শান্তি বাহিনীর গুলিতে মৃত্যুবরণকারী আনসার সদস্যের পরিবারের খোঁজ নিচ্ছে না সরকার।

আব্দুর রাজ্জাক প্রতিবেদক রুপান্তর বাংলা
পুত্র শোকে পিতা ও চলে গেল ওপারে, স্বামী সন্তান হারিয়ে পাগলিনী মা ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে দেশের মায়ায় নিজেকে উৎসর্গ করে পথে বসিয়ে দিয়ে গেল আমার সন্তান ও স্বামী কান্নারত কন্ঠে কথাগুলো বলেন, মোছাঃ জুলেখা বেগম, স্বামী মৃত্যু – আছির উদ্দিন গ্রাম +পোঃ বওলা থানা ফুলপুর জেলা ময়মনসিংহ। জুলেখা বেগমের জন্ম ৭ ই মে ১৯৫৫ ইং চার ছেলে ও চার মেয়ে নিয়েছিল সুন্দর একটি সুখের সংসার বড় ছেলের নাম আব্দুর রহিম, দ্বিতীয় ছেলের নাম মোঃ বাবুল মিয়া, তৃতীয় ছেলের নাম মোঃহালিমুদ্দিন, চতুর্থ ছেলের নাম মোঃ সালাউদ্দিন, এদিকে মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়ের নাম ছিল নুরজাহান বেগম, তারপর মেয়ের নাম ছিল নুর নাহার বেগম, তারপর মেয়ের নাম মোমেনা বেগম, সর্বশেষ মেয়ের নাম হোসনারা বেগম। জুলেখা বেগম ৮ ছেলে মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার কাটাচ্ছিলেন , জুলেখা বেগমের আত্মীয় অর্থাৎ ছোট বোনের জামাই ১৯৭১ সালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশ মাতৃকা, ইজ্জত ও সম্মান রক্ষার স্বার্থে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং দেশ স্বাধীন করে, বাংলাদেশ স্বাধীন করার লক্ষ্যে যেসকল ঘটনা ঘটেছে সেইসব ইতিহাস মনোযোগ দিয়ে শুনতেন বড় ছেলে আব্দুর রহিম, রহিম ছোট থেকে ছিল খুবই শান্ত শিষ্ট লেখাপড়ায় মনোযোগী, সর্বদাই সত্য কথা বলতেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াত করতেন। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা শুনে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হয়ে ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়ন এর সদস্য
রেজিঃনং ১৪৬১৯ আসার রহিম উদ্দিন ২৬ আনসার ব্যাটালিয়ন বরকল রাঙ্গামাটি কর্মরত থাকা অবস্থায় শান্তি বাহিনীর গুলিতে গত ২২/০৬/১৯৯১ইং তারিখে মারা যায়। পুত্রশোক কাটতে না কাটতেই কিছুদিন পর মারা যান আর এক পুত্র হালিম উদ্দিন , তার কিছুদিন পর মারা যান মেয়ে হোসনেআরা তার কিছুদিন পরে মারাযান স্বামী আছির উদ্দিন, স্বামী পুত্র ও কন্যা শোকে কাতর হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়েন জুলেখা বেগম , ঠিক তখনই আমার স্বামী সন্তানদের চিন্তায় পাগল হয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান আমার আরেক মেয়ে মোমেনা বেগম, নিরুদ্দেশ হওয়ার কিছুদিন পর মারা যান আমার বড় মেয়ে নুরজাহান বেগম। এক পুত্র শোকে ৫ টি তাজা প্রাণ চলে যায়। স্বামী সন্তানসহ মোট ছয়জনকে হারিয়ে দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে দুঃখের নদীতে সুখের আশায় ভেসে বেড়াচ্ছে জুলেখা বেগম। যে পুত্র স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হয়ে বেঁচে থাকবেন, দেশের জন্য দশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করবেন, সত্যিই সেই পুত্র নিজেকে বাংলাদেশ আনসার ব্যাটালিয়ন এর একজন গর্বিত সৈনিক হিসেবে রক্তের বিনিময়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি স্বাধীনতার পক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সৈনিক। কর্তব্যরত অবস্থায় শান্তি বাহিনী কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান আনসার সদস্য মোঃ রহিম উদ্দিন এ বিষয়ে তার মায়ের নিকট জানতে চাওয়া হয় , আপনার ছেলে মারা যাওয়ার পর সরকারিভাবে কি কি সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন, উত্তরে তার মা বলেন
মারা যাওয়ার পর সরকার রহিম উদ্দিনের পরিবারকে সরকারি ফান্ড হইতে ৳২০০০০ হাজার এবং যৌথ বীমা হতে ২৫ হাজার টাকা মোট ৪৫০০০ হাজার টাকা মাত্র অনুদান প্রদান করেন। অদ্যাবধি আনসার ও ভিডিপি বিভাগীয় কল্যাণ এবং মহাপরিচালক আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তর খিলগাঁও ঢাকা এর তহবিল হইতে এককালীন আর্থিক সাহায্য কখনো কোনদিন পাননি এমনকি মাসিক ভাতাও পাচ্ছে না তারা। সরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন কি? উত্তরে জুলেখা বেগম বলেন আমি স্বামী সন্তান হারা এক অসহায় বৃদ্ধ মহিলা নাই আমার কোন লেখাপড়া, আমি অনেক লোককে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বহুবার ঘোরাঘুরি করেছি কোন লাভ হয়নি, আনসার ব্যাটালিয়ন সদর এমনকি কি ২৬ ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা কেউ আমার খবর নিচ্ছেন না, আমি বড় অসহায় আমাকে আপনারা একটু সহযোগিতা করুন একটু সাহায্য করুন, আমি আপনাদের নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকিব।