খাগড়াছড়িতে আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান অনুষ্টিত ।

আব্দুল কাদের রূপান্তর বাংলা –আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।

ভাষা জনগণের পারস্পরিক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। একই ভাষায় কথা বলার অর্থ হচ্ছে একে অন্যের ভাবনার শরিক হওয়া। অনুভব ভাগ করে নেয়া। জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ রাখা, জাতি গঠন ও বিকাশে একটি ভাষার গুরত্ব অসাধারণ। মানুষকে সেই যোগাযোগের মাধ্যম থেকে বঞ্চিত করা মানেই একটি জাতির অস্তিত্ব ধ্বংস করা। আর সে কারণেই মানুষ সংগ্রাম করে সেই অস্তিত্ব আরো সুদৃঢ় করার জন্য। মাতৃভাষার ওপর আঘাত এলে তাই আত্ম অভিমানে লাগে। মানুষ তখন স্বভাবসুলভভাবেই বিদ্রোহ করে। এর প্রকৃত উদাহরণ বাঙালি জাতি। মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আসীন করতে আমরা প্রাণ দিয়েছি। সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছি।

পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। সেই ইতিহাস এবং ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে বর্তমান সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় হস্তক্ষেপে ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রæয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও বাঙালি জাতি সেই ১৯৫২ সালের পর থেকে এই দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে নানা ভাবগাম্ভির্যে পালন করে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ি টাউন হল মিলনায়তনে বিকাল ০৩.০০ ঘটিকায় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক জনাব মো: সহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে মহান শহিদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান অনুষ্টিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, এমপি ও মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মংসুইপ্রু; পুলিশ সুপার জনাব মুক্তা ধর পিপিএম (বার); খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র জনাব নির্মলেন্দু চৌধুরী; খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মো: শানে আলম।
উক্ত অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার জনাব মুক্তা ধর পিপিএম (বার) বলেন আজকের এই মহান দিবসে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই বায়ান্নর ভাষা শহিদদের প্রতি। গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, ভাষা আন্দোলনে যার ভুমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। একুশে ফেব্রুয়ারি নানা মাত্রিকতায় গৌরবোজ্জ্বল ও মহিমান্বিত করেছে বাঙালি জাতিকে। একুশে আমাদের সাহসের প্রতীক। প্রতি বছর বাঙালির জীবনে একুশে ফিরে আসে স্বদেশী চেতনা ও উজ্জীবনের বার্তা নিয়ে। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষার মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার জন্য ছাত্রজনতার রক্তে রচিত হয়েছে বাঙালির যে ইতিহাস, সেটিই আমাদের মাথানত না করার চিরকালীন প্রেরণা হয়ে আছে। মাতৃভাষা বাংলা আজ বিশ্বব্যাপী সকল ভাষা গোষ্ঠীর মাতৃভাষার মর্যাদার প্রতীক হয়ে ওঠেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’-এ কথাটি ভাবতেই আমাদের বুক গর্বে ভরে ওঠে। তাই বাংলা ভাষার ইতিহাস, বিকাশ ও এর সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করাই হবে সেই বীর আত্মত্যাগীদের প্রতি আমাদের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।