ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক সরকার: রাতে চা খাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি টিপু সুলতান (৪০)। পরদিন সকাল ৮টায় ময়মনসিংহ খাগডহর এলাকায় রেল লাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে লাশ উদ্ধার। জামালপুর রেলওয়ে থানা-পুলিশের ইউডি মামলার মাধ্যমে ময়না তদন্ত করে। পরিবারের লোকজনকে ফোনে জানানো হয় টিপু সুলতান মারা গেছে। মামলাটি বর্তমানে সিআইডি পুলিশ তদন্ত করছে। এক বছরেও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হয়নি। সিআইডি পুলিশের তদন্ত চলমান।
টিপু সুলতান মুক্তাগাছা পৌরসভার কাউনডাঙ্গার চর এলাকার অবরসর প্রাপ্ত পুিলশ অফিসার মৃত অথিন্দ্র লাল বড়ুয়ার একমাত্র পুত্র। তার বৃদ্ধ মা জোসনা বড়ুয়া (৮০)। তিনি বলেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর একমাস পূর্বে স্থানীয় কয়েকজন মাদকসেবীদের নাম উল্লেখ করে মুক্তাগাছা থানায় অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগই ছেলের কাল হল বলে জোসনা বড়ুয়া জানান। তিনি আরও জানান, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কিসমত গ্রামের সিয়াম ডাক নাম বাবু, পিতা-বিনোধ বাবু, কিসমত গ্রামের পেট্রোল পাম্বের উত্তর পাশ্বে তার বাড়ি প্রায়ই তার কাছে আসামীরা আমার ছেলেকে নিয়ে তার কাছে যেত। তাকে ধরলেই আমার ছেলে হত্যার রহস্য বের হতে পারে। আমি তাপস, সুজন, রুবেল, শিমুর, শান্ত, চৌহান এদেরকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিআইডির কাছে আবেদন জানাচ্ছি। এদেরকে সহ সিয়ামকে জিজ্ঞাসা করলেই আমার ছেলের মৃত্যুর রহস্য বেরিয়ে আসবে আমি মনে করি। তিনি জানান, আমার ও আমার স্বামীর আত্মীয় স্বজন বংশের কেউ এখানে নেই। আমি এখানে অসহায়। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমি একেবারে অসহায় হয়ে পরেছি। ছেলের বউ ও দুই নাবালক নাতি নিয়ে খুবই কষ্টে কালাতিপাত করছি। একটি মহল আমাকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি অব্যহত রেখেছে। যাতে আমি এখান থেকে সরে যাই।
জানাযায়, মুক্তাগাছা শহরের কাউনডাঙ্গার চর এলাকার মৃত অথিন্দ্র লাল বড়–য়ার (অব: এসআই) একমাত্র পুত্র টিপু সুলতান (৪০) এলাকার কিছু মাদকসেবীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। টিপুর কাছে টাকার জন্য মাদকসেবীরা চাপ প্রয়োগ করত টাকা না পেলে তাকে মারধর করতো। গত মে, ২০২৩ মাসের প্রথম সপ্তাহে মাকসেবীরা টিপুর কাছ থেকে টাকা না পেয়ে তাকে মারধর করে। সে সময় তার মা জোসনা বড়ুয়া ছেলেকে মারধর করায় এলাকার মাদকসেবী শিমুল, শান্ত চৌহান, রঞ্জন, দেলোয়ার হোসেনের নাম উল্লেখ করে মুক্তাগাছা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর থেকে বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রাখে। গত ১২ আগস্ট, ২০২৩ শনিবার রাত ১০ টায় বাসা থেকে বের হয়ে আটানি বাজার চা খেতে এসে আর বাড়ি ফিরেনি। পরিবারের লোকজন রাতে খোঁজাখোজি করে পায়নি। পরদিন সকালে ময়মনসিংহ খাগডহর এলাকায় রেল লাইনের পাশে টিপুর মরদেহ পায় পুলিশ। জামালপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। জামালপুর থানায় ইউডি মামলা নং ২৬/২০২৩, তারিখ ১৩/০৮/২০২৩ইং। মামলার বাদি ময়মনসিংহ-কেওয়াটখালী বাংলাদেশ রেলওয়ের টাইমকিপার আনোয়ার হোসেন।
লাশের সুরতহাল রিপোর্ট নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ্য কারা হয়েছে ৫ডাউন ভাউয়াল এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পরে টিপু সুলতানের মৃত্যু হয়েছে। এবং মৃত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল।
নিহত টিপু সুলতানের মা জোসনা বড়ুয়ার দাবি তার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে ১২ আগস্ট রাতে আটানীবাজার হতে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যাকারিরা বাঁচার জন্য মুক্তাগাছার বাইরে ময়মনসিংহ খাগডহর এলাকায় টিপুকে নিয়ে ট্রেনের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। যাতে সাধারণ মানুষ ধারনা করতে পারে রেলে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত টিপু সুলতানের শরীরের ট্রেনেকাটার কোন চিহ্ন ছিলনা। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাছাড়া আমার ছেলে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। তাকে মানসিক ভারসম্যহীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা মোটেও সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি পূর্বে মুক্তাগাছা থানায় যে অভিযোগ করেছিলেন সে বিষয়ে বলেন, পুলিশ ওই সময় ব্যবস্থা নিলে আজ আমার ছেলের অকাল মৃত্যু হতো না। এ বিষয়ে বর্তমান তদন্ত সংস্থা সিআইডি গভীর ভাবে তদন্ত করলে মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারবে বলে জোসনা বড়ুয়ার বিশ্বাস।