোনালীর নতুন জীবন, নতুন মোড় নেয় সোনালীর বিজনেসে! একের পর এক সৃষ্টি করেন স্মার্ট ও ইয়াং লিডার! এরই ধারাবাহিকতায় এই ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব জনাব সাজিদুল আনোয়ার (সাবেক এএডি, সোনালী লাইফ এবং বর্তমান ডিএমডি, মেঘনা লাইফ), জনাব শাহ আল মামুন (সাবেক এএডি, সোনালী লাইফ এবং বর্তমান ডিএমডি, আলফ লাইফ), জনাব রফিকুল ইসলাম (এএডি, সোনালী লাইফ)সহ অসংখ্য লিডার তার হাতে গড়া! এর আগে তৎকালীন অভি এজেন্সি হতে মেটলাইফ আলিকো-তে ১৮ জন ব্রাঞ্চ ম্যানেজারও তৈরির রেকর্ড রয়েছে তার!
বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ইন্ডাস্ট্রির এই মহানায়ক বারবার সাহসিকতার পরিচয় দিতে গিয়ে সর্বশেষ ২০২০ সালে ভেঙে পড়া ” আলফা ইসলামি লাইফ ইনসুরেন্স কোম্পানি”র হাল ধরেন! বর্তমানে তিনি সেখানকার সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন! ২০১৪ সালে শুরু হওয়া এই কোম্পানিটি যখন প্রায় অচলাবস্থায় হাবুডুবু খাচ্ছিল, ঠিক তখনই এর চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব আলমগীর শামসুল আলামিন নিজেই আবিষ্কার করেন নূরে আলম সিদ্দিকী অভি-কে! তিনি সেখানেও পুরনো লোকাল প্রজেক্ট চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে অত্যন্ত দুঃসাহসিকতার সাথে নতুন করে জিরো থেকে শুরু করেন “মেট্রো প্রজেক্ট”! এরপর মাত্র ৩ বছরে আলফা’য় প্রায় ২৫ হাজার কর্মী, ১৩০টির অধিক অফিস এবং শতাধিক কোটি টাকার লাইফ ফান্ড ও অসংখ্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন তিনি!
আলফার এই তিন বছরের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো- লিডার সৃষ্টির এই দক্ষ কারিগর আলফায় অসংখ্য লিডার তৈরি করেছেন। তিনি মনে করেন যে, আগে যদি দক্ষ লিডার তৈরি করা যায়, তাহলে আজ হোক আর কাল- যেকোন কোম্পানি ঘুরে দাড়াবেই!
তার এই যুগোপযোগী চিন্তা-চেতনার সারথি হতে গত সাড়ে তিন বছরে মেটলাইফ আলিকো, সোনালী লাইফ ও অন্যান্য ভালো কোম্পানিগুলো হতে অসংখ্য স্বপ্নবাজ সচেতন লিডাররা দলে দলে তার সাথে যোগ দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন, প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে এই মিছিল! বিশেষ করে যারা বিশ্বাস করেন যে, বীমা পেশায় ক্যারিয়ারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ভালো একজন লিডারের অধীনে কাজ করা, তাদের দৃষ্টিতে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও পেশাগত সফলতার বিচারে নূরে আলম সিদ্দিকী অভি’র দ্বিতীয়টি নেই এ দেশে!
নূরে আলম সিদ্দিকী অভি তার কোম্পানিকে কেবলমাত্র একটি বীমা কোম্পানি হিসেবেই নয়, বরং ইন্সুরেন্স শেখার এবং স্মার্ট লিডার তৈরির একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে মনে করেন! তিনি বলেন, এই ঘুনে ধরা ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন ঘটাতে খুব শিঘ্রি আলফা হতে অন্যান্য কোম্পানিতে লিডার সাপ্লাই দিবো আমরা! এটাই তার পরম চাওয়া! তিনি বলেন, বর্তমান এই ইন্ডাস্ট্রিতে দক্ষ কর্মী এবং এমডি- উভয়ের সংকট রয়েছে। তাই তিনি স্বপ্ন দেখেন খুব শিঘ্রি যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে আলফা’ই সর্বত্র দক্ষ কর্মী ও এমডি সরবরাহ করবে!
তিনি ব্যক্তিগতভাবে অন্য কোন বীমা কোম্পানিকে কখনো তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন না। তবে তিনি আলফা লাইফ-কে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন যে, আলফা একদিন গোটা বিশ্বে সুখ্যাতি লাভ করবে, ধীরে ধীরে বিশ্বসেরা দ্বিতীয় মেটলাইফে পরিণত হবে তার এই কোম্পানি!
তিনি বলেন, বীমা কোম্পানীগুলোর মধ্যে প্রতিহিংসা বা কাদা ছোড়াছুড়ি না করে পজিটিভ কম্পিটিশনের মাধ্যমে সবার সার্ভিস এবং কমিটমেন্ট উন্নত করতে পারলেই এই ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন আসবে! আর ইন্ডাস্ট্রির পরিবর্তন এবং জনসচেতনতা ছাড়া এই অবহেলিত বিশাল জনগেষ্ঠীকে বীমার প্রকৃত সুফলের আওতায় আনা সম্ভব নয়!
এই বিশাল সম্ভাবনাময় ইন্ডাস্ট্রির পজিটিভ পরিবর্তনের জন্য তিনি সর্বপরি দেশপ্রেমিক মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসার আহবান জানান!
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ মে ২০২৩ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ জনাব নুরে আলম ছিদ্দিকী অভি-কে আলফা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড এর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন।
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আলফা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড যখন রুগ্ণ অবস্থা তখনই জানুয়ারী ২০২০ সালে ভেঙে পড়া আলফা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের হাল ধরেন এবং ভেঙে পড়া এই বীমা কোম্পানিকে দেশ সেরা বীমা কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখেন। যে স্বপ্ন আজ স্বপ্ন নয়, সবার কাছে আজ বাস্তব হিসেবে উন্মোচিত। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া সফলতার আরেকটি ধাপ হিসেবে পরিগণিত।