রুপান্তর বাংলা ডেক্স—৫১-তম চাকমা সার্কেল চীফ দেবাশীষ রায় একজন বিলাত ফেরত স্বনামধন্য ব্যারিষ্টার। বলা যায় তিনি আইনজ্ঞ ব্যক্তি। আইনজ্ঞ হলেন একজন ব্যক্তি যার কাছে আইনের সর্ব বিষয়ে জ্ঞান আছে। সাধারণত যারা আইন নিয়ে বিশ্লেষণ করেন তাদের আইনজ্ঞ বলা হয়। একজন আইনজ্ঞ বেশিরভাগই (কিন্তু সর্বদা নয়) আইন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক যোগ্যতাধারী এবং প্রায়শই একজন আইনজীবী হয়ে থাকেন। বাংলাদেশে যার আইন সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাকে “আইনজ্ঞ” বলা হয়।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো দেবাশীষ রায় একজন ব্যারিষ্টার। একজন ব্যারিষ্টার কীভাবে দেশের প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক বিধিবিধান তোয়াক্কা না করে বৃটিশ প্রণীত পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি (হিল ম্যানুয়াল ১৯০০) বহাল রাখার দাবিতে সোচ্চার হয়! রাষ্ট্রের স্বপক্ষীয় শক্তি বাঙালি কর্তৃক রিট পিটিশন দাখিল করার প্রেক্ষিতে শাসনবিধিকে আদালত কর্তৃক মৃত আইন ঘোষণা হয় এবং তা নিয়ে শুনানি চলমান।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বৃটিশ কর্তৃক ১০০ বছর আগে প্রণীত অস্পষ্ট প্রথাগত নিয়মকানুন কেন সভ্যতার যুগে এবং দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান থাকার পরেও একজন ব্যারিষ্টার তা বহাল রাখার দাবিতে সোচ্চার হয়? নিশ্চয়ই এর পেছনে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা কারণ রয়েছে৷
অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় ও পূর্ব পুরুষরা তথাকথিত প্রথাগত নিয়মকানুনের সুফল ভোগ করে পাহাড়ের লাখ লাখ পাহাড়ি সম্প্রদায়কে বছরের পর বছর ধরে শোষণ করে আসছে। অন্যের চাপিয়ে দেওয়া একটি অস্পষ্ট ও অন্ধকার যুগের প্রথাগত রীতিনীতি প্রয়োগ করে পাহাড়ি জাতিসত্তাকে তার প্রাপ্ত্য অধিকার— শিক্ষা, জ্ঞান ও ক্ষমতা এবং কৃতিত্ব থেকে বঞ্চিত করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে রয়েছে, চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেল। এই তিনটি সার্কেল পার্বত্য চট্টগ্রামে বৃটিশ প্রণীত শাসনবিধি প্রয়োগ করে পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার উপর তাঁবেদারি করে নিজেদের কথিত রাজার আসনে আসীন করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষকে মৃত আইনের ফাঁদে ফেলেই খাজনা, কর ও যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা তথাকথিত রাজারা আদায় করে থাকেন। এই রাজারা ঢাল নেই তরোয়াল নেই নিধিরাম সর্দার’। বাংলাদেশে বর্তমানে রাজার কোন সাংবিধানিক উপাধি নেই৷ পার্বত্য শাসনবিধিতেও কোথাও রাজা বলার রেওয়াজ নেই। বলা হয়েছে তাদেরকে সার্কেল চীপ। কিন্তু অত্যান্ত লজ্জা ও দুঃখজনক হলো, এই সার্কেল চীপরা নিজেদের রাজা দাবি করেন এবং প্রজাদের কাছে রায় বাহাদুর হিসেবে এক মূর্তিমান আতঙ্ক।
সভ্যতার যুগে কুসংস্কারে ভরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বলবৎ রাখতে চাকমা সার্কেল চীপ ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায় গংরা গত ২২ জুন, ১৯০০ সালের শাসনবিধি বহাল রাখার দাবিতে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক ২০২৪ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যকালে দেবাশীষ রায় রাষ্ট্র শক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেন। জনগণ তথা সরকারি সুযোগ-সুবিধা_ খাজনা ও কর এর টাকা তিনি ভোগ করে কীভাবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন তা আমার বোধগম্য নয়। দেবাশীষ রায় বারবার পাহাড়ে মৃত আইন বহাল রাখার দাবি জানান এবং সরকার কিছু আপত্তিকর শব্দ বাতিল করার বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করেন। তারই এই বক্তব্য ও দাবি সম্পূর্ণ দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান বিরোধী। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকা একটি রিট পিটিশন নিয়ে তিনি এভাবেই খোলা প্লাটফর্মে বক্তব্য প্রদান করা সম্পূর্ণ আদালত অবমাননার সামিল।
১৯০০ সালের শাসনবিধি বহাল রাখার দাবিতে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক সম্মেলন ২০২৪, দেবাশীষ রায় ও বিভিন্ন বক্তারা হেডম্যান কার্বারীদের ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে। নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখতে পাহাড়ি জাতিসত্তাকে মৃত আইন বহাল দাবিতে সোচ্চার হতে আহ্বান জানিয়েছে।
মৃত আইনের কারণে পাহাড়ের মানুষ আইনের সুশাসন এবং বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালিরা উক্ত মৃত আইন বহাল চায়না। তারা চায় পাহাড়ে দেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রচলিত আইন প্রয়োগ হোক। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জীবন মানের উন্নয়ন হউক।