জাহাঙ্গীর, জেলা প্রতিনিধি, রাঙ্গামাটি : অদ্য ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ প্রতিষ্ঠান রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে অপসারণের পাঁয়তারা করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।
আজ সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে প্র্রায় ৫০০ এর অধিক সাধারণ শিক্ষার্থী ঘন্টাব্যাপী এ সমাবেশে অংশ নেয়।
বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিকের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করে তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় ।
এসময় শিক্ষার্থীর বলেন, নিজেদের পছন্দের শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসাতে আঞ্চলিক সংঘঠনের জেএসএস কর্তৃক রাঙামাটি পার্বত্য জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিককে অপসারণের পাঁয়াতারা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ জেএসএস এর ইন্ধনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ উপজাতি কয়েকজন ছাত্র প্রধান শিক্ষকের অপসারনের দাবিতে জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গন থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত মিছিল করে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, একমাত্র বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই রণতোষ মল্লিককে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র ও কুৎসা রটাচ্ছে জেএসএস পন্থি শিক্ষকরা। সরকার পতনের সুযোগ নিয়ে এবার নতুন করে আবারো পুরনো সেই খেলায় মেতে উঠেছে চক্রটি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষক রণতোষ মল্লিক রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই তার প্রত্যক্ষ সহায়তায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বেড়ে যায়। এই বিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়ও তৈরী হয় তার সময়েই। রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডেও তার অবদান রয়েছে।
জেএসএস এর রোষাণলে পড়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ‘শুধুমাত্র বাঙ্গালি সম্প্রদায়ের হওয়ায় রণতোষ স্যারকে নিয়ে জেএসএস ষড়যন্ত্র করছে। উনাকে সরিয়ে দেয়া হলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হবে এবং বিদ্যালয়ে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হবে। প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক যদি দুর্নীতি করতো, অনিয়ম করতো তাহলে সকলে মিলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতো, কিন্তু প্রধান শিক্ষককে সরাতে আন্দোলন করছে পাহাড়ি কিছু শিক্ষার্থী। আসলে রণতোষ মল্লিককে বাঙালি বিবেচনায় ষড়যন্ত্র করছে তার কারণে এখানে শিক্ষার্থীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে বলে বলেন সাধারণ শিক্ষার্থী। সত্যিকার অর্থে যদি অনিয়মের বিবেচনায় আন্দোলন করতো তাহলে পাহাড়ি—বাঙালি সবাই মিলে আন্দোলন করতো। কিন্তু এখানে বিষয়টি ভিন্ন। মূলত ষড়যন্ত্র করছে পাহাড়ি একটি চক্র।
এদিকে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ হতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানানো হয়েছে যে এসমস্ত কার্যকলাপে কোন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র—ছাত্রী জড়িত নাই। যেহেতু কেন্দ্রীয়ভাবে নিষেধ আছে, তাই তারা রাঙামাটির বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষ থেকে শিক্ষক অপসারণের নামে শিক্ষাঙ্গনে সাম্প্রদায়িক বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
জানা যায়, সম্প্রতি বিদ্যালয়ের জেএসএস পন্থি এক উপজাতি শিক্ষক কর্তৃক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো ও বাঙ্গালী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় ইচ্ছে করে কম নম্বর দেয়ার অভিযোগ উঠলে ওই শিক্ষককে ডেকে নিয়ে তিরষ্কার করে ভবিষ্যতে এমন কর্মকান্ড না করার বিষয়ে সাবধান করেন প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেএসএস এর সাথে মিলে রণতোষ মল্লিককে অপসারণ করে সেখানে জেএসএস সমর্থিত উপজাতি আরেক শিক্ষক আশুতোষ চাকমাকে বসাতে ষড়যন্ত্রের ছক আঁকেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক।
উল্লেখ্য, রাঙামাটি রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালকে জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রুপ দেয়ার কারিগর প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক শিক্ষার্থীদের ভালো শিক্ষা দেয়ার মাধ্যমে জেলাজুড়ে সুনাম অর্জন করেছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আয়োজিত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ এর বিভাগীয় পর্যায়ের সহপাঠ্যক্রম ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিভাগীয় বিদ্যালয় গ্রুপে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন রাঙামাটির রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক। সেসময় গণমাধ্যমকে রণতোষ মল্লিক বলেছিলেন, ‘আমি শুরু থেকে চেষ্টা করে গিয়েছি আমার প্রতিষ্ঠানটিকে অবকাঠামো দিক দিয়ে উন্নত করার। বর্তমানে জেলায় আমার প্রতিষ্ঠানটি অবকাঠামোর দিক দিয়ে অনেকটাই উন্নত। তার পাশাপাশি আমার লক্ষ্য পড়ালেখা মান আরও বাড়িয়ে রেজাল্টে জেলার মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানটিকে শ্রেষ্ঠ করে তোলা। এখন আমি চাই আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে একই পথে হাঁটাতে। আমার এই প্রতিষ্ঠানটিও যেন শ্রেষ্ঠ হয়, সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাবো। জেলার মধ্যে অন্যতম একটি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়, আমি তাই চাই।’