মুক্তাগাছায় ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভূয়া তথ্য দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ

ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ৫নং বাঁশাটি ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভূয়া ও মিথ্যা সম্বলিত তথ্য দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানাযায়, বাঁশাটি ইউনিয়নের প্রান্নাথবাড়ী গ্রামের আক্কাস আলীর পুত্র আতাউর রহমান তার ক্রয়কৃত সম্পত্তি জবরদখল হওয়ায় ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৪৪ ধারায় একটি মামলা করে। যার মামলা নং-৫২৪/২৩, তারিখঃ ৩০/০৩/২০২৩ ইং। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি সহকারী কমিশনার ভূমি মুক্তাগাছাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। সে প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার ভূমি বাঁশাটি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সহকারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সরেজমিনে না গিয়ে তার অফিস সহায়ককে পাঠিয়ে তদন্ত করান বলে মামলার বাদী আতাউর রহমান জানান।

সরেজমিনে গিয়ে মামলার বাদী আতাউর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নিজ জীবন ও বাড়িভিটা ভূমি দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিরুপায় হয়ে গত ৩০/০৩/২০২৩ একটি মামলা করি। মামলার ২য় পক্ষ প্রান্নাথবাড়ী গ্রামের আলীম উদ্দিনের পুত্র ইউসুফ আলী খলিফা। মামলার আর্জিতে বলা হয়া পরিকল্পিতভাবে ইউসুফ খলিফা তার নিজস্ব জমি তার লোকজন দ্বারা দখল করেছে এবং তাকে প্রাণনাশ করার হুমকি দিচ্ছে। তাই তিনি তার নালিসী জমি স্বত্ব বজায় রাখিবার জন্য অত্র মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে না গিয়ে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত রিপোর্ট প্রদান করেন।

সূত্রমতে, তদন্ত রিপোর্টে তার কার্যালয়ের স্মারক নং- ইভূঅ:/মুক্তাগাছা/বাঁশাটি-২০২৪-১৪, তারিখঃ ০১/০২/২০২৪ ইং তে তিনি উল্লেখ করেছেন তিনি নিজে সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। এরপর তিনি একই স্মারকে চালাকি করে দুইটি মামলার নং উল্লেখ করেছেন। যাহা ৫২৪/২০২৩ এবং অপরটি ৭৬৬/২০২৩ অর্থাৎ কেউ যেন বুঝতে না পারে কোনটি সঠিক। ইউনিয়ন সহকারী কর্মকর্তা তার অনুমান নির্ভর প্রতিবেদনে বিআরএস খতিয়ানের যে সমস্ত দাগের সংখ্যা ও জমির পরিমাণ উল্লেখ করেছেন তার বর্তমান মালিক আক্কাস আলী নয়। তার কার্যালয় থেকেই খারিজ করে জমিগুলোর মালিক মোঃ আতাউর রহমান ও তার দুই ছেলে। উল্লেখিত রিপোর্টটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বিবাদী কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে দাখিল করেছেন।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো নালিশী ভূমি বিআরএস দাগ নং ৯২। জমির পরিমাণ ৩ শতাংশ। এর মালিক সাফকাওলা দলিল নং ৩৭২২, তারিখ ১৯/০৫/২০২১ মূলে মোঃ আতাউর রহমান (১ম পক্ষ) যার খারিজি খতিয়ান ৬৫৪ এবং তিনি যথারিতি খাজনা পরিশোধ করেছেন। উক্ত জমিটি পূর্বে পাগার ছিল মাটি ভরাট করে বসত বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ইউসুফ আলী খলিফা স্থানীয় রয়তুল্লার জমি ক্রয় করে যার দাগ নং-৯১, মৌজা-বাঁশাটি, জমির পরিমাণ- সোয়া ৩ শতাংশ। ভূমি কর্মকর্তা ৯২ দাগের অন্য মালিকের জমি ৯১ দাগের মালিক দেখিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন যাহা সম্পূর্ণ ডাহা মিথ্যা। অথচ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ২য় পক্ষের ইউসুফ আলী খলিফা ২০/২৫ বছর যাবত বাড়ি নির্মান করে ভোগ দখল করে আসছেন যা হাস্যকর। আশ্চর্যের বিষয় হলো ভূমি কর্মকর্তা যেসকল জমির বিআরএস উল্লেখ করেছেন তার এক ইঞ্চি জায়গাও ২য় পক্ষ ইউসুফ আলীর নাই। অথচ দতন্তে উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে একজন নিরীহ অসহায় লোককে ভিটেবাড়ি ছাড়া করা ও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। ভূমি কর্মকর্তার মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়ার জেরে একটি মানুষ তার বৈধ সম্পত্তি হারাতে বসেছে। তিনি তার বাড়িভিটা ছেড়ে প্রাণভয়ে অন্যত্র পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার এহেন তদন্ত প্রতিবেদনে বিচার ব্যবস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুন্নসহ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। সাধারণ ও নিরীহ মানুষ প্রকৃত ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। কলঙ্কিত হবে বিচার ব্যবস্থা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মামলাটির পুনঃতদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ এবং উক্ত ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।