সেনাবাহিনীকে নিয়ে মিথ্যা বিভ্রান্তকর তথ্য প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছেন-ইএলইএফপিএস চেয়ারম্যান।

আব্দুর রাজ্জাক /আব্দুল কাদের —-এডুকেশন লেবার এনভারমেন্ট ফরেস্ট প্রিভিনশন সোসাইটির চেয়ারম্যান জনাব মোঃ রিয়াজ উদ্দিন রানা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার। সেই সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা বানোয়াট বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যক্তিগণ, আসলে তারা চায় কি সেসব ব্যক্তিরা কি চাচ্ছেন কেন তারা এমন বিভ্রান্তিমূলক কর্মকান্ড করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজস্ব দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে মানব কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলছে।

এই বাহিনীর কার্যক্রমের সুনাম দেশ গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সূর্যের আলোর মতো উজ্জ্বল। দেশে একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে রাজনৈতিক চরিতার্থ হাসিলের লক্ষে ব্যক্তি স্বার্থে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিভ্রান্ত মুলক তথ্য বিভিন্নভাবে প্রচার করে চলছে। স্বাধীনতার সূর্য লগ্ন থেকে আদ্য ভূতি এ বাহিনীর অবদান দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য অতুলনীয়, এই বাহিনীর আত্মত্যাগ যা কখনো ভোলার নয় মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে অদ্যাবতি দিয়ে যাচ্ছে তারা তাদের রক্ত বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তের হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা সেসব সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ অন্যান্য ডিফেন্সের সরকারি বেসরকারি হাজার হাজার লোক দিয়ে গেছেন তাজা প্রাণ।

‘সমরে আমরা শান্তিতে আমরা সর্বত্র আমরা দেশের তরে’- এ মূলমন্ত্র ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্ম হয়েছিল। জন্মলগ্ন থেকেই অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা ও চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি দক্ষ ও চৌকস বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠতে সমর্থ হয়েছে।

দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বপরিমণ্ডলে আজ একটি অতি পরিচিত ও গর্বিত নাম। সামরিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলাসহ যে কোন অভ্যন্তরীণ সংকট নিরসনে এবং দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা সকল ক্ষেত্রে অসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত

পার্বত্য চট্টগ্রাম সংঘাত হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং এ অঞ্চলে বসবাসরত উপজাতিদের অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও এর সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনী এর সামরিক এবং রাজনৈতিক সংঘাত। ১৯৭৭ সালে শান্তি বাহিনী বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। ২০ বছর ধরে চলা এই সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

বিদ্রোহ শুরু হলে বাংলাদেশ সরকার বিদ্রোহ দমনের লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর একজন জেনারেলের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি ক্রমে অজনপ্রিয় হয়ে উঠে ও স্থানীয় আদি অধিবাসী ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে অবিশ্বাস ও সক্রিয় বিরোধিতার সূত্রপাত ঘটায়। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার নির্মিত কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে ভূমি হারানো প্রায় এক লক্ষ উপজাতির পুনর্বাসন সহ আরও অন্যান্য সমস্যার সমাধানে সরকার ব্যর্থ হয়। ভূমি হারানোদের কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি এবং ৪০০০০ হাজারের বেশি চাকমা নাগরিককে ভারতে চলেআশ্রয় নেয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালি বসতি স্থাপন শুরু করে, ফলে আরো কিছু স্থানীয় উপজাতি বসতি উচ্ছেদ হয় এবং এ অঞ্চলের জনমিতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। যেখানে ১৯৭৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ছিল মোট জনসংখ্যার ১১.৬ শতাংশ, ১৯৯১ সাল নাগাদ তা ৪৮.৫ শতাংশে দাঁড়ায়।

দেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল এর সরকারের সময় এ ব্যাপারে অগ্রগতি ছিল সীমিত। ১৯৯৬ সালে নতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শান্তি আলোচনা গতি পায়। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে দুই দশক ধরে চলা সংঘাতের অবসান ঘটে।

শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এ অঞ্চলে থাকা অধিকাংশ সেনা ক্যাম্প সরিয়ে নেয়া হয়। তবে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থায়ী সেনানিবাসে তিন ব্রিগেড সৈন্য স্থায়ীভাবে অবস্থান করছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং অবকাঠামো নির্মাণে সেনাবাহিনী এ অঞ্চলে মূল ভুমিকা পালন করে। (চলবে)