মুক্তাগাছায় প্রতারণা করে জমি রেজিষ্ট্রী আদালতে বাদীপক্ষের নিষেধাজ্ঞা জারীর আবেদন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বন্ধুবেশে প্রতারণা করে জমি রেজিষ্ট্রী করে নেয়ার অভিযোগ। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ বিজ্ঞ মুক্তাগাছা সহকারী জজ আদালতে মামলা হয়েছে। জমির রেজিষ্ট্রীর দলিল পন্ড আবেদন করার পর উক্ত জমির উপর বাদীপক্ষ ২ ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞ আদালতে উক্ত জমির উপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত দাখিল করে। আদালত এ বিষয়ে আগামী ১৪/০৭/২০২৪ ইং তারিখ শুনানীর তারিখ ধার্য করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৯/০২/২০২৪ ইং তারিখে দৈনিক আজকের ময়মনসিংহ পত্রিকা সহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় উক্ত সংবাদটি প্রকাশিত হয়। সূত্রমতে, মুক্তাগাছা উপজেলার পারুলীতলা গ্রামে গোবিন্দ মোদক এর পুত্র কার্তিক পিতার অবাধ্য হওয়ায় তার পিতাসহ পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে বিতারিত করে। আশ্রয় নেয় ধরগ্রামের পরশী নারু গোপাল ধামের বাড়িতে। সে বাড়িতেই থেকে বাড়ির সবার মন যুগিয়ে থাকতে থাকে। পাঁচ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তার পিতা কার্তিক ও পরিবারের অন্যান্য লোকজনের সাথে বিরোধ মিটে যায়। অবশেষে পিত্রালয়ে ফিরে যায় কার্তিক। পরশী নারু গোপাল ধামের একমাত্র পুত্র বিশ^বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নিকুঞ্জ ধামের সাথে আশ্রয়ের সুবাধে বিশ্বস্ততা অর্জন করে। কোন কিছু হলেই কার্তিকের পরামর্শ নিয়ে কাজ করে নিকুঞ্জ। এক সময় নিকুঞ্জ ধাম নেশার জগতে পা বাড়ায়। নেশার টাকা যোগার করতে করতে প্রায় চার কোটি টাকা ঋণ হয়ে যায় নিকুঞ্জের। সে টাকা জমি বিক্রি করে পরিশোধ করে। গত ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ তারিখে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য আট জনের কাছে জমি বিক্রির দলিল করে নিকুঞ্জ।

জমি রেজিষ্ট্রী হয় আট জনের নামে কিন্তু কার্তিক অতি চতুরতা ও প্রতারণা করে সকল দলিলের মাঝে তার নিজ নামে ছয় শতাংশ জমি নিপুঞ্জের অজ্ঞাতে দানপত্র দলিল করিয়ে নেয় বলে নিকুঞ্জের স্ত্রী সহ পরিবারের লোকজনদের অভিযোগ। শুধু তাই নয় আট জনের কাছে জমি বিক্রি করে ১৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছে বলেও অভিযোগ করে। নিকুঞ্জ ধাম ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতে জমির দলিল বাতিল করার জন্য মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ১০৬/২০২৪ (অন্য প্রকার)।

এ বিষয়ে বিবাদী কার্তিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি দীর্ঘদিন বিনা বেতনে নিকুঞ্জের বাড়িতে কাজ করতাম। পরবর্তীতে তাদের বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর আমি নিকুঞ্জের একটি পুকুর ৫ লাখ টাকা দিয়ে পাঁচ বছরের জন্য লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতে থাকি। নগদ আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে চাষাবাদ করতে থাকি। পুকুর পাড়ে ঘর উঠানো, ডিপ সেট বোরিং, নেট দেয়া সহ লক্ষাধিক টাকা খরচ করি। তিন চার মাস চাষ করার পর পুকুর ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। কার্তিক আরও জানান, আমি নিকুঞ্জের বাড়িতে দীর্ঘদিন কাজ করার পর নিজে অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করে কিছু পুঁজি করি। নিকুঞ্জ বলে তুমি আমার বাড়িতে দীর্ঘদিন কাজ করেছ। তোমাকে আমি ছয় শতাংশ জমি দেই। তুমি বাড়ি করে থাকবে। সবার কাছে যে দামে বিক্রি করেছি তোমাকে তার থেকে কিছু কম দামে দিবো। তখন আমি টাঙ্গাইলের মূর্তির কারিগর মধুপাল কে সাথে নিয়ে ৭ লক্ষ টাকা দেই। আমি মূর্খ লোক তেমন কিছু বুঝি না। সে আমাকে সাফকাওলা দলিল না করে দানপত্র দলিল করে দেয়। পরবর্তীতে নিকুঞ্জ আমার কাছে আরো টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে দলিল পন্ড করার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে মধুপাল কে সাথে নিয়ে আরো ৫ লক্ষ টাকা দেই। বিষয়টি এখানে শেষ হলেও পরবর্তীতে নিকুঞ্জ তার নিকট আত্মীয়ের পরামর্শে তার জমি বিক্রি করা টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে নিকুঞ্জের আত্মীয় (ভায়রা ভাই), শিবেন, মধুপাল, আজিজুল হক ও ভুট্টুকে সাথে নিয়ে ৭ লক্ষ টাকায় আত্মসাতের দাবীর বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। উক্ত টাকার মধ্যে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বাবু আশুতোষ দে এর হাত দিয়ে আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করেন। বাকি টাকা ৫ লাখ টাকায় পুকুর লীজের অগ্রীম থেকে সমন্বয় করে পরিশোধ করা হয়। সব কিছু শেষ হওয়ার পরেও প্রতিহিংসায় দলিল পন্ড করার জন্য নিকুঞ্জ আদালতে মামলা করে। আমি জমির জমা খারিজ করে খাজনা পরিরোধ করে নিজ দখলে রেখেছি। যার দলিল নং ১১৫২/২৩, তারিখ: ০১/০২/২০২৩ ইং, বিআরএস খতিয়ান নং ৪২৯, দাগ নং ৭৬৩, মৌজা-পারুলীতলা, জমির পরিমাণ ৬ শতাংশ। উক্ত জমিতে নিকুঞ্জ গংরা জবর দখলের পায়তারা করছে। যে কোন সময় তারা জমিতে প্রবেশ করে জমি জবর দখল করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। কার্তিকের দাবী আমি সারা জীবন কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে বাড়ি করার জন্য ছয় শতাংশ জমি ক্রয় করেছি। নিকুঞ্জ বিশ্বাস ঘাতকতা করে আমাকে সাফকাওলা দলিল না দিয়ে দানপত্র দলিল করে দিয়েছে। আবার সেই জমিন ছিনিয়ে নিতে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। নিকুঞ্জ আমাকে নিঃর্স্ব করে দিয়েছে। আমি আমার ন্যায্য টাকার ক্রয়কৃত জমিতে বহাল থাকতে চাই। এটা বিজ্ঞ আদালত সহ প্রশাসনের কাছে দাবী। আমি এখন টাকার অভাবে নিজের ছেলেকে কলেজে ভর্তি করাতে না পেরে অন্যের দোকানে গোমস্তার চাকুরী দিয়েছি। তিনি আরও বলেন আমি আমার স্ত্রী, পুত্র পরিজন নিয়ে হুমকিতে আছি।

এ বিষয়ে ঘোগা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার হেকমত আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঘটনাটি আমার ওয়ার্ডের নয়। নিকুঞ্জের জমির বিষয়টি তাদের আত্মীয় স্বজনদের দ্বারা মিমাংশা হয়েছে বলে আমি শুনেছি। তারা আমাকে জড়িয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অন্যদিকে, ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, জমির ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের আত্মীয় স্বজন নিয়ে মিমাংশা হয়েছিল বলে শুনেছি।

এ ব্যাপারে ৭নং ঘোগা ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ আহমেদ এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, যেহেতু আদালতে মামলা আছে আদালতে রায় হওয়ার পর যার পক্ষে রায় হবে সেই জমি তার হবে। এ বিষয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।