ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার: ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার পাগুলী আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও চার কর্মচারী ভুয়া কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ। নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীদের মধ্যে সরকারি চাকুরী থেকে দোষী সাব্যস্থ হয়ে চাকুরীচ্যুত এমনও রয়েছে। যাহা সরকারি নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী, তাছাড়া অন্যান্যদের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এসব অনিয়মের তীর বর্তমান প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে এসব দূর্নীতি ও অনিয়ম করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতে মামলা থাকার পরও আদালতকে অবহিত না করে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে এসব কাজ করেছেন।
সূত্রমতে, তারাকান্দা পাগুলী আলীম মাদ্রাসার গভর্নিংবডি নির্বাচন ২০২০ এর তফসিল ঘোষণা অবৈধ, বেআইনী, অকার্যকর ও কমিটি গঠনের কাজ ও নিয়োগ বেআইনী সহ সকল কার্যক্রম অবৈধ দাবী করে ময়মনসিংহে বিজ্ঞ ফুলপুর তারাকান্দা সহকারী জজ আদালতে মামলা করেন। স্থানীয় মো. জয়নাল আবেদীন সহ চার জন। যার মামলা নং ৭৪/২০২০ অন্যপ্রকার। মামলায় বলা হয় মামলার ১০ নম্বর বিবাদী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল (বর্তমান প্রিন্সিপাল) মাওলানা আব্দুল হালিম এর অনিয়মের বিরুদ্ধে কোন শিক্ষক কথা বললে তাকে চাকুরীচ্যুত করার হুমকি দেওয়া হয়। মামলায় নির্বাচনের সময় বাদীদের কাছে মনোনয়ন পত্র বিক্রি করে নাই। ২নং বিবাদী মোঃ শামছুল ইসলাম সাবেক সভাপতি মাদ্রাসা গভর্নিংবডি কোন অভিভাবক সদস্য বা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নহেন। তাকে দিয়ে কমিটি গঠন করা যা সম্পূর্ণ নিয়মের পরিপন্থী।
উক্ত মামলাটি দীর্ঘদিন চলার পর মামলার বাদীর পক্ষে রায় হয় গত ০৫/০৬/২০২৪ ইং। ২০২০ সনে মাদ্রাসা কমিটি নিয়ে আদালতে মামলা হওয়ার পর মামলা চলাকালীন সময়ে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল আদালতের কোন অনুমতি না নিয়ে বা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে মামলার বিষয় না জানিয়ে পুনরায় কমিটি গঠন করে এবং নিয়োগের পূর্ব মূহুর্তে মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে এবং আওয়ামী নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে বেআইনীভাবে কমিটি গঠন করে। অন্য শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্ব দিয়ে নিজেই প্রার্থী হয়ে প্রিন্সিপাল পদে চাকুরী নেন। সরকারি বিধান অনুযায়ী স্কুল/কলেজ/মাদ্রাসা হলে আহŸায়ক কমিটি করে ছয় মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা তৈরি, তফসিল ঘোষণা সহ যাবতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। এদিকে প্রিন্সিপালের সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা বোর্ড বরাবর অভিযোগ করলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তদন্ত করে ঘটনার শতভাগ সত্যতা পান। প্রিন্সিপাল সকল কিছু উপেক্ষা করে স্থানীয় মন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে বেআইনীভাবে তিনি সহ পাঁচ জন নিয়োগ পেয়েছেন। মোটা টাকার বিনিময়ে একজন দোষী সাব্যস্থ হয়ে সরকারি চাকুরীচ্যুত ব্যক্তিকে চাকুরী দিয়েছেন। গত সাত বছর যাবত গণিত শিক্ষক মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থেকে বেতন নিচ্ছেন প্রিন্সিপালের সাথে কন্ট্রাক করে। প্রতি মাসে বেতনের টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা শিক্ষিকাকে দিয়ে বাকি টাকা প্রিন্সিপাল সহ কমিটির লোকজন ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদ্রাসাটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পাকা ভবন তৈরি করা হয়। পূর্বের ২৬ হাত লম্বার ৪টি টিনসেড ঘর ছিল তা প্রিন্সিপাল বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে অধ্যক্ষ নিজের নিয়োগ, চার কর্মচারীর নিয়োগ এবং অনিয়মতান্ত্রীকভাবে আদালত ও মাদ্রাসা বোর্ড কে ফাঁকি দিয়ে অবৈধ কমিটি গঠন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া করেছেন। এলাকার ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক, সুশীল সমাজ এবং মামলার বাদী সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের রাহু গ্রাস থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা এবং সেই সাথে দুর্নীতিবাজ প্রিন্সিপাল সহ তার সাঙ্গ পাঙ্গদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল হালিমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, যা কিছু হয়েছে সবই নিয়ম মাফিক হয়েছে। শিক্ষকের বিষয়ে তিনি জানান, তিনি অসুস্থ মানবিক দিক বিবেচনা করে তাকে বেতন দেওয়া হচ্ছে। নিয়োগের বিষয়ে তিনি জানান, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিনে-আমীন যে দোষী সাব্যস্থ হয়ে চাকুরীচ্যুত হয়েছেন তা আমার জানা ছিলনা।